কুয়ালালামপুরে আইটেক্স প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় এটুআই-বাংলাদেশ দল

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে আইটেক্স আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা। বৃহস্পতিবার (১১ মে) কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, সরকারের আইসিটি বিভাগের এটুআই ও বাংলাদেশ দল।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গনের প্রসিদ্ধ আয়োজন আইটেক্স ২০২৩; আইটেক্স অর্থাৎ, ইন্টারন্যাশনাল ইনভেনশন, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সিবিশনের এ বছর ৩৪তম আয়োজন।
প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের উদ্ভাবক, বিনিয়োগকারী, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান, ম্যানুফ্যাকচারকারী, উদ্যোক্তা আর সরবরাহকারীসহ নানান পেশার মানুষের মিলনমেলা বসে এই আইটেক্সকে ঘিরে।
আইটেক্স-এর গত বছরের আয়োজনে বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশ থেকে ৫০০-এরও বেশি ইনোভেশন প্রোজেক্ট আর ৭৫টি দেশ থেকে আগত ৫০০০ এরও বেশি দর্শনার্থী অংশ নিয়েছিল।
বাংলাদেশি বুথে জিসিসিভুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার
এবারের আয়োজনেও সমগ্র ভেনুজুড়েই একই স্বতঃস্ফূর্ততায় দেশি-বিদেশি নানান প্রতিষ্ঠান আর দর্শকদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে এরই মধ্যে। ১১ এবং ১২ মে, এই দুইদিনব্যাপী চলমান এই প্রতিযোগিতায় এবারও অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার আইটেক্স ২০২৩-এর ভেন্যু পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশ দলের পাঁচটি বুথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা করেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশ বুথের প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন।
হাইকমিশনার বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতির খোঁজখবর নেন এবং দলের সফলতা কামনা করেন। তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি প্রজেক্টকে অপার সম্ভাবনাময় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের সরকারের যে অভিযাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, তাতে নতুন নানাবিধ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ভূমিকা অনেক।
আইটেক্সের মতে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই-এর এবারের আইটেক্সে কারিগরি পরামর্শক হিসেবে সম্পৃক্ততা বিজ্ঞানমনষ্ক আগামীর বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান সরকারের স্মার্ট ও দূরদর্শী মনোভাবেরই উদাহরণ।
বাংলাদেশ বুথের প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার
এটুআই বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়নে মূল চালিকাশক্তি এবং বর্তমানে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে কর্মরত। এটুআই অতীতেও ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের আইটেক্সে তার নিজস্ব ইনোভেশন নিয়ে অংশ নিয়েছিল এবং তিনটি গোল্ড ও ছয়টি ব্রোঞ্জ পুরস্কারসহ একটি প্রকল্পের জন্য বিশেষ আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেছিল।
পরে, এটুআই বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তাদের মধ্যে আইটেক্সকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে।
সেই ধারাবাহিকতায়, আইটেক্স ২০২৩ এ অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের কারিগরি পরামর্শকের ভূমিকায় আছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই।
এবারের আইটেক্সে বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি পাঁচটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ অর্থায়নে আইটেক্স ২০২৩-তে প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: আমার পে, বাংলা ট্র্যাক, বাংলা ট্রেডার্স, ইগার্ডিয়ান এবং জাইন্যাক্স। বৃহস্পতি ও শুক্রবার চলমান এই প্রতিযোগিতায় জুরি প্যানেলের মাধ্যমে সব প্রজেক্টের মধ্যে থেকে বিভিন্ন ক্যাটোগরিতে শ্রেষ্ঠ প্রজেক্টগুলোকে স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মানজনক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার এই আসর আইটেক্স ২০২৩ থেকে খুব ভালো কিছু অর্জন নিয়ে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরতে পারবে বলেই এটুআই আশাবাদী।
প্রদর্শনীর ২য় ও সমাপনী দিবসে ১২ মে শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য প্রযুক্তিবিষয়ক প্যানেল আলোচনা ‘টেকটক’-এ অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞ বক্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ হাই কমিশনের সহযোগিতা ও প্রতিনিধিত্ব থাকবে, এ কথা উল্লেখ করে আইটেক্স ২০২৩-এর মূল উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা জানান, হাই কমিশনার।
বাংলাদেশ বুথের প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার
তিনি ঘোষণা দেন, আইটেক্সের প্রতি বছরের আয়োজনেই বাংলাদেশ হাই কমিশন এটুআইয়ের পাশে থাকবে।
এ সময়, হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) এবং দূতালয় প্রধান, ফারহানা আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সেলর (কন্সুলার), জি এম রাসেল রানা এবং প্রথম সচিব (বাণিজ্য), প্রনব কুমার ঘোষ এবং এটুআই-এর কমার্শিয়াল স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান, রেজওয়ানুল হক জামী, এটুআই-এর ডিভাইস ইনোভেশন বিশেষজ্ঞ তৌফিকুর রহমান, একশপ-এর প্রযুক্তি বিভাগের লিড সোহেল রানাসহ স্থানীয় অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এমআরএম/জিকেএস