বিশেষ এই দিনে জানুন পিয়ার অনুপ্রেরণার গল্প
চলচ্চিত্রের পর্দায় কিংবা আন্তর্জাতিক ক্যাটওয়াকের র্যাম্পে-যেখানেই দাঁড়ান না কেন, আত্মবিশ্বাসই যেন তার অলংকার। বলছি জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়ার কথা। বাংলাদেশের সেই কন্যা, যিনি একাধারে অভিনেত্রী, মডেল, আইনজীবী, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং নারীশক্তির প্রতীক। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে ফিরে দেখা যাক তার জীবনের সেই পথচলা, যেখানে প্রতিটি ধাপই অনুপ্রেরণার একেকটি অধ্যায়। ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
-
খুলনায় জন্ম নেওয়া পিয়ার শৈশবটা ছিল খুবই সাধারণ। কিন্তু তার স্বপ্ন কখনও ছোট ছিল না। পরিবার থেকে শক্ত প্রেরণা পেয়েছিলেন-নিজেকে তৈরি করার, নিজের পরিচয় গড়ে তোলার। স্কুলজীবন থেকেই আত্মবিশ্বাস ও উপস্থাপনা দক্ষতায় তিনি ছিলেন আলাদা।
-
বলা হয়ে থাকে, বড় হওয়ার ইচ্ছে যার মনের ভেতরে জ্বলে, তাকে আটকে রাখা যায় না-পিয়াও তার জীবন্ত উদাহরণ।
-
২০০৭ সালে ‘মিস বাংলাদেশ’ খেতাব জিতে পিয়ার নাম প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। সেখান থেকেই শুরু তার যাত্রা আন্তর্জাতিক র্যাম্পে।
-
বাংলাদেশি মডেল হিসেবে বিশ্বের নানা প্রান্তে কাজ করেছেন তিনি। তার রুচিশীল পোশাক নির্বাচন, কণ্ঠের দৃঢ়তা এবং হাসির আত্মবিশ্বাস তাকে আলাদা পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
-
২০১৮ সালে তিনি অংশ নেন ‘মিস সুপ্রান্যাশনাল ২০১৮’-এ, যেখানে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বসৌন্দর্য প্রতিযোগিতার টপ-১০ তালিকায় জায়গা পায়। সেটি শুধু তার জন্য নয়, গোটা দেশের জন্যই গর্বের মুহূর্ত ছিল।
-
র্যাম্পের ঝলকানি থেকে বড় পর্দায় আসা-এ যেন তার আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘চোরাবালি’, যেখানে পিয়া ছিলেন একজন সাংবাদিকের ভূমিকায়। সেই চরিত্রে তার সংযত অভিনয় প্রশংসা কুড়ায়। পরে তিনি ‘স্টোরি অব সামারা’, ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’, ‘প্রবাসী ভালোবাসা’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়ের ধরনে যেমন ছিল বাস্তবের ছোঁয়া, তেমনই ছিল মনের গভীর সংবেদন।
-
পিয়াকে শুধু একজন অভিনেত্রী বললে ভুল হবে। তিনি আসলে একজন ‘ব্র্যান্ড’ যিনি জানেন কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, কীভাবে নারীর আত্মবিশ্বাসকে উদযাপন করতে হয়। তিনি ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ অ্যান্ড হ্যাবিট্যাটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন। একইসঙ্গে আইনজীবী হিসেবেও পেশাগত জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।
-
বহু তরুণীর কাছে পিয়া আজ এক রোল মডেল-প্রমাণ করে দিয়েছেন, সৌন্দর্য মানে শুধু বাহ্যিক নয়, মেধা ও আত্মবিশ্বাসও তার অংশ।
-
চলচ্চিত্র ও ফ্যাশনের গ্ল্যামার ছাড়াও পিয়া একজন ভ্রমণপ্রেমী, বইপোকা ও নিঃস্বার্থ মানবিক মানুষ। শিশু অধিকার, নারী শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি নীরবে।
-
বয়স কেবল ক্যালেন্ডারের একটি সংখ্যা, পিয়া তা বারবার প্রমাণ করেছেন। তিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন করে আবিষ্কার করেন, নতুন কিছু শেখেন আবার অন্যদের শেখান। এই জন্মদিনে তার জীবনের প্রতিটি দিন হোক আলোয় ভরা-যেমন তিনি নিজে আলো ছড়ান অনুপ্রেরণার দীপ হয়ে।
-
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়ার গল্প আসলে এক নারীর আত্মনির্ভরতার গল্প। তিনি দেখিয়েছেন সাফল্য কাকতালীয় নয়, পরিশ্রম, শিক্ষার শক্তি এবং নিজের ওপর বিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশের অনেক তরুণীর জন্য পিয়া এক নাম নয়, এক প্রেরণা-যিনি প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন দেখলে আর সাহস থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।