দূরপরবাস থেকে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে দেখছি

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১০:৪৭ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
রহমান মৃধা

আমি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে খুব কাছ থেকে দেখিনি। দেখিনি তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম, অনিশ্চয়তা, আশা আর হতাশার ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলা জীবন। কিন্তু দূরপরবাস থেকে আমি একজনকে দেখছি। তার নাম হাসনাত আব্দুল্লাহ।

কে এই হাসনাত আব্দুল্লাহ
কী তার পরিচয়
কী তার অবদান
কী করতে চায় সে
আমাদের প্রত্যাশাই বা কী তার থেকে
আর আমরা কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারি

এই প্রশ্নগুলো আজ শুধু আমার নয়। এই প্রশ্নগুলো বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষের।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা বারবার দেখেছি ভোটের আগে দুর্নীতিবাজ নেতারা টাকা নিয়ে আসে ভোট কিনতে। মানুষের দারিদ্র্যকে তারা অস্ত্র বানায়। ভোট সেখানে অধিকার নয়, লেনদেনের পণ্য হয়ে ওঠে।

কিন্তু হাসনাতের ক্ষেত্রে আমি দেখছি একেবারে উল্টো চিত্র। এখানে মানুষ তাকে টাকা দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে? যেন সে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারে। যেন সে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে। মানুষের মনের সঙ্গে মিতালি করার সুযোগ পায়। আমাদের রাজনীতিতে এই দৃশ্য নতুন, প্রায় অচেনা।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। ছাত্রজীবনে সে সামনে থেকেই আন্দোলনে ছিল। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে নয়। আজ সে এনসিপির উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের সাংগঠনিক দায়িত্বে যুক্ত। গ্রামীণ মানুষ, শ্রমজীবী পরিবার আর বঞ্চিত তরুণ সমাজকে রাজনীতির কেন্দ্রে আনার চেষ্টায় সে কাজ করছে।

হাসনাত যখন তার বাবার পরিচয় দেয়, তখন সে শুধু ব্যক্তিগত পরিচয় তুলে ধরে না। তার বাবা বাংলাদেশের একজন সাধারণ রাজমিস্ত্রি। সারাজীবন ইট বালি সিমেন্ট বয়ে যিনি ঘর বানিয়েছেন। সেই পরিশ্রমী মানুষের গর্বিত সন্তান হাসনাত। এই পরিচয় সে লুকায় না। এটাকেই সে নিজের শক্তি বলে মনে করে। যেন সে একা নয়, সে সারা বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের পরিচয় বহন করছে।

আমরা বহুদিন ধরে কিছু পরিচয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা।
আমি প্রেসিডেন্ট জিয়ার স্ত্রী।
আমি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক জিয়া।
এই পরিচয়গুলো এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে মনে হতো দেশটা শুধু তাদের বাবাদের। রাষ্ট্র যেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি।

আজ আমি দেখছি, না দেশটা হাসনাত আব্দুল্লাহর বাবারও। আর এখানেই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। সে কোনো বিশেষ পরিবারের প্রতিনিধি নয়। সে একজন সাধারণ মানুষের সন্তান হয়ে সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলার সাহস দেখাচ্ছে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। তার শিক্ষাজীবন তাকে ভাষা সচেতন করেছে, চিন্তাকে পরিণত করেছে, আর মানুষের কথা বলার দায়িত্ববোধকে দৃঢ় করেছে।

এই বাংলাদেশই তো আমরা দেখতে চেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। যে বাংলাদেশে মানুষ পরিচয়ের ভারে নয়, নাগরিকত্বের মর্যাদায় দাঁড়াবে। দুঃখজনকভাবে সেই বাংলাদেশ আজও সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি।

তাই আজ আমি নিজেকে প্রশ্ন করি।
প্রশ্ন করি জাতিকে।
এইবার কি সেটা সম্ভব হবে
এইবার কি আমরা সত্যিই জনগণের বাংলাদেশ গড়তে পারব
এই প্রশ্নের উত্তর এখন আর শুধু ইতিহাসে নেই।
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে নতুন প্রজন্মের সাহসে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ সেই সাহসের একটি নাম।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, [email protected]

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]