এক বছরে বিএনপির মিডিয়া সেলের সফলতা কতটুকু?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ২১ জুন ২০২৩

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রচার ও সাংবাদিকদের কাছে সহজে তথ্য পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিএনপির গঠিত মিডিয়া সেলের এক বছর পূর্ণ হলো। দলটির সাবেক দুই সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে এ সেল গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছাত্রদল থেকে উঠে এসে দলে পদবঞ্চিত, অন্যজন ছাত্রমৈত্রী থেকে উঠে এসে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পরবর্তীকালে দলের সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পান। সেল গঠনের সময় এর সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যম বিচ্ছিন্নতার প্রশ্ন উঠেছিল। গত এক বছরে গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে মিডিয়া সেল কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে, সফলতাইবা কতটুকু, তা নিয়ে দল এবং দলের বাইরে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

গত বছরের ২০ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জহির উদ্দিন স্বপনকে আহ্বায়ক ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে সদস্য সচিব করে বিএনপির ১০ সদস্যবিশিষ্ট মিডিয়া সেল গঠন করা হয়েছে। মিডিয়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শাম্মী আক্তার, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কাদের গণি চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আলী মাহমুদ (দিনকাল), আতিকুর রহমান রুমন ও শায়রুল কবির খান।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: স্বপনকে প্রধান করে বিএনপির মিডিয়া সেল গঠন

দলীয় সূত্র জানায়, মিডিয়া সেল গঠনের পর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ওইসব অঞ্চলের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিএনপির কর্মসূচি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ সেলের উদ্যোগে জাতীয় গণমাধ্যমের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং সংবাদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। অন্যদিকে সার্বক্ষণিক যেসব সংবাদকর্মী বিএনপির কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করেন তাদের সবার সঙ্গে এখনো ততটা পরিচিত হতে পারেনি মিডিয়া সেল। আনুষ্ঠানিকভাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হলেও এখনো বিএনপি বিটের সংবাদকর্মীদের তথ্যপ্রাপ্তিতে শেষ ভরসা শায়রুল কবির খান।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে শুধু গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে একটি উৎসব আয়োজন করা গেলে সেটিই হতো মিডিয়া সেলের অর্জন। দলীয় নেতাদের কর্মসূচিতে বিটের সাংবাদিকরা তো এমনিতেই যান। কিন্তু বিটই তো শেষ কথা নয়, এর বাইরেও তো আরও অনেকে রয়েছেন।

মিডিয়া সেল গঠনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সার্বক্ষণিক তৎপর ছিল। তবে এরই মধ্যে বিলুপ্ত হওয়া সেই প্রেস উইংয়ের বিএনপি বিটের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অথবা দলের সিনিয়র নেতাদের কর্মসূচি থাকলে তৎকালীন প্রেস উইং বিটের সব সংবাদকর্মীকে আমন্ত্রণ জানাতো। এক্ষেত্রে মিডিয়া সেল ব্যতিক্রম। বিশেষ সম্পর্কের হাতেগোনা দু-চারজন সংবাদকর্মীকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিএনপির মিডিয়া সেলে নেই কোনো পেশাদার সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তবে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মিডিয়া সেল ভালো কাজ করছে। এটি দপ্তরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, সব দলের মিডিয়া সেল আছে, আমাদেরও আছে। ভালো কাজ করছে।

মঙ্গলবার বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানে সিক্স সিজন হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেলের এক বছরের নানা কার্যক্রম নিয়ে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণমাধ্যমে যেসব খবর গুরুত্ব দেওয়া হয় না মিডিয়া সেল সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছে। অল্প সময়ে অনেক ভালো কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল হাই শিকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফ উদ্দিন নিজান, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মিডিয়া সেলের শাম্মী আখতার, মোর্শেদ হাসান খান, রুমিন ফারহানা, কাদের গনি চৌধুরী, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, মীর মোহাম্মদ হেলাল, মওদুদ হোসেন আলমগীর, আলী মাহমুদ, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চায় বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকও ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।

এতে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, এক বছর আগে ধানমন্ডি এলাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে বিএনপির মিডিয়া সেলের যখন যাত্রা শুরু হয় তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম একজন মেহমান এবং পরামর্শক হিসেবে। আজকে তাদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত এক বছরের কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন দেখে আমি খুশি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০২২ সালের আগে যে বিএনপির মিডিয়া সেল ছিল না, এটিই আমার অনুভূতিতে আসেনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, নিজেদের দলের বাইরে শুভাকাঙ্ক্ষী মিডিয়াবান্ধব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজের যোগাযোগ বাড়াতে পারলে আরও ভালো হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বিএনপির মিডিয়া সেল গঠন সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। অনেক বিষয় তুলে ধরছে তারা। গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সেলে অন্তর্ভুক্ত করলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের কাছে সেলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তাদের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের একটা ভিডিও চিত্র দেখার কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজের কাছে ২১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও চিত্র পাঠান। ওই ভিডিও চিত্রে বলা হয়, জনগণের সঙ্গে তথ্য বিনিময় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে বিএনপির মিডিয়া সেল। গবেষণাভিত্তিক কন্টেন্ট তৈরি করে তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মুহূর্তেই তা সচেতন দেশবাসী গ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের জন্য বিএনপির মিডিয়া সেলের নতুন উদ্যোগ

গত এক বছরে মিডিয়া সেলের যা কিছু অর্জন:
গণমাধ্যমসমূহ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা, বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে দুই দফা মতবিনিময়, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু, বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা, সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময়, বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, লেখক-কলামিস্টদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া এসময়ে সাংবাদিক বা তার স্বজনদের মৃত্যুতে শোক ও সান্ত্বনা জানানো হয়েছে। নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে মিডিয়া সেল। নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়েছে। ইন্টারনেটের অধিকার নিয়ে যে সংগঠনগুলো কাজ করে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। জাতীয়তাবাদী অনলাইন অ্যাক্টিভসটদের নিয়ে সমন্বিত নেটওয়ার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিত্তিহীন সংবাদ মোকাবিলায় ফ্যাক্ট চেকারদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে।

একই সঙ্গে মিডিয়া সেল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং জাতীয় সরকার ইস্যুতে জনমত গঠনে মাঠ পর্যায়ে ১০টি সভা করেছে। প্রিন্ট প্রকাশনা রয়েছে রোড টু ডেমোক্রেসি নামে ইংলিশ বুলেটিন। এর ওয়েবসাইট রয়েছে। ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, টুইটার অ্যাকাউন্ট, ইনস্টাগ্রামে প্রতিদিন বিভিন্ন তথ্য প্রচার হচ্ছে। মার্কিন দূতাবাস বিএনপি টুইটার ট্যাগ করে পোস্ট করেছে। ইউটিউব, বাংলাদেশি ভয়েস নামে ব্লগ রয়েছে। ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ সিগন্যাল টেলিগ্রামের মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে দেয়া হয়। সারাদেশের লাইভ করেসপন্ডেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

মিডিয়া সেলের তথ্যভাণ্ডারে ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সংবাদপত্রের আর্কাইভ করা হয়েছে। ‘ফোকাল পয়েন্ট’ নামে টকশো চালু করে সেখানে তরুণদের মতামত দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

কেএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।