এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

জাফিরাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে! অসহ্য লাগে ইদানিং। কথা শুনলেই মাথায় রক্ত উঠে যায়। কবে যে কখন কি করে বসি, তাই বিপদ এড়াতে আমি বাসায় কম কথা বলি এখন।

ওহ, এটা আপনার জিপি জানেন?

বিজ্ঞাপন

জ্বি, উনিই তো আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।

আচ্ছা কখনো আত্মহত্যা করতে বা মরে যেতে ইচ্ছে করে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি অনিচ্ছুক, কেন?

এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর জানা আমার জন্য জরুরি। আমি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি। প্রয়োজনে আপনাকে ক্লিনিকাল রেফারাল লেটার দিতে পারি। আপনি কিছু মেডিসিন নিয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া আপনার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।

সিফাত বললো, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি অনিচ্ছুক বা নিউট্রাল রেখেছি কারণ আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি বা এখন যেই সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছি সেটা নিতে না পারলে আমার আসলে মানসিক মৃত্যু ঘটে যাবে কিন্তু আমি শারীরিকভাবে পৃথিবীতে হয়তো আরও কিছুদিন বেঁচে থাকবো।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো নয় কি? তখন হয়তো মরে যেতেই ইচ্ছে করবে। আর যদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে হয়তো একটা ক্ষীণ আশার আলো আছে।

আচ্ছা, বুঝলাম। আপনার জেনারেল প্র্যাকটিসিয়ানের (জিপির) নম্বর আছে আপনার ফাইলে, আপনি অনুমতি দিলে আমি ওনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।

অবশ্যই, কথা বলবেন। কোনো সমস্যা নেই।

বিজ্ঞাপন

আপনার জিপি হয়তো আপনাকে দুটো মেডিসিন প্রেসক্রাইব করবেন। আপনি সেগুলোর নিয়মিত করবেন প্লিজ। সেলফ হার্ম মনের মাঝে আসলে ইমার্জেন্সি 000 কল করবেন সঙ্গে সঙ্গে বা 1800 Respect এ কল করবেন। মনে রাখবেন আপনার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে।

আমি খুবই দুঃখিত আপনার জন্য। আপনি যদি জীবনে একজন সেনসিবল জীবনসঙ্গী পেতেন তাহলে আজকে নীলাঞ্জনাকে ভুলে যেতেন। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো সেটা ঘটেনি তাই আপনার মনের অবচেতনে নীলাঞ্জনা রয়ে গেছেন। নীলাঞ্জনার সঙ্গে দেখা হলে, প্রেম বা বিয়ে হলে হয়তো তাকে নিয়ে এতটা অবসেশন থাকতো না।

আপনি এখন আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

জাফিরার থেকে...

জ্বি...

যদিও এটা আপনাদের দুজনের সমস্যা এবং আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তবুও বলছি আপনি কি আপনাদের দুই ফ্যামিলির কারও সঙ্গে কথা বলতে চান এই সিদ্ধান্তের আগে?

বিজ্ঞাপন

নাহ, বলতে চাই না। কোনো ফ্যামিলির সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি, জাফিরার সাথে হয়েছে, সে একটা অ্যাডাল্ট মেয়ে, আমার চেয়ে মাত্র তিন বছরের ছোট। আমি তাকে বহুবার বুঝিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি।

দুই ফ্যামিলির কেউ আমার সমস্যা বুঝতে পারেনি। তিন বছর আগে খুবই ঝামেলা হয়েছিল। তখন বলেছিলাম জাফিরার বাবাকে, উনি বললেন এই নিয়েই তো চোখ-কান বুজে সংসার করলাম পুরো জীবন, এখন তুমিও কাটাও, কি আর করবা।

দেখুন প্রতিটা মানুষের ধৈর্য্য চাওয়া পাওয়া, স্বপ্ন এবং ইচ্ছেশক্তি আলাদা। একজনকে দিয়ে আর একজনকে বিচার করা কি ঠিক? উনি সারাজীবন একটা ওয়ার্থলেস জীবন কাটিয়েছেন তাই বলে আমি কাটাবো কেন? আমি আর উনি এক মানুষ না।

বিজ্ঞাপন

সমস্যার কথা আমার মা কেও বলেছিলাম। বলে বউমাকে বুঝিয়ে বল, দুইটা বাচ্চা আছে, ইত্যাদি।

পরে জাফিরাকে বললাম, তুমি তোমার মা আর বোনের সঙ্গে কথা বলা ছয়টা মাস বন্ধ রাখবা প্লিজ, আমার একটা কথা অন্তত শোনো। আমি শান্তি চাই।

সে এমন একটা অবস্থা করলো, আমার শাশুড়ি, তার বড় মেয়ে, আমার বড় বোন সবাই আমাকে ফোন করে ঝাড়ি। তার বড় বোন বললো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবীরা গুনাহ, জাফিরা বললো আমি নিমকহারাম, আমার বাপ মা ধর্ম শিক্ষা দেয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার বড় বোন বলে, নিজের বউকে কন্ট্রোল করতে পারিস না, তু্ই কেমন ছেলে?

মাঝে পড়ে আমার মা-বাবা বিব্রত, আমি ব্যথিত মর্মাহত।

আচ্ছা আপনি বলুন আমার সঙ্গে জাফিরা যেগুলো করে যাচ্ছে প্রতিদিন সেগুলো কোন ধর্মে আছে? প্রতিনিয়ত যে আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমি তার হাসব্যান্ড, কারো নিজের সংসারের চেয়ে কি আত্মীয় বড় নাকি? যেই মেয়ের এই বোধবুদ্ধি নাই, তাকে আমি কি বোঝাবো?

আমাকে বলে তার জীবনে তার মা-বোন ছিল, আছে, থাকবে। আমি থাকতে চাইলে থাকি না চাইলে না থাকি! আমি একটা জানোয়ার তাই এগুলো বলছি, তার কপাল খারাপ তাই আমার সঙ্গে বিয়ে হইছে, তার বাবা কত ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি গত নয় বছরেও তার আপন হতে পারিনি, হয়তো এটা আমারও ব্যর্থতা, আমি ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে সরে যেতে চাই।

আসলে কখনো মেয়ের মা বোন, কখনো ছেলের মা বোন এতো অযাচিত ছেলে মেয়ের বা ভাই বোনের সংসারে হস্তক্ষেপ করেন যে তারা নিজেরাও বুঝতে পারেন না কতখানি ক্ষতি হয়ে যায় প্ৰিয়জনের।

এখন বাচ্চাদের ব্যবস্থা কীভাবে হবে ভেবেছেন?

জাফিরা যেভাবে চায়, তাই হবে। আমি নিজেই বাঁচতে পারছি না, বাচ্চাদের বাঁচাবো কোথা থেকে? আগে তো নিজের বাঁচতে হবে। রোজ ঝগড়া, চেঁচামেচি তো বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়। এর চেয়ে বাচ্চারা জাফিরার সঙ্গে থাকে থাক, আমি খরচ দেবো, আমার সঙ্গে থাকতে চাইলে থাক, কোনো অসুবিধা নেই। আবার দুজনের কাছেই ভাগাভাগি করে থাকতে চাইলে সেটাও ওকে। বাচ্চারা যা চায়।

আচ্ছা, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে অস্ট্রেলিয়ায় মিনিমাম এক বছর সেপারেশনে থাকতে হয় ডিভোর্সে যাওয়ার আগে।

জ্বি, আমি এখনই ডিভোর্স এ যাচ্ছি না। আমি এই এক বছর আলাদা থাকতে চাই। দেখতে চাই একা থেকে জাফিরা বদলায় কিনা, আমার জন্য তার কোনো ভালোবাসা জন্মায় কিনা।

এই এক বছরে আমি নিজেকেও সময় দিতে চাই। আমার এখন জাফিরাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে, তেমন কিছু হয়ে গেলে তো আমার বাচ্চা দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই নিজেও আলাদা থেকে বুঝতে চাই জাফিরার জন্য আমার মায়া ফেরত আসে কিনা। আর কোনো কিছুই চেঞ্জ না হলে এক বছর পর অন্য কিছু চিন্তা করবো, তবে এখন না।

আচ্ছা, আপনি নেক্সট উইক এ জিপির কাছে যাবেন, সেপারেশন ফর্ম অনলাইনে পাবেন। সার্ভিস অস্ট্রেলিয়া ওয়েবসাইটে। এখন দেখা যাক আপনার সিদ্ধান্তে সামনে উনি চেঞ্জ হয় কিনা।

কারণ যে উত্তরগুলো আপনি লিখেছেন তাতে অবশ্যই আপনার জীবনযাপনে চেঞ্জ আসাটা জরুরি নয়তো যেকোনো ধরনের বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আছে।

জ্বি, সেটা আমিও বুঝেছি, তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমি জীবনে জীবনসঙ্গী চেয়েছিলাম,যার সাথে হাসি ঠাট্টা খুনসুঁটি করা যায়, নদীর ধারে বসা যায়, একসাথে সিনেমা দেখা বা গান শোনা যায়, আহ্লাদ, আবদার করা যায়। মধ্যেরাতে লং ড্রাইভে যাওয়া যায়।

কিন্তু কি যে পেলাম! মা, বোন তো আমার ঘরেও আছে। কিন্তু যেটা ছিল না সেটা না পাওয়াই থেকে গেছে।

পারিজাত রহমান দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন, বললেন জ্বি, প্রয়োজন হলে আপনি আবার আসবেন আমার এখানে, যদি মনে করেন কথা বলে মনের ভেতর ভালো বোধ করেন। আমি অবশ্যই আপনার কথা শুনবো।

আপনার জীবন শান্তিময় হোক।

আপনাকে শেষ একটা প্রশ্ন করি?

জ্বি, বলুন

আপনার সঙ্গে বর্তমানে কারো প্রেম আছে বা কাউকে ভালোলাগে, ভালোবাসেন এমন কেউ?

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

হ্যাঁ আছে তো, নীলাঞ্জনার সঙ্গে। শুধু তাকে খুঁজে পাই না কোথাও।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com