অভিনয়ের সরলতায় অনন্য মাহফুজ আহমেদ
বাংলাদেশের অভিনয় জগতে কিছু নাম আছে, যাদের উপস্থিতি মানেই দর্শকের চোখে এক অন্যরকম প্রত্যাশা। মাহফুজ আহমেদ সেই নামগুলোর অন্যতম। টেলিভিশনের পর্দায় দীর্ঘ সময় ধরে তিনি শুধু একজন নায়কই নন, হয়ে উঠেছেন প্রজন্মের অনুভূতির অংশ। অভিনয়, প্রযোজনা, নির্মাণ-সব জায়গাতেই তার স্বতঃস্ফূর্ত ছাপ আজও সমানভাবে আলো ছড়াচ্ছে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৬৭ সালের ২৩ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের জগৎপুর গ্রামে তার জন্ম। পড়াশোনার হাতেখড়ি সেখানেই। ছোটবেলা থেকেই তার ঝোঁক ছিল শিল্প ও সংস্কৃতির দিকে। অভিনয়ের প্রতি তীব্র আগ্রহ থেকেই ঢাকায় আসা, আর সেখান থেকেই শুরু স্বপ্নপূরণের যাত্রা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নাটক দিয়ে পর্দায় আসেন তিনি।
-
টিভি নাটকের সোনালি যুগে মাহফুজ আহমেদ ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ‘জোছনার ফুল’, ‘চান্দের বুড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘ট্র্যাজেডি কুইন’, ‘রূপালী রাত’-এমন অসংখ্য নাটক ও ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেছেন, যা দর্শক এখনও মনে রেখেছে। তার অভিনয়ের সহজ-সরল ভঙ্গি, সংলাপ বলার ধরণ এবং চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা তাকে সমসাময়িকদের ভিড় থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
-
টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর সিনেমার পর্দাতেও অভিনয় করেন তিনি। ‘লালসালু’, ‘প্রেমের কাহিনি’, ‘জান্নাত’, ‘সুবর্ণভূমি’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। বিশেষ করে ‘লালসালু’ ছবিতে তার চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা প্রমাণ করে দিয়েছিল, তিনি কেবল ছোট পর্দায় নয়, বড় পর্দাতেও সমান দক্ষ।
-
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযোজনা ও পরিচালনায়ও মনোযোগী হয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট থেকে নির্মিত নাটকগুলো একসময় দর্শকের কাছে ব্যতিক্রমী কাজ হিসেবে পরিচিতি পায়। নিজের সৃজনশীল ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, অনেক তরুণ নির্মাতারও পথচলার সুযোগ করে দিয়েছেন।
-
পারিবারিক মানুষ হিসেবে মাহফুজ আহমেদ বেশ পরিচিত। স্ত্রী ইপশিতা শবনম শিউলি ও সন্তানদের নিয়ে তিনি শান্ত-নিরিবিলি জীবনযাপন করেন। মিডিয়া জগৎ থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও বিশেষ উপলক্ষ কিংবা বিশেষ প্রজেক্টে তিনি হাজির হন, আর তখনো দর্শক তাকে আগের মতোই ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করে।
-
বাংলাদেশের নাটক ও চলচ্চিত্রে মাহফুজ আহমেদের অবদান অনস্বীকার্য। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণা, আর পুরনো দর্শকের কাছে এক আবেগ।