ঝিংগানের পায়ের জাদুতে বদলে গেছে ভারতের ডিফেন্স
যখন ভারতের ফুটবল রক্ষণভাগ নিয়ে কেউ হতাশা প্রকাশ করত, তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটেছিল এক সাহসী, দৃঢ়চেতা তরুণ সন্দেশ ঝিংগান। বল ঠেকাতে গিয়ে শরীর ছুঁড়ে দেওয়া, প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের সামনে মানব-প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো আর গ্যালারিভর্তি দর্শকদের হৃদয় জিতে নেওয়া-এসবই যেন তার রোজকার অভ্যাস। তার পায়ের নিখুঁত ট্যাকল, মাথা উঁচু করে লড়াই করার মানসিকতা আর নেতৃত্বগুণ ভারতের ডিফেন্সকে এনে দিয়েছে নতুন আত্মবিশ্বাস। এক সময় যেখানে রক্ষণভাগ ছিল দুর্বলতার জায়গা, সেখানে আজ ঝিংগান দাঁড়িয়েছেন সাফল্যের প্রতীক হয়ে। বয়সে তরুণ হলেও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ এই ডিফেন্ডার আজ জাতীয় দলের অনন্য সম্পদ। তার পায়ের জাদুতেই যেন বদলে গেছে ভারতের ফুটবল মানচিত্রের এক বিরাট অধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৯৩ সালের এই দিনে চণ্ডীগড়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম।
-
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল, কিন্তু ফুটবলের প্রতি তার আলাদা একটা টান ছিল শুরু থেকেই। সেই টানই তাকে নিয়ে যায় সেন্ট স্টিফেন্স ফুটবল একাডেমিতে, যেখানে তার প্রতিভা প্রথমবারের মতো চোখে পড়ে প্রশিক্ষকদের।
-
শুরুর দিকে তার উচ্চতা ও গড়ন খুব একটা আকর্ষণীয় ছিল না, কিন্তু কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা ও হার না মানা মনোভাবই তাকে এগিয়ে দেয়। এরপর ধীরে ধীরে নিজের শারীরিক গঠনে পরিবর্তন এনে তিনি পরিণত হন এক দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগের সৈনিক হিসেবে।
-
২০১১ সালে ইউনাইটেড সিকিম ক্লাবের মাধ্যমে ঝিংগানের পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয়। এরপর খেলেছেন রেঞ্জার্স (ভারত), মুম্বই এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স, বেঙ্গালুরু এফসি, এটিকে মোহনবাগান, এইচএনকে শিবেনিক (ক্রোয়েশিয়া) এবং বর্তমানে এফসি গোয়া দলে।
-
তবে ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা তাকে বেশি মনে রাখে কেরালা ব্লাস্টার্স-এর হয়ে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য। ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অভিষেকেই ঝড় তুলেছিলেন। সে বছর তিনি পেয়েছিলেন ‘ইমার্জিং প্লেয়ার অব দ্য লিগ’ খেতাব। এর পরবর্তী পাঁচ বছরে কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে ৭৬টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন তিনি, যা তখন ছিল ক্লাবটির সর্বোচ্চ রেকর্ড।
-
২০১৫ সালে ভারতের জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে সন্দেশ ঝিংগানের। তখন থেকেই তিনি রক্ষণভাগে অটল এক দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ভারত যখন কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়, তখন ঝিংগানের পায়ের ট্যাকল আর লিডারশিপ দলের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ৬৬টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ৫টি।
-
২০১৮ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৯ এএফসি এশিয়ান কাপ-এ ভারতের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পেছনেও ছিল তার অবদান। তার নেতৃত্বে ভারত প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামিয়ে ম্যাচে টিকে থাকার এবং জয়ের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিল।
-
সন্দেশ ঝিংগান কেবল মাঠেই নন, সাফল্যের মানদণ্ডে পুরস্কারের তালিকাতেও নিজের নাম লিখিয়েছেন বারবার।
-
ঝিংগানের খেলা মানেই এক অনমনীয় দৃষ্টান্ত। ১.৮৬ মিটার উচ্চতা আর দেহের শক্তি তাকে ডিফেন্সিভ পজিশনে এনে দিয়েছে বাড়তি সুবিধা। তবে শুধু শরীর নয়, তার মানসিক দৃঢ়তাও চোখে পড়ার মতো। সর্বোচ্চ মানের ফিটনেস, সময়োপযোগী ট্যাকল, এয়ার বল কন্ট্রোল আর লিডারশিপ-সব মিলিয়ে তিনি ভারতের রক্ষণভাগের প্রকৃত সেনাপতি।