শুভ জন্মদিন বলিউডের বিতর্কিত প্রতিভা মহেশ ভাট
বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় অসংখ্য নির্মাতা এসেছেন, কেউ থেকেছেন আলোয়, কেউ মিলিয়ে গেছেন অন্ধকারে। কিন্তু মহেশ ভাট সেই বিরল নাম, যিনি একদিকে সাহসী গল্পকার, অন্যদিকে বিতর্কের ঝড় তোলা চরিত্র। কখনো ব্যক্তিজীবনের উত্থান-পতন, কখনো নির্মম বাস্তবতাকে পর্দায় তুলে ধরা-সব মিলিয়ে তার জীবন যেন সিনেমার চেয়েও নাটকীয়। বিশেষ এই দিনে তাকে মনে পড়ছে শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নয়, বরং এমন এক শিল্পী হিসেবে, যিনি সত্যকে আড়াল করতে শেখেননি। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৪৮ সালের এই দিনে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া মহেশ ভাটের শৈশব ছিল জটিল পারিবারিক সম্পর্কের আবহে গড়া। তিনি ছিলেন নানাভাবে দ্বন্দ্বময় বেড়ে ওঠার এক চরিত্র। তার বাবা নানভাই ভাট ছিলেন গুজরাটি হিন্দু আর মা শিরিন ছিলেন মুসলিম। এই দ্বৈত সংস্কৃতি ও সামাজিক চাপে বড় হওয়া মহেশ ভাটের মানসিকতায় এক ধরনের বৈচিত্র্য তৈরি করে, যা পরবর্তী সময়ে তার চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হয়।
-
তার নাম বলিউডে শুধুই একজন পরিচালক বা প্রযোজকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি একাধারে এক সাহসী গল্পকার, বিতর্কিত চিন্তক এবং সামাজিক বাস্তবতার নির্ভীক অনুবাদক। তার নির্মাণশৈলীতে যেমন আছে জীবনের নির্যাস, তেমনি আছে ব্যক্তিগত সংগ্রামের ছাপ। তাই মহেশ ভাটকে ঘিরে সিনেমার পর্দার বাইরেও আলোচনার ঝড় কখনো থেমে থাকেনি।
-
মাত্র কুড়ির কোঠায় এসে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণ দিয়ে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর চলচ্চিত্রে প্রবেশ। তবে প্রথম দিকের কাজগুলোতে বড় কোনো সাফল্য পাননি। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বানালেন ‘আর্থ’ (১৯৮২)-যা বলিউডে তাকে নতুন করে পরিচিতি দেয়। ছবিটি ছিল তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে ব্যর্থ সম্পর্ক, বিশ্বাসঘাতকতা ও মানসিক যন্ত্রণা উঠে আসে কাহিনীতে। এই সিনেমা দর্শককে নাড়া দিয়েছিল, আর মহেশ ভাটকে দিয়েছে আলাদা জায়গা।
-
‘আর্থ’-এর পর ‘সারাংশ’ (১৯৮৪), ‘নাম’ (১৯৮৬), ‘জখম’ (১৯৯৮) কিংবা ‘রাজ’ সিরিজের মতো ভৌতিক ঘরানার চলচ্চিত্র-প্রতিটিতেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি শুধু প্রেম কিংবা সামাজিক গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং সমাজের অন্ধকার দিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এবং মানুষের ভেতরের দ্বন্দ্ব তার চলচ্চিত্রে অনন্যভাবে ফুটে উঠেছে।
-
মহেশ ভাটের ব্যক্তিগত জীবন যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি বিতর্কিতও। অভিনেত্রী পরভীন বাবির সঙ্গে তার সম্পর্ক বলিউডে দীর্ঘদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
-
পরবর্তীতে তিনি কিরণ ভাটকে বিয়ে করেন এবং তাদের ঘরে জন্ম নেন আলিয়া ভাট, পূজা ভাট, শাহিন ভাট ও রাহুল ভাট। সন্তানদের মধ্যেও তিনি নিজের নির্মাণশৈলী ও চিন্তাধারার ছাপ রেখেছেন।
-
তিনি স্পষ্টভাষী মানুষ হিসেবে পরিচিত, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে তার মন্তব্য প্রায়ই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক সময় সমালোচনার মুখেও পড়েছেন, তবে থেমে থাকেননি। বরং বিতর্ককে তিনি নিজের পরিচয়েরই অংশ করে নিয়েছেন।
-
পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও মহেশ ভাট ছিলেন সমান সক্রিয়। ভাট ক্যাম্পের ব্যানারে তিনি একাধিক নতুন মুখ উপহার দিয়েছেন বলিউডকে। সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্যও তার সিনেমা বিশেষ, কারণ তার ছবিতে সুরের ব্যবহার সবসময়ই ছিল আবেগঘন ও জনপ্রিয়।
-
‘সারাংশ’ এবং ‘আর্থ’-এর মতো চলচ্চিত্র তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসা এনে দিয়েছে। ‘জখম’ ছবির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তবে পুরস্কারের বাইরেও দর্শকের মনে যে ছাপ তিনি রেখে গেছেন, সেটিই তার প্রকৃত অর্জন।
-
বলিউডে মহেশ ভাটকে শুধু একজন পরিচালক হিসেবে দেখা হলে ভুল হবে। তিনি এক অগ্নিপরীক্ষিত জীবনযাত্রার গল্পকার, যিনি সিনেমাকে ব্যবহার করেছেন সত্য প্রকাশের আয়না হিসেবে। তার চলচ্চিত্রে দর্শক খুঁজে পান নিজের জীবনের ছায়া, নিজের দ্বন্দ্বের প্রতিফলন।
-
আজকের দিনে দাঁড়িয়েও মহেশ ভাট এক অনন্য নাম, কারণ তিনি প্রমাণ করেছেন-সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; বরং এটি হতে পারে বাস্তব জীবনের নির্মম কাহিনীর শিল্পিত রূপ।