‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার’

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
সংগৃহীত ছবি

প্রথম আলোর নাগরিক সংবাদে লেখা ‘শুক্রবারে কেন ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া নয়?’। লেখাটিতে এসেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়। আর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে নানা সমস্যার কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। তেলের দাম যদি বাড়ে ১০ গুণ, ভাড়া বাড়ে ২০ গুণ। সেই সঙ্গে নানা ছুতোয় আন্দোলনের নামে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা দেশবাসীকে জিম্মি করে রাখে।

ধরতে গেলে একপ্রকার সরকারও জিম্মি তাদের কাছে। সরকার হয়তো জনগণের কথা ভেবেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না ইত্যাদি। আমি দেশের বাইরে থাকি। অনেক কিছু সম্পর্কে আমার সচেতনতা নেই। তবে লেখাটি পড়ে একটি বিষয় জানলাম সেটা হলো- জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময়ে মালিকপক্ষ ও সরকারপক্ষ আলোচনায় বসে। এ সময়ে ছাত্রছাত্রীদের হাফ পাস নেই বলে জানায় মালিকপক্ষ। অতঃপর অনেক ছাত্রছাত্রীর আন্দোলনের মুখে সরকারের অনুরোধের পর হাফ পাস কার্যকর হয়। তবে তা করা হয় সপ্তাহে ৬ দিন। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আমি থাকি সুইডেনে। এখানে অবশ্য বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন যেমন সবাই সরকারকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্সের একটি অংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয়। স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার্থীরা বিনা খরছে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। এসব কিছু সম্ভব কারণ সবাই ট্যাক্স দেয়। সুইডেনে যানবাহনের জন্য স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের মাসিক টিকিট স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া হয় যাতে করে তারা সময় মতো স্কুলে আসতে পারে, তবে শনি ও রোববারে এ সুযোগটা কিন্তু নেই। তখন তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে চলাফেরা করে থাকে।

বলা হয়েছে, দেশটা আজ অনেকাংশেই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে, এ কথাটি সত্য। তবে সব বাঁধাবিঘ্নের মধ্যে যে সরকার এবং যানবহন কর্তৃপক্ষ এমন চমৎকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

আমি যে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই সেটা হলো অধিকাংশ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী জনগণের ট্যাক্সের টাকার গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন কাজে। মূলত এসব গাড়ি শুধুমাত্র সরকারি কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। কিন্তু, সেটা কি দেশে হচ্ছে? ভাবুন প্রতিদিন এসব কর্মচারী তাদের শপিং থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে যে পরিমাণ সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন এবং যে পরিমাণ সরকারের তেল এবং গাড়ির অপচয় করেন সেটা কি কখনও ভেবে দেখা হয়েছে?

আমার এখানে সংসদ সদস্যদের বা জনগণের প্রতিনিধিদের মূলত কোনো সরকারি গাড়ি দেওয়া হয় না (ব্যতিক্রম প্রধানমন্ত্রী)। আমরা যারা সরকারি বা বেসরকারি কাজে গাড়ি পাই সেটা শুধুমাত্র কাজের জন্যই ব্যবহার করে থাকি। ছুটিতে বা উইকেন্ডে কখনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না, তখন আমরা আমাদের নিজ নিজ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে দেশের জনগণের অর্থের অপচয় করার কোনো সুযোগ থাকে না।

এখন ভাবুন দেশের অর্থ কী পরিমাণ দেশে কর্মরত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ব্যয় করছেন? যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারাই কিন্তু সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। কেউ কিন্তু এ বিষয়টি তুলে ধরছে না বা এটা নিয়ে কথা উঠছে না। কারণ কী?

একটি গরিব দেশে যখন তেল আনতে নুনের খবর থাকে না সেখানে এ ধরনের বিলাসিতা তাও গরিবদের ঠকিয়ে? একটি সৃজনশীল শিক্ষিত সমাজে এটা করা কি ঠিক?

তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা যে বিবেকের কথা বলি বা শিক্ষার কথা বলি সেগুলোর সঙ্গে সত্যিকারের সঠিক এবং সুশিক্ষার কোনো মিল নেই। যার ফলে দেশভরা অরাজকতার ঢেউ, সে ঢেউ এত ভয়ঙ্কর যে সাধারণ জনগণ কিছু বললে দিনে দুপুরে সমস্যায় পড়বে।

আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার। বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। হায়দার হোসেনের এই গানটি বাংলাদেশের সবার মনের কথা হওয়া উচিত। তাহলে অনেক দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে দেশ থেকে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]