১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে গ্রিস, সংসদে বিল পাস

মতিউর রহমান মুন্না
মতিউর রহমান মুন্না মতিউর রহমান মুন্না , গ্রিস প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৪৬ এএম, ২৩ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশ থেকে কৃষি খাতে ৫ বছরের জন্য কর্মী নেওয়ার সমঝোতা চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে গ্রিসের সংসদ। এ চুক্তির আওতায় দেশটিতে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেওয়া হবে। প্রতি বছর ৪ হাজার কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় গ্রিস যাবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বিল পাসের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়কমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি।

সংসদে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ১ লাখ ৪৪ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন। তাই আমরা বৈধভাবে মৌসুমি ভিসা প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্রমিক আনবো।

jagonews24

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৯ মাস কাজ ও ৩ মাস দেশে কাটানোর শর্তে ৫ বছরের মৌসুমি ভিসায় বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতি বছর ৪ হাজার করে মোট ১৫ হাজার কৃষিশ্রমিক আনা হবে। বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও পশুপালনের জন্য মৌসুমি ভিসায় এসব শ্রমিক নিয়োগ হবে।

মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে কৃষি খাতের মালিকরা চাহিদা অনুসারে একাধিক শ্রমিক আনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রত্যেক কর্মী একজন মালিকের আওতায় কাজের চুক্তি অনুযায়ী নয়াদিল্লির গ্রিক দূতাবাস থেকে ৫ বছরের ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট মালিকের অধীনেই তিনি শুধুমাত্র কাজ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মীদের প্রতি বছর ৯ মাস কাজ করার পরেই পরবর্তী ৩ মাস বাধ্যতামূলক বাংলাদেশে যেতে হবে। যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন। যদি কেউ নয় মাস কাজ করে পরবর্তী তিন মাস দেশে না যান তাহলে তাদের ভিসা পরবর্তী বছরের জন্য নবায়ন হবে না।

jagonews24

এছাড়াও এ ভিসায় সেনজেনভুক্ত দেশ গ্রিসে আসার পরও তারা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন না। এমনকি গ্রিসেও আজীবন থাকার জন্য তাদের কোনো স্থায়ী বৈধতা দেওয়া হবে না। কোনো কর্মীর দেশ থেকে নিজ পরিবার আনার কোনো ধরনের সুযোগ থাকছে না এই ভিসায়। ৫ বছর শেষে তাদের গ্রিস থেকে চলে যেতে হবে। তবে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট মালিকের অধীনে আবারো ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বলে জানান নোতিস মিতারাচি।

সংসদে তিনি আরও বলেন, এখানে আসা কর্মীরা গ্রিক শ্রম আইন অনুসারে অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীকে ৫ বছরের ভিসা প্রদান করে একই আইনে বৈধতার আওতায় আনা হবে বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হয়ে কৃষিশ্রমিক হিসেবে বছরে নয় মাস কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং নিজ দেশে তিন মাস বাধ্যতামূলক যাতায়াতের জন্য সুযোগও থাকবে এতে। তবে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং কারা এই বৈধতার আওতায় আসবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখনো জানা যায়নি।

jagonews24

মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি বলেন, এ মুহূর্তে গ্রিক অর্থনীতিতে বিপুলসংখ্যক জনবল প্রয়োজন। বিশেষত কৃষি খাত, গৃহস্থালীর কাজ, পর্যটন এবং নির্মাণে খাতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন। মানবসম্পদ নিয়োগ অবশ্যই আইনিভাবে হওয়া উচিত। মানবপাচার চক্র যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে সেক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই সমঝোতা চুক্তিটি বৈধ অভিবাসন পদ্ধতির সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আরও একটি বড় পদক্ষেপ এবং দেশের শ্রমিক সংকটের চাহিদা পূরণ করবে।

গ্রিসে বসবাস করা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত আগাতে এবং বৈধ অভিবাসনের দরজা খুলে দিতে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়কমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। নানা জল্পনা কল্পনার পর দুই দেশের মধ্য হওয়া এই সমঝোতা চুক্তির বিল অবশেষে বৃহস্পতিবার জুলাই গ্রিসের সংসদে পাস হয়েছে।

jagonews24

অভিবাসী আনা ছাড়াও গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে এই চুক্তি বড় ভূমিকা রাখবে বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানান মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি।

এদিকে চুক্তিটি সংসদে অনুমোদন হলেও কোন পক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করা হবে তা এখানো নির্ধারন হয়নি। তবে খুব দ্রুতই গেজেট আকারে প্রকাশ হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়টি দুই দেশ মিলে ঠিক করবে।

এতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না বলে জানা গেছে। আগ্রহী ব্যক্তি যেন কোনোভাবে দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে দু দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে।

ইএ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]