বিয়ে-স্বামী ছাড়াই মা হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন এই ডিভা
সমাজ যখন এখনো নারীর জীবনকে বিয়ে আর সংসারের গণ্ডিতে আটকে দেখতে অভ্যস্ত, ঠিক সেই সময়ই সমস্ত নিয়ম ভেঙে নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছিলেন সুস্মিতা সেন। খ্যাতি, আলো আর গ্ল্যামারের মধ্যেও তিনি শুনেছিলেন হৃদয়ের ডাক ‘মাতৃত্বের’। কিন্তু সেই মাতৃত্বের পথে ছিল না কোনো প্রচলিত দাম্পত্যজীবন, ছিল না স্বামীর নাম বা সামাজিক স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতা। ছিল কেবল এক তরুণীর অদম্য সাহস, আত্মবিশ্বাস আর ভালোবেসে শিশুকে নিজের জীবনের অংশ করে নেওয়ার তীব্র ইচ্ছে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে দত্তক নিয়ে মা হওয়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, তা শুধু ব্যক্তিগত নয়-সমাজের চোখে নারী স্বাধীনতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আজও অনুপ্রেরণা জাগায়। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
বলিউডে অনেক তারকা আছেন, কিন্তু সবাই আইকন হয়ে উঠেন না। সুস্মিতা সেন সেই বিরল অভিনয়শিল্পীদের একজন যিনি শুধুই অভিনয়, সৌন্দর্য বা খ্যাতির কারণে নয়; বরং নিজের স্বাধীন চিন্তা, জীবনযাপন আর অনমনীয় সাহসের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। আজ তার জন্মদিনে তাকে স্মরণ করা মানে এক শক্তিশালী নারীর যাত্রাপথ উদযাপন করা, যিনি প্রতিটি সাফল্যের পিছনে রেখে গেছেন লড়াই, আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণার গল্প।
-
১৯৯৪ সাল, মাত্র ১৮ বছর বয়সে যখন সুস্মিতা মিস ইউনিভার্স-এর মুকুট জেতেন, তখনো ভারতীয় সমাজে নারীর স্বাধীনতা নিয়ে নানা বাঁধা-ধরার ধারণা প্রচলিত ছিল। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি এই সম্মান অর্জন করেন। সেদিন থেকে তার নাম শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক ছিল না, বরং ভারতীয় নারীর ক্ষমতায়নের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
-
মিস ইউনিভার্স জয়ের পর বলিউডে তার আগমন ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু সে পথ মোটেও সহজ ছিল না। শিল্পে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছিল প্রতিটি চরিত্রে, প্রতিটি দৃশ্যে।
-
সুস্মিতা সেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সচেতনভাবে বেছে নিয়েছেন ভিন্নধর্মী চরিত্র। জনপ্রিয় ছবির নায়িকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি চেষ্টা করেছেন শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ নারী চরিত্রে অভিনয় করতে।
-
‘বিবি নম্বর-১’ ছবিতে তার উপস্থিতি তাকে এনে দেয় বলিউডে স্থায়ী জায়গা। এছাড়া ‘স্রেফ তুম’, ‘ফিলহাল’, ‘মে হু না’ প্রতিটি ছবিতে তিনি নিজের অভিনয়ের গভীরতা প্রমাণ করেছেন।
-
চরিত্র বাছাইয়ে তিনি কখনোই বাণিজ্যিক চাপকে প্রাধান্য দেননি। বরং প্রতিটি চরিত্রে তিনি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন নারীর আত্মসম্মান, অনুভূতি ও শক্তি।
-
সুস্মিতা সেনের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিজের জীবনে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন সেগুলো।
-
মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি দত্তক নেন মেয়ে রেনে-কে। সমাজের নানা প্রশ্ন, কৌতূহল এবং সমালোচনা সত্ত্বেও তার সিদ্ধান্ত অনুপ্রাণিত করে লক্ষ লক্ষ নারীকে। পরে আলিশাও তার জীবনে আসে। দুই মেয়েকে নিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন এক দৃঢ় পরিবার।
-
সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, ক্যারিয়ার সবকিছুই তিনি সামলেছেন আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার সাথে। তিনি কখনোই সমাজের নিয়মে চলেননি; বরং নিজের বাস্তবতা, অনুভূতি ও সঠিক সিদ্ধান্তকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
-
হার্ট সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরও সুস্মিতা জীবনের প্রতি তার ইতিবাচকতা হারাননি। কঠোর ফিটনেস রুটিন, যোগব্যায়াম এবং মানসিক শক্তির উপর ভর করে তিনি নতুন করে ফিরে এসেছেন। এর মাধ্যমে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন সত্যিকারের সৌন্দর্য মানে শারীরিক নয়, মানসিক স্থিতিশীলতা।
-
অনেক বছর বড় পর্দা থেকে দূরে থাকার পর সুস্মিতা সেন যখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘আরিয়া’ সিরিজে অভিনয় করেন, দর্শক মাত্রই বুঝে যায় তিনি এখনো রাণী। একজন মা, স্ত্রী এবং শক্ত হাতে ব্যবসা সামলানো নারীর চরিত্রে তার অভিনয় ছিল শক্ত, গাঢ় ও নিঃসংকোচ।
-
এই সিরিজ তার ক্যারিয়ারকে শুধু নতুন উচ্চতাই দেয়নি, বরং প্রমাণ করেছে প্রতিভা কখনো হারায় না, সঠিক সময় পেলে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
-
সুস্মিতা সেন শুধু একজন বলিউড তারকা নন, তিনি এমন এক নারীর প্রতীক, যিনি দেখিয়েছেন জীবনের প্রতিটা কঠিন মুহূর্তও নতুন শুরুর ইন্ধন হতে পারে। নিজের মেয়েদের হাত ধরে, নিজের সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়ে এবং নিজের পরিচয় নিজেই গড়ে তোলার ক্ষমতা নিয়ে তিনি আজও অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা।