পর্তুগাল সম্পর্কে অজানা তথ্য

সহজশর্তে অভিবাসন সুবিধা, ফুটবল খেলা, ঐতিহ্যবাহী খাবার, সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতত্ত্ব পাহাড় লীলাভূমিসহ বিশেষ বিশেষ কারণে সম্প্রতি পর্তুগাল বিশ্ব দরবারে আলোচনার তুঙ্গে অবস্থান করছে। এছাড়াও পর্তুগাল সম্পর্কে রয়েছে অনেক অজানা তথ্য, যা জানলে রীতিমতো যে কেউ অবাক হবেন।

পর্তুগালের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

পর্তুগাল, সরকারি বা অফিসিয়াল নাম ‘পর্তুগিজ রিপাবলিক’। ইউরোপের সর্ব দক্ষিণের শেষের একটি দেশ। অবস্থানগত দিক থেকে দেশটি আটলান্টিক মহাসাগরের পাড় ঘেসে অবস্থিত, যার জন্য দেশটিকে ‘সাগরকন্যা’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। আইবেরিয়ান উপদ্বীপ তথা পর্তুগালের সর্বমোট আয়তন ৯২ হাজার ২১২ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজারের মতো। অফিসিয়াল ভাষা পর্তুগিজ। রাজধানী লিসবন ও প্রচলিত মুদ্রার নাম ‘ইউরো’। পার্শ্ববর্তী দেশ স্পেন।

প্রাচীন ও অপরিবর্তিত সীমানা

পর্তুগাল ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন একটি দেশ যার সীমানা ১২৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অনেকটাই অপরিবর্তিত।পর্তুগালের দীর্ঘতম চলমান সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল (১৪১৫ সালে সিউটা দখল থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও হস্তান্তর করা পর্যন্ত)। পর্তুগিজ ভাষাভাষী লোকজনদের বিস্তৃতি ব্রাজিল থেকে সুদূর চীন পর্যন্ত রয়েছে। ইংল্যান্ড ও পর্তুগালের মধ্যে জোট ১৩৮৬ সালে উইন্ডসর চুক্তি দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিলো যা এখনও বিশ্বের কার্যকরী একটি জোট।

সর্বাধিক ব্যবহৃত কথ্য ভাষা পর্তুগিজ

পর্তুগিজ ভাষা বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত কথ্য ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। পর্তুগালের স্থানীয় ১ কোটি মানুষ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ সর্বমোট ২৩ কোটি মানুষ পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলে। প্রকৃতপক্ষে, পর্তুগিজ ৯টি দেশের সরকারি ভাষা ও আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে পর্তুগিজের স্থান ৬ষ্ঠ।

বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ

সম্প্রতি পর্তুগাল বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ স্থাপন করে বিশ্ব দরবারে নতুন করে আবারও জনপ্রিয়তার ঝড় তোলে। ঝুলন্ত ব্রিজটির নাম ৫১৬ আরুকা। ব্রিজটি ১৬৯২ ফুট দীর্ঘ (৫১৬ মিটার) ও স্থল থেকে ৫৭৫ ফুট (১৭৫ মিটার) উপরে অবস্থিত। এটি পাইভা নদীর ২ পাশকে সংযোগ স্থাপন করে। ব্রিজটির মধ্যে দাঁড়িয়ে পাইভা গর্জে এবং আগুয়িরস জলপ্রপাতের দর্শনীয় দৃশ্যগুলো উপভোগ করা যায়। ব্রিজটি পোর্তো শহর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দূরে আওরোকা জিওপার্কে অবস্থিত। ২০২১ সালের মে মাস থেকে অর্থাৎ চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রিজটিকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বিশ্বের কর্ক উৎপাদনের অর্ধেকই পর্তুগাল

বিশ্বের কর্ক উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশ ভাগই পর্তুগালে উৎপাদন হয়। বিশ্বের সেরা কর্ক পর্তুগালের আলগারভ থেকে সংগ্রহ করা হয়। পর্তুগিজ কর্কগুলো এয়ারবাস, নাসা, মোত চ্যানডন ও রোলস রইসের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড দ্বারা ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশনে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা দ্বারা ব্যবহৃত মহাকাশযানটিতে পর্তুগিজ কর্ক ব্যবহার করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডের আইন বাতিল

অগ্রণী আইন। পর্তুগালকে কিছু দিক থেকে বেশ ঐতিহ্যবাহী হিসাবে বিবেচনা করা হলেও, দেশটির অগ্রণী আইন পাস করার ইতিহাস রয়েছে। পর্তুগাল হলো প্রথম দেশ যা মৃত্যুদণ্ডের বিলোপ ঘটাতে আইন প্রণয়ন শুরু করেছিল। মৃত্যুদণ্ড বিলোপের আইন সনদটি ১৮৬৭ সালে অনুমোদিত হয়েছিল। ৩০/২০০০ দ্বারা এই আইনের অধীনে পর্তুগাল প্রথম দেশ হিসেবে বিবেচিত হয় যেখানে ব্যক্তিগত মাদকের অধিকারের জন্য সমস্ত ফৌজদারি শাস্তি বাতিল করেছিলেন। এছাড়া, মাদক ব্যবহারকারীদের কারাগারের সাজা না দিয়ে থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

বৃহত্তম কৃত্রিম আন্ডারওয়াটার পার্ক

ইউরোপের বৃহত্তম কৃত্রিম আন্ডারওয়াটার পার্ক ও রিফটি পর্তুগালের আলগারভ উপকূলে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত। মহাসাগর বেষ্টিত এই আন্ডারওয়াটার পার্ক ও সমুদ্র সৈকতে চারটি অবিচ্ছিন্ন পর্তুগিজ নৌবাহিনী জাহাজ রয়েছে। এটি একটি বিকাশমান বা স্বচ্ছ ইকো-সিস্টেমের কেন্দ্র। বিশ্বের সকল সমুদ্র ডাইভারদের জন্য প্রধান আকর্ষণ।

এটিএম সিস্টেম ‘মাল্টিব্যাঙ্কো’

পর্তুগালের এটিএম সিস্টেম ‘মাল্টিব্যাঙ্কো’ বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এটিএম সিস্টেম। স্থানীয় মাল্টিব্যাঙ্কোতে আপনার দৈনন্দিন সবধরনের বিল পরিশোধ করতে পারবেন। বর্তমানে এটিএম সিস্টেমের মাধ্যমে কনসার্টের টিকিট কেনা, দাতব্য সংস্থাগুলোতে দান করা ও মোবাইল ফোনে ক্রেডিট রিচার্জ করাসহ মোট ৬০টিরও বেশি অপারেশন সম্ভব।

‘গ্রিন লেন টোল পে সিস্টেম’

প্রকৃতপক্ষে, পর্তুগাল তার আশ্চর্যজনক উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যের চিত্রটিকে টিকিয়ে রেখেছে। ‘গ্রিন লেন টোল পে সিস্টেম’ একটি পর্তুগিজ উদ্ভাবন, যেমন প্রি-পেইড মোবাইল ফোন কার্ড। পর্তুগাল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্ভাবনী পারফরম্যান্স বৃদ্ধির দ্রুততম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ২০১৬ সালে লিসবন ওয়েব সামিটের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালে পর্তুগাল ‘সিটিএ ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেশন স্কোরকার্ড’ দ্বারা বিশ্বের ১৩টি উদ্ভাবনী দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে স্থান পেয়েছিল। লিসবন ও পোর্তো উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু এবং অ্যালগারভে রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তি কেন্দ্র।

বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন বইয়ের দোকান

বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন বইয়ের দোকান লিসবনের বারট্রেন্ডে অবস্থিত যারা ১৭৩২ সাল থেকে তাদের বই বিক্রির ব্যবসা চলমান। ১৭৫৫ সালে একটি ভূমিকম্পে যদিও এর ভিত্তিটির কিছু অংশ ভেঙে যায় কিন্তু তা আজও সুরক্ষিত। তাছাড়া দেশটির পোর্তো শহরে ‘লেলো বুকস্টোর’ নামে পুরাতন আরেকটি বইয়ের দোকান রয়েছে যা বিশ্বের জনপ্রিয় ও পুরাতন বইয়ের দোকানের তালিকায় ৩ নম্বরে অবস্থান করছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র তরঙ্গ

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

টোগোগ্রাফি ও ভৌগলিক কারণে বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম। সেরা সমুদ্র তরঙ্গ বা শ্রুত পর্তুগালের উপকূল নাজারে পাওয়া যাবে, দানব তরঙ্গগুলো এখানে উপকূলরেখায় ব্যাটিং করা অস্বাভাবিক কিছু নয়, যা সারা বিশ্ব থেকে সার্ফারদের আকর্ষণ করে। গ্যারেট ম্যাকনামারা ২০১১ সালে একটি ২৩.৭৭ মি. (৭৭ ফুট) তরঙ্গ ও ২০১৭ সালে রদ্রিগো কক্সা রোডে ২৪.৩৭ মি. (৮০ ফুট) তরঙ্গ নিয়ে চড়ে এখানে একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন।

এমআরএম/জিকেএস