বাংলাদেশ ব্যাংকে কি মাফিয়া, ঋণখেলাপিরা ঢুকবে: রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ১৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকবে কেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পণ্য? বাংলাদেশ ব্যাংক কি রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো একজন মানুষের চলাচল করতে অসুবিধা হয় না। ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে?

রোববার (১৯ মে) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশ তার দিন অতিক্রম করছে। অতিক্রম হওয়া দিন কোনটিই সুখকর নয়। এখানে জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের মনোভাব ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার একের পর এক পন্থা অবলম্বন করছে। মধুখালীতে শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যা এটি একটি পন্থা। এরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না। এরা মানুষের লাশ ও রক্তপাতের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে ভালবাসে। গোটা জাতিকে একটি গোরস্থান বানানোর প্রক্রিয়ায় তারা লিপ্ত থাকে। আজ লাশ হচ্ছে জীবন্ত মানুষ। তার একটি ঘটনা মধুখালীতে। এগুলো পরিকল্পিত নাশকতার এক একটা নাটক, প্রহসন সরকারের পক্ষ থেকে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। সরকার তার বহুমুখী ব্যর্থতা ঢাকতেই একের পর এগুলো করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভিতর যেন বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি তার নিজেরাই বলতে পারবো না। শুধু ব্যাংক থেকে ১২০০০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার বক্তব্য না এটা সিডিপির বক্তব্য। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারি কারা এরা সবাই ক্ষমতাসীনের আত্মীয়-স্বজন, কাছের লোক।

রিজার্ভ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, এখন তলানিতে রিজার্ভ। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার যাবে। রিজার্ভ তো তলানিতেই।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, এক ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণ নারীর মুখে লিপস্টিক দিলে যা হয়, এ সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে সেই ধরনের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকতার দেশের বাইরে কানাডা, মালেশিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কি কথা বলছেন। আপনাদের কাছে লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বৃত্তের মালিক হয়েছেন দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঘটনা তো নিশ্চয়ই ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকা লিখলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্ট্রেটমেন্ট দিলো, কারণ তারা সরকারের চাকরি করেন। সরকার যা বলবে তাদেরকে তাই শুনতে হবে। কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে, সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে? কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। এটার তো দৃষ্টান্ত আছে, কয়েক বছর আগে কয়েক মিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়েছে, তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিপোর্ট দিতে পারেনি। সেজন্য ঢুকতে না দেওয়ার মধ্যেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। ওবায়দুল কাদেরের সাহেব আপনি আর কতদিন লুকিয়ে রাখবেন। আপনার কথায় তো, দানব সরকারের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এমন প্রশ্ন ছুঁড়েন রিজভী।

শিক্ষা, সামাজিকতা সব ধ্বংস করে ফেলছে সরকার এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্রুত বেশি পাস দেখানো এটি রাজনৈতিক কারণে করছে সরকার প্রধান। ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এ কাজ করছে না।

পাড়া মহল্লায় কিশোর অপরাধ বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। স্কুলের টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছিল। সেজন্য শ্রমিকরা সেখানে ছিলেন। সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিকের প্রাণ যায়। তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয় এ অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, মো. খন্দকার মাসিকুর রহমান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।