শিষ্টাচার

মেসেঞ্জারে সবুজবাতি জ্বললেই নক করা ঠিক না

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শেখার কোনো সময়সীমা নেই। আগ্রহ থাকলে যেকোনো বয়সেই যেকোনো কিছু শেখা যায়, তাহলে শিষ্টাচার শেখা যাবে না কেন?

আসুন আমরা কিছু শিষ্টাচার শিখি...কারণ ইদানিং চারপাশে শিষ্টাচারের খুব অভাব চোখে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

আপনি মানুষ হিসেবে কেমন সেটা আপনার চেহারা দেখে বা শিক্ষাগত যোগ্যতা মেপে বের করা যায় না, আপনি মানুষ হিসেবে কেমন সেটা বোঝা যায় আপনার আচরণে, কথায় এবং ইদানিং ফেসবুক কমেন্টসে...

প্রতিটা মানুষ আচার ব্যবহার শেখা আরম্ভ করে নিজ নিজ পরিবার থেকে। কিন্তু সেখানেই শেখা শেষ হয়ে যায় না কিন্তু শুরু কেবল। এরপর শেখার বিষয়টা চলতে থাকে একে একে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং সমাজ থেকে। আপনার ব্যক্তিত্ব ও ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে আপনি বহিঃজগৎ থেকে কতটা শিখবেন। আপনি যদি মনে করেন নিজের পরিবার থেকে যা শিখেছেন সেটাই যথেষ্ট, আর কিছু শেখার দরকার নেই! তাহলে বিরাট সমস্যা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আপনি একটা ভ্রান্ত ধারণার ভেতরে আছেন এবং আশপাশের মানুষের মনে সর্বদা বিরক্তির উদ্রেক করছেন কিন্তু অন্যরা যে বিরক্ত হচ্ছে সেটা হয়তো আপনি বুঝতেই পারছেন না।

পোশাক আশাক যেমন আপনার ব্যক্তিগত রুচি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মানসিক স্থিরতার প্রকাশ ঘটায় ঠিক তেমনি ব্যবহার আপনার মনের অভিপ্রায় এবং দৃঢ়তা, স্থূলতা, ক্ষুদ্রতা অথবা উদারতার প্রকাশ ঘটায়...

সামাজিক বা অফিসিয়াল অনুষ্ঠান, পালা পার্বনে আমাদের অনেকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হয় চেনা-অচেনা, কম চেনা বেশি চেনা এ রকম... অথবা প্রতিবেশি বা একটু কাছে দূরের আত্মীয়। আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অতি সাধারণ কিছু আচরণগত শিষ্টাচার:

*কারো মোবাইলে কোনো ছবি বা ভিডিও দেখতে দিলে শুধুমাত্র সেই ছবি বা ভিডিও দেখে মোবাইলটি ফিরিয়ে দিন, অনুমতি ছাড়া আগের বা পরের ছবিতে স্লাইড করে যাবেন না, এটা খুবই অভদ্রতা।

*কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে খাবার সার্ভ না করা পর্যন্ত চুপচাপ বসে থাকুন, কোনোভাবেই বলবেন না, এখনো খাবার দিচ্ছে না কেন বা এত দেরি কেন এবং সার্ভ করা খাবারের দোষক্রটি খুঁজবেন না, ভালো না লাগলে খাবেন না। মনে রাখবেন দাওয়াত দিয়ে কেউ ইচ্ছে করে খারাপ রাঁধে না।

বিজ্ঞাপন

*কম পরিচিত কাউকে বাবা-শ্বশুর, মা শাশুড়ি হাসব্যান্ড-ওয়াইফ, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে কে কি করেন জিজ্ঞাসা করবেন না, একদমই অনুচিত।

*কাউকে সে কি চাকরি করেন, কত বেতন পায় কখনোই জিজ্ঞাসা করা উচিত না, সেটা যেই হোক, বলার মতো সম্পর্ক হলে তিনি নিজে থেকেই বলবেন।

*অনেক বেশি মানুষের মাঝে বেশ উচ্চস্বরে কথা বলা বা শুধু একাই কথা বলে যাওয়া ঠিক না, সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত, বেশি কথা না বলা বাঞ্চনীয়।

বিজ্ঞাপন

*খুবই ফরমাল কোনো সম্পর্কে অনুগ্রহ করে কাউকে বা কারো বাচ্চার জন্মদিন সালসহ জিজ্ঞাসা করবেন না, জন্মতারিখ মানুষের অন্যতম প্রধান আইডি, অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো কমিয়ে ফেলুন।

*অন্যের বাচ্চাদের তোমাদের কে বেশি আদর করে আব্বু না আম্মু? বা কাকে বেশি ভালো লাগে আব্বু না আম্মু এ ধরনের তুলনা করা খুবই অশোভন আচরণ।

*অনেকের সামনে মোবাইল বাজলে মোবাইল নিয়ে উঠে যেয়ে কথা বলে আসুন, অথবা এতটা আস্তে যেন রুমের ভেতরের কারো কানে না যায়, কোনোভাবেই সবার সামনে লাউড স্পিকারে কথা বলবেন না, খুবই শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ, প্রয়োজন হলে হেডফোন ব্যাবহার করুন।

বিজ্ঞাপন

*বাইরের মানুষের সামনের ঘরের মানুষ বা বাচ্চাদের বকাঝকা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করবেন না, এতে আপনি নিজেই ছোট হয়ে যান অন্যরা নয়।

*অন্যের ভালো দেখে সহ্য না হলে দেখাশোনা, বলা অর্থাৎ চোখ কান মুখ বন্ধ রাখুন অযথা খোঁচা মেরে কথা বলে অন্যের মনে কষ্ট দেবেন না। ভালো কথা বলতে ইচ্ছে না করলে চুপ থাকুন, অযথা বাড়তি কথা বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

*মুরুব্বিদের সম্মান করুন, সম্মান করা সম্ভব না হলে (মুরুব্বি মানেই যেসব সময় সঠিক হবেন তা নয়) দূরত্ব বাড়িয়ে দিন বা এড়িয়ে চলুন। বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলা ভালো যদি তারা খুব বেশি ক্ষতিকর না হন।

বিজ্ঞাপন

*অফিসে মোবাইল সাইলেন্ট রাখুন, কলিগদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না, কলিগ আপনার প্রাণের বন্ধু না।

*প্রতিবেশী ও অল্প পরিচিত মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ বিষয়ে কথা বলুন যেমন আবহাওয়া, পরিবেশ, রাজনীতি ইত্যাদি। তাদের ব্যক্তিগত জীবনে আগ্রহ বা উপদেশ দিতে যাবেন না।

*রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে খাবারের টেবিলের আচার-আচরণ নিয়মনীতি মেনে চলুন, উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

আজকাল যেহেতু সবাই ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং অনেকেই আছেন যা মন চায় তাই কমেন্টস করেন আগে পিছে চিন্তা না করে বা এক লাইন বেশি বুঝে একটু বেশি চতুরতা প্রদর্শন করে...তাদের বলছি, আপনারা চালাক ঠিক আছে, কিন্তু আপনাদের চেয়েও স্মার্ট মানুষ দুনিয়ায় আছেন, এটা মাথায় রাখবেন।

ফেসবুক ব্যবহারে কিছু অতি সাধারণ শিষ্টাচার:

#খুব কাছের এবং অনেক দিনের পুরোনো বন্ধুরা বেশিরভাগ সময় ফেসবুকে বন্ধুদের পোস্টে মজা করে অনেক রকমের কমেন্টস করেন, তা তারা করতেই পারেন। সেটা দেখে খুব অল্প পরিচিত আপনার বাকবাকুম হয়ে সেখানে কমেন্টস করার ১% প্রয়োজনও নেই।

#অন্য কারো স্ট্যাটাস বা বাণী বা ছবি শেয়ার করলে তাদের নাম উল্লেখ করুন, এতে আপনি নিজেই বড় হবেন। কেউ বুঝবে না ভেবে বেশি চালাকি করে নিজের নামে চালাবেন না, এটা খুবই জঘন্য, কুৎসিত এবং হীন একটা কাজ। মনে রাখবেন পৃথিবী গোল।

#স্ট্যাটাস দেওয়ার সময় নিজের ভাষার দিকে লক্ষ্য রাখুন, হয় বাংলা নয়তো ইংলিশ নয়তো অন্য যেকোনো ভাষায় লিখুন কিন্তু এক লাইন বাংলা, পরের লাইন বাংলিশ, আধা লাইন ইংরেজি এমন জগাখিচুড়ি মার্কা স্ট্যাটাস লিখবেন না, এটা খুবই দৃষ্টিকটূ।

#কোনোভাবেই কারো ফেসবুক স্ট্যাটাসের কমেন্টসে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবেন না, স্ট্যাটাসদাতা আপনার পরিচিত হলে ইনবক্সে জিজ্ঞাসা করুন।

#কম পরিচিতদের ফেসবুক স্ট্যাটাস এ কমেন্টস করার আগে নিজের সৌজন্যবোধের পরিচয় দিন, গদগদ হয়ে ঠাট্টা তামাশা বা উপদেশবাণী দিতে যাবেন না।

#সবার সব স্ট্যাটাস পছন্দ নাও হতে পারে, তেমনটা হলে এড়িয়ে যান, উল্টোপালটা রিএক্ট বা কমেন্টস করা থেকে বিরত থাকুন।

#পূর্ব পরিচিত বা চেনা জানা না থাকলে অযথা কাউকে মেসেঞ্জারে গ্রিটিংস বা লিঙ্ক শেয়ার করতে যাবেন না, এতে আপনার নিজের ব্যক্তিত্বের দুর্বল দিক প্রকাশ পায়।

#কারো মেসেঞ্জার বা ফেসবুকে সবুজবাতি জ্বলছে মানে এই নয় যে সে আপনার সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। সে কোনো জরুরি কলে থাকতেই পারে বা কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে না করতে পারে, সবুজবাতি দেখেছেন বলেই ফোন দিয়েছেন বা মেসেজ দিয়েছেন এ ধরনের খোঁড়া যুক্তি দেবেন না।

#ভিন্ন দেশে থাকলে সেই ফেসবুক ফ্রেন্ডের সময়ের প্রতি সন্মান দেখাতে শিখুন, নিজে ফ্রি বলেই যখন তখন নক করবেন না।

#ফেসবুকে সেলিব্রিটি বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ছবি বা স্ট্যাটাস এ নোংরা কমেন্টস করা থেকে বিরত থাকুন, দিনশেষে তারাও মানুষ আর নিজের ভেতরের কুৎসিত রূপ জনসমুক্ষে যত কম দেখবেন ততই মঙ্গল।

#অপরিচিতদের ওয়ালে বা কমেন্টস এ পারলে ভালো কথা বা প্রশংসা লিখুন নয়তো এড়িয়ে যান। মনে রাখবেন আপনার কমেন্টস আপনাকেই প্রতিনিধিত্ব করে।

#পরিচিতদের স্ট্যাটাসে গঠনমূলক সমালোচনা, আলোচনা, দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন তবে নোংরামি বা অশ্লীলতা নয়। এ দুটো কখনোই এক জিনিস নয়।

ইদানিং প্রচুর মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন কিন্তু বেঠিক আচরণে। বছরের শেষে এতো এতো উপদেশ দিলাম যেন নতুন বছরে এগুলোর সুন্দর প্রকাশ দেখি। বেশি কিছু আশা করা ভুল তবে ভালো কিছু আশা করা দোষের না কিছুতেই।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

ধন্যবাদ সবাইকে...

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com