শান্ত পাহাড় থেকে বলিউডের পর্দা, ইয়ামির এক পরিণত যাত্রা
বলিউডে এমন কিছু মুখ আছে যাদের উপস্থিতি কখনো কোলাহল সৃষ্টি করে না, তবুও নিঃশব্দে দর্শকের মন কাড়ে। ২৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া ইয়ামি গৌতম ঠিক সেই বিরল মানুষদের একজন, যিনি গ্ল্যামারের মৌলিক শব্দগুলোকে নীরব সৌন্দর্যে পুনর্নির্ধারণ করেছেন। তাকে ঘিরে কোনো বিতর্ক নেই, অতিরঞ্জিত প্রচার নেই, আছে শুধু অভিনয়ের প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা আর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। বিশেষ এই দিনে তাই তার যাত্রার গল্পটিও নতুন করে বলতেই হয়। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
চন্ডীগড়ে বড় হওয়া ইয়ামি গৌতমের শুরুর গল্পটি ঠিক তার মতোই সরল ও স্নিগ্ধ। আইন পড়া হতো তার পরিবারের পরিকল্পনায়, কিন্তু ইয়ামি নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেছিলেন আরও আলাদা লাইট-ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আলো। খুব ছোট থেকেই নাচ, অভিব্যক্তি আর পারফর্মিং আর্টের প্রতি তার আকর্ষণ তাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যায় অভিনয়ের পথে।
-
টেলিভিশন দিয়েই যাত্রা শুরু। বিজ্ঞাপন ছিল তার প্রথম পরিচয়, যেখানে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ফেয়ার অ্যান্ড লভলি বিজ্ঞাপনের ‘উজ্জ্বল মুখের মেয়েটি’ হিসেবে। সেই স্মিত হাসিই পরে তাকে বলিউডের দরজায় পৌঁছে দেয়।
-
২০১২ সালে ‘বিকি ডোনর’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ইয়ামি আর পিছনে তাকাননি। শান্ত, স্থির, আবেগমিশ্রিত অভিনয় তিনি যেন খুব সহজেই করে ফেলেন। সেই ছবিতেই প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি কোনো গ্ল্যামার-ডিপেন্ডেন্ট স্টার নন; তিনি অভিনেত্রী, এবং সেটাই তার পরিচয়।
-
এরপর আসতে থাকে তিনি-নির্ভর নানা চরিত্র। ‘কাবিল’-এ দৃষ্টিহীন একজন নারীর ভূমিকায় তার মেধা নতুন করে প্রশংসিত হয়।
-
‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ ইন্টেলিজেন্স অফিসারের চরিত্রে তার দৃঢ় উপস্থিতি দেখিয়েছে তার বহুমাত্রিকতা।
-
ইয়ামি গৌতমের সবচেয়ে বড় জাদু হলো তার অপ্রচলিত নীরবতা। ইন্ডাস্ট্রির চমকপ্রদ প্রচারণা যুদ্ধে তিনি কখনো অংশ নেন না। তিনি নেই দলে, নেই গসিপে, নেই অযথা সোশ্যাল মিডিয়া প্রদর্শনীতে। তিনি থাকেন কাজে, চুপচাপ, একটা পর্দার আড়ালে।
-
এই নীরবতাই তাকে আলাদা করেছে অন্যদের থেকে। যেখানে অনেকে নিজেদেরকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে ব্যস্ত, সেখানে ইয়ামি নিজের আলো জ্বালান চরিত্রের মধ্যে পরিচয়ের ভেতর নয়।
-
ইয়ামি একজন অভিনেত্রী হলেও তিনি একই সঙ্গে একজন দারুণ গৃহিণী, প্রকৃতিপ্রেমী ও শান্ত-স্বভাবের মানুষ। পরিচালক আদিত্য ধরকে বিয়ে করার পর তার জীবন যেন আরও বেশি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে ফিরে যাওয়া, বাগান করা, পরিবার নিয়ে সময় কাটানো-এই সহজ জীবনযাপন তাকে আরও প্রাকৃতিক করে তোলে। বলিউডে যেখানে ‘স্টারডম’ মানেই উন্মাদনা, সেখানে ইয়ামি দেখিয়েছেন সরলতা দিয়েও জনপ্রিয় হওয়া যায়।
-
ইয়ামি এমন একজন অভিনেত্রী, যার ক্যারিয়ার প্রতিযোগিতার নয়, ধারাবাহিকতার গল্প। তিনি যত বয়সে বড় হচ্ছেন, ততই চরিত্রের গভীরতা বাড়ছে তার মধ্যে। বয়স তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে, আরও দৃঢ় করেছে তার পর্দার ভাষা। তিনি এখন স্রেফ ‘হালকা রোমান্টিক নায়িকা’ নন; তিনি বলিউডের পরিণত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী মুখদের একজন।