র্যাপ-রিদম ও রঙিন শিল্পজগতের এক সম্রাট বাদশাহ
ভারতীয় সঙ্গীতে গত এক দশকে যে নামটি নতুন ঢেউ তুলেছে, শ্রোতা-প্রজন্মকে বদলে দিয়েছে আর পপ-সংস্কৃতিকে দিয়েছে এক আলাদা পরিচয় তিনি বাদশাহ। র্যাপ, হিপ-হপ, ড্যান্সবিট এবং লোকজ সুরের মিশেলে তিনি তৈরি করেছেন এমন এক নিজস্ব সঙ্গীতধারা, যা ভারতের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে সারা দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয়। আজ তার জন্মদিন-এই উপলক্ষ তাকে ফিরে দেখার, তার সৃজনশীল পথচলার গল্প বলার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
বাদশাহর প্রকৃত নাম আদিত্য প্রতীক সিংহ সিসোদিয়া। দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা বাদশাহ ছোট থেকেই গান শুনতে, তাল ধরতে আর শব্দ নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। স্ট্রিট সঙ্গীত, বাংলা-হিন্দি পুরনো গান, পাশ্চাত্যের র্যাপ সবকিছুর মিশ্রণ তার মনে তৈরি করেছিল অন্যরকম এক সুরের জগৎ।
-
প্রথাগত শিক্ষা শেষে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথে হাঁটলেও নিজের অন্তরের ডাক থেকে পালাতে পারেননি। কলেজ জীবনে তিনি র্যাপ লেখা শুরু করেন, বিট বানান এবং বন্ধুদের সঙ্গে ছোট ছোট পারফরম্যান্সে অংশ নেন। সেখানেই জন্ম নেয় পরিচিতির প্রথম বীজ।
-
তার ক্যারিয়ারের শুরুতে হানি সিং এর সঙ্গে কাজ করা তাকে দ্রুত পরিচিতি এনে দেয়। তবে বাদশাহ ছিলেন স্বতন্ত্র কণ্ঠের অধিকারী তিনি নিজের গান, নিজস্ব স্টাইলের মাধ্যমে আলাদা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
-
‘ডিজে ওয়ালা বাবু’ এই গান ভারতীয় পার্টি-সংস্কৃতির এক যুগান্তকারী বাঁক তৈরি করে। এছাড়া ‘কার গিয়ে চুল’, ‘কালা চশমা’, ‘গেন্দা ফুল’, ‘জুগ্নু’ প্রতিটি গানই প্রকাশের পর মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে ওঠে।
-
হিন্দি, হরিয়ানি এবং পাঞ্জাবি তিন ভাষাতেই তিনি সমান দক্ষতায় র্যাপ ও সুর নির্মাণ করেছেন। তার গানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সহজ লিরিক, নাচের মতো তাল এবং কণ্ঠে এক ধরণের আত্মবিশ্বাসী ছন্দ। এজন্যই তিনি শিশু থেকে শুরু করে তরুণ শ্রোতা সবার মন জয় করেছেন।
-
বাদশাহ শুধু গায়ক বা র্যাপার নন; তিনি একজন স্টাইল আইকনও। ফ্যাশন, সানগ্লাস, চেইন, ওভারসাইজড পোশাক সব মিলিয়ে তার স্টাইল এখন বলিউড-পপের অন্যতম ট্রেন্ড।
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে তিনি কতটা দক্ষ। সংলাপ, লুক, ভিডিও প্রেজেন্টেশন সবকিছুতেই তিনি নতুনত্ব আনতে পছন্দ করেন।
-
বাদশাহ শুধু গায়ক নন, একজন দক্ষ সঙ্গীত উদ্যোক্তাও। নতুন শিল্পীদের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ আগ্রহী। র্যাপ, হিপ-হপ, ফোক সব ধারাতেই তিনি তরুণ প্রতিভাদের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
-
লাইভ শো, কনসার্ট বা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট যেখানেই তিনি মঞ্চে ওঠেন, তার মধ্যে এক ধরনের এনার্জি ছড়িয়ে পড়ে। শ্রোতার সঙ্গে যোগাযোগ, বিটের ওঠানামা এবং আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে তিনি মঞ্চে হয়ে ওঠেন সত্যিকারের ‘বাদশা’।
-
যতটা চ্যাম্পিয়ন তিনি মঞ্চে, ততটাই সরল তিনি ব্যক্তিজীবনে। পরিবার, বন্ধু ও নিজের শিকড় এসবের মূল্য দিতে তিনি কখনও ভুলে যান না। খ্যাতির ঔজ্জ্বল্যের মাঝেও তিনি বাস্তবতার মাটিতেই পা রাখেন।
-
বাদশাহ শুধু একজন র্যাপার নন; তিনি ভারতীয় পপ-সংস্কৃতির এক রঙিন অধ্যায়। তার গান একদিকে যেমন পার্টির তালে দোলা দেয়, অন্যদিকে তেমনি নতুন শিল্পীদের জন্য পথ খুলে দেয়। তিনি দেখিয়েছেন সঙ্গীতের ভাষা একটাই, আর তা হলো অনুভূতির শক্তি।