‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই’

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গত ১৮ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী আসনে (সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালি) টানা গণসংযোগ করছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে নির্বাচন নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মুসা আহমেদ।

জাগো নিউজ: ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। এমন অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সাঈদ খোকন: এই মুহূর্তে অন্য আসনের বিষয়টা ঠিক সেভাবে নজরে নেই। তবে আমার নির্বাচনী আসন ঢাকা-৬ তথা পুরান ঢাকার মধ্যে নির্বাচনী আমেজ, উৎসাহ-উদ্দীপনা ব্যাপক রয়েছে। আমি এ এলাকার সন্তান। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে আমি, আমার প্রয়াত বাবা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও আমার মরহুম নানা মাজেদ সরদার বিগত প্রায় ১০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় পুরান ঢাকার মানুষের খেদমত করছি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দীর্ঘদিন পর এ এলাকার মানুষ নৌকার প্রার্থী পেয়েছে। আমাদের পরিবারের মানুষকে পেয়েছে। দুটির সমন্বয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করছি এবং আগ্রহটা ব্যাপক।

আরও পড়ুন>> ‘ভিক্ষাবৃত্তি করেই বামরা নৌকা প্রতীক নিয়েছে’

jagonews24

জাগো নিউজ: নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন যথাসময়ে সম্পন্ন করায় কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কেমন আশা করছেন?

সাঈদ খোকন: নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারিই অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে নৌকার ব্যাপক জয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র শঙ্কা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আমাদের মধ্যে নেই, জনগণের মধ্যেও নেই।

আমি পুরান ঢাকার সন্তান। আমি এই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। এই এলাকার মানুষ যদি আমাকে নৌকা মার্কায় একটা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবো।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে। এবারের নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে মনে করেন?

সাঈদ খোকন: আমাদের নেত্রী একেবারে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবব্ধ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন এ দেশের মানুষকে উপহার দেবেন। এই নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্বের মানুষের নজর রয়েছে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছভাবে হয় তার জন্য কিন্তু সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। তারা বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিয়েছে। আপনারা দেখতে পাবেন ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাআল্লাহ।

জাগো নিউজ: আপনি ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকার সময় নগরে বহু অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। এখন নাগরিকদের কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কেন তারা আপনাকে ভোট দেবে?

সাঈদ খোকন: এখানে একটা বিষয় হচ্ছে সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়েই হয়। সংসদ সদস্যের মূল কাজটা হলো আইন প্রণয়ন, সংশোধন করা। সংসদের মূল কাজটা হয় সংসদে আইনকেন্দ্রিক। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে সেগুলোতে সমন্বয় করা, নাগরিকদের যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দূর করতে বিভিন্ন সংস্থাকে তাগিদ দেওয়া, মনিটর করা, বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা এবং সে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মনিটর করা।

আরও পড়ুন>> প্রতিশ্রুত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না

এ বিষয়গুলো সংসদ সদস্যরা করেন। তবে আমার মেয়রের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুরান ঢাকাকে নতুনভাবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ কাজটি আমাদের রাজউকের মাধ্যমে করার কথা ছিল, সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তাদের আমার সহযোগিতা করার কথা ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ায় করতে পারিনি। জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে সংসদ সদস্য হিসেবে এ কাজটি করার উদ্যোগ নেবো। 

দেশ ডিজিটাল হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় ভোটের মধ্য দিয়ে তাকে আমরা দায়িত্ব তুলে দিতে চাই। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আগামী দিনের ঢাকা হবে স্মার্ট ঢাকা। আগামী দিনের ঢাকা হবে স্মার্ট পুরান ঢাকা।

জাগো নিউজ: ঢাকা-৬ আসনে ১০ বছর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগ অভিভাবকহীন ছিল। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আপনি কীভাবে সমন্বয় করছেন?

সাঈদ খোকন: দীর্ঘদিন এ এলাকায় নৌকার প্রার্থী না থাকায় আমাদের সংগঠন কিছুটা দুর্বল হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা অন্য দলের সঙ্গে সেভাবে সমন্বয় করেনি। আওয়ামী লীগের ভোটাররা কিছুটা হতাশায় ভুগছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকায় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী পরিবার, সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষী তারা কিন্তু বেশ উজ্জীবিত ও উচ্ছ্বসিত।

jagonews24

জাগো নিউজ: ঢাকা-৬ আসনে আরও কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন প্রতীকে তারা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের কতটুকু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন?

আরও পড়ুন>> আমি হয়তো আর নির্বাচন করবো না

সাঈদ খোকন: আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসা মানুষ। ১৯৮৭ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে উঠে এসেছি। লেখাপড়া শেষ করার জন্য গ্যাপ ছিল। পরবর্তীসময়ে ১৯৯৭ সাল থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতি শুরু করেছি। আমার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী যতই দুর্বল থাকুক, আমার কাছে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি সেভাবেই গণসংযোগ, মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা, মানুষের কাছে নেত্রীর সালাম পৌঁছে দিচ্ছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি কাজগুলো করছি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকেই ছোট করে দেখছি না। বিজয় অর্জিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম আমি শেষ করবো।

জাগো নিউজ: ভোটারদের আপনার কিছু বলার আছে কি না?

সাঈদ খোকন: ভোটারদের দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এ এলাকার সন্তান আমি। এলাকার মানুষ যদি আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয় তাহলে আমি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবো। দেশ ডিজিটাল হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় ভোটের মধ্য দিয়ে তাকে আমরা দায়িত্ব তুলে দিতে চাই। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আগামী দিনের ঢাকা হবে স্মার্ট ঢাকা। আগামী দিনের ঢাকা হবে স্মার্ট পুরান ঢাকা।

জাগো নিউজ: জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাঈদ খোকন: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এমএমএ/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।