ডিপ কোমায় থাকা মোহাম্মদ নাসিম কি সুস্থ হয়ে উঠবেন?
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ও ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।
শুক্রবার (৫ জুন) সকালে ব্রেন স্ট্রোক করার পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তিনি গভীর অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। চিকিৎসকের ভাষায় তিনি ‘ডিপ কোমায়’ আছেন। ভেন্টিলেশন মেশিনের সাহায্যে তিনি কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছেন। ওষুধের সাহায্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চললেও তা নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা কি আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন-এমন প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, এ ধরনের রোগীদের সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
তারা বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ১০-১২ বছর আগে আরও একবার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর নমুনা পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা প্রদানের পর তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তরের চিন্তা করছিলেন চিকিৎসকরা। যেদিন তাকে কেবিনে স্থানান্তর করার কথা সেদিনই তিনি সকাল বেলা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে সিটি স্ক্যান করে দেখতে পান, তার মস্তিষ্কে বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে একটি টিম দ্রুত মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তিনি গভীর অচেতন অবস্থায় আছেন।
মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের বয়স, দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া, ডায়াবেটিস, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ঝুঁকি এমনিতেই বেশি। তার ওপর তিনি এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সবকিছু বিবেচনায় প্রবীণ এ নেতা আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মোহাম্মদ নাসিমের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে আজ বেলা ১১টায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বিএসএমএমইউ উপাচার্য ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, সকাল বেলা তিনি হাসপাতালে মোহাম্মদ নাসিমের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।
উল্লেখ্য, গত ১ জুন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এর আগে ‘শারীরিক দুর্বলতা’ নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম।
এমইউ/এসআর/পিআর