জন্মদিনে জানুন তানিয়ার ক্রিকেট যাত্রার জানা-অজানা সব
ভারতীয় নারী ক্রিকেটে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা যতটা কঠিন, ততটাই সূক্ষ্ম। আলো সবসময় স্পটলাইটের দিকে ছুটে যায় বোলার, ব্যাটার কিংবা দ্যুতিময় অলরাউন্ডারের দিকে। কিন্তু ‘স্টাম্পের আড়ালে’ দাঁড়িয়ে থেকেও যারা ম্যাচের ধারা বদলে দেন, তাদের একজন হলেন তানিয়া স্যাবা ভাটিয়া। ২৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া এই চণ্ডীগড়ের মেয়ে ভারতের নারী ক্রিকেটে নীরব কিন্তু অবিচল এক শক্তির নাম। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
১৯৯৭ সালের এই দিনে জন্ম নেওয়া তানিয়ার ক্রিকেটপ্রেম শুরু পারিবারিক পরিবেশেই। তার বাবা সঞ্জয় ভাটিয়া নিজেও ছিলেন একজন কিপার-ব্যাটার, যিনি মেয়ের মাঝে নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্নটি খুঁজে পেতেন। আর মা রুবিনা ভাটিয়া ছিলেন সেই স্থির সমর্থন, যিনি ছোটবেলায় ছেলের মতো মেয়েকেও মাঠে দৌঁড়াতে উৎসাহ দিয়েছেন।
-
চণ্ডীগড়ের ঘাসঢালা পিচে যখন ছেলেদের সঙ্গে অনুশীলন করতেন তানিয়া, তখনই তাকে দেখেই কোচরা বলতেন, এই মেয়েটার হাতে গ্লাভস যেন জন্মগত। সেই বয়সেই তার রিফ্লেক্স, বোঝাপড়া আর চঞ্চলতা আলাদা নজর কাড়তে শুরু করে।
-
ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলে উইকেটরক্ষার জায়গাটি কখনো সহজ ছিল না। ধারাবাহিকতা, মনোযোগ, দ্রুত সিদ্ধান্ত সব একসাথে ধরে রাখা অনেকের পক্ষেই কঠিন। কিন্তু তানিয়া এই জায়গাটাকে শিল্পে পরিণত করেছেন। তার স্টাম্পিংয়ের সূক্ষ্মতা, নরম হাত আর সোজাসাপ্টা গ্লাভস-ওয়ার্ক তাকে খুব দ্রুতই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলাদা করে দেয়।
-
বিশেষ করে ২০১৮-২০১৯ সময়ে ভারতীয় দলে তার আগমন যেন এনে দেয় নতুন নিশ্চয়তা। ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক হলেও উইকেটের পেছনে তার শান্ত স্থিরতা দলের বড় শক্তি।
-
প্রকাশ্যে খুব বেশি বলা না হলেও তানিয়া ভাটিয়া পেরিয়েছেন এক কঠিন মানসিক পর্ব। জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখা, প্রত্যাশার চাপ এবং ধারাবাহিকতা সব মিলিয়ে যে মানসিক টানাপোড়েন তৈরি হয়, তা তিনি এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছিলেন। এই সময়টুকু তাকে আরও পরিণত করে।
-
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০২০ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল তানিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সফর। পুরো টুর্নামেন্টে ভারতের ডিফেন্সিভ সেটআপে তার ভূমিকা ছিল নিঃশব্দ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর। তার ন্যাচারাল গ্লাভসিং, ফিল্ড প্লেসমেন্ট বোঝার ক্ষমতা এবং দ্রুত রিভিউ সাজেশন বারবার ভারতকে বিপদ থেকে টেনে আনে। ভারত সেই টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়, আর তানিয়া নিজের জায়গা আরও পোক্ত করে তোলেন।
-
মাঠে যতটা মনোযোগী, মাঠের বাইরে ততটাই অনুপ্রেরণাদায়ী তিনি। নারী ক্রিকেটারদের সুযোগ-সমতা, নিরাপত্তা এবং ফিটনেস নিয়ে নিয়মিত কথা বলেন। বিশেষ করে তরুণ মেয়েদের উদ্দেশে তার বার্তা, নিজেকে কখনো ছোট ভাববে না। মাঠ তোমাকে নিজেই বড় বানিয়ে দেবে। চণ্ডীগড়ের মেয়েদের কাছে তিনি এখন এক রোল মডেল।