হোটেল থেকে মসজিদুল হারামের জামাতে অংশগ্রহণ করা যাবে?

হজ ও ওমরাহর সফরে যারা মসজিদুল হারামের আশেপাশে অবস্থিত হোটেলে অবস্থান করেন, তাদের অনেকে মসজিদের মূল জামাতের আওয়াজ শুনে, নিজ নিজ কক্ষে কিংবা হোটেলের নিচতলা থেকে জামাতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশ্ন হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি সহিহ কি না?
এ প্রশ্নের উত্তর হলো, মসজিদুল হারামের জামাতসহ যে কোনো নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ শুদ্ধ হওয়ার একটি মৌলিক শর্ত হলো ইত্তেসাল — অর্থাৎ মূল জামাতের সাথে অংশগ্রহণকারীর সংযোগ থাকা। অংশগ্রহণকারীদের কাতার মসজিদের কাতারের সাথে সংযুক্ত হওয়া। কিন্তু মক্কা টাওয়ার, জমজম টাওয়ার, সাফওয়া টাওয়ার, মসজিদে আবু বকর, মসজিদে ওমর, মিসফালা, হিজরারোড, কবুতর চত্তর এবং আশেপাশের অন্যান্য হোটেলের নিচতলা থেকে জামাতে অংশ নিলে মসজিদুল হারামের জামাতের সঙ্গে ইত্তেসাল বা সংযোগ থাকে না।
ওই জায়গাগুলো হারামের সীমার ভেতরে হলেও মসজিদুল হারামের অংশ নয়। আর মসজিদের বাইরে ইকতিদা সহিহ হওয়ার জন্য কাতারের সংযোগ আবশ্যক। তাই এ সব জায়গা থেকে জামাতের শব্দ শোনা গেলেও ইত্তেসাল বা সংযোগ না থাকায় জামাতে অংশগ্রহণ শুদ্ধ হবে না। শব্দ শোনা যাওয়া জামাতে অংশগ্রহণ শুদ্ধ হওয়ার মানদণ্ড নয়।
কাবা দেখা গেলে নামাজে পুরোপুরি কাবামুখী হতে হবে
কাবা মুসলমানদের কিবলা। মুসলমান মসজিদুল হারামে কাবার সামনে বা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, নামাজের সময় কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সব জায়গা থেকে কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ وَ حَیۡثُ مَا كُنۡتُمۡ فَوَلُّوۡا وُجُوۡهَكُمۡ شَطۡرَهٗ
তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও, তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফেরাও। (সুরা বাকারা: ১৪৪)
তবে যারা কাবার সামনে রয়েছে, কাবাকে সরাসরি দেখছে, তাদের কাবামুখী বা কিবলামুখী হওয়ার পদ্ধতি আর যারা দূরে রয়েছে তাদের কিবলামুখী হওয়ার পদ্ধতি এক রকম নয়।
যারা কাবার সামনে আছে এবং কাবা দেখতে পাচ্ছে তারা তো সরাসরি কাবা বরাবর মুখ করেই নামাজ আদায় করবে। আর যারা দূরে রয়েছে, কাবা দেখছে না, তাদের জন্য পুরোপুরি কাবামুখী হওয়া জরুরি নয়। বরং কাবা যে দিকে অবস্থিত ওই দিকটিই তাদের কিবলা। তারা ওই দিকে ফিরে নামাজ আদায় করলেই নামাজ হয়ে যাবে, চেহারা পুরোপুরি কাবা বরাবর না হলেও।
নামাজে যথাযথভাবে কিবলামুখী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ডানে বা বামে ঘোরা যাবে না। এরপরও ভুল করে বা কোনো অসুবিধান কারণে কিবলার দিক থেকে ৪৫ ডিগ্রি পরিমাণ পর্যন্ত ডানে বা বামে সরে গেলেও নামাজ শুদ্ধ হবে। এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ঘুরে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
যেমন কোনো এলাকার কিবলার দিক যদি ২৭৭ ডিগ্রিতে হয় তাহলে এর থেকে উত্তরে ২৭৭+৪৫=৩২২ ডিগ্রি পর্যন্ত সিনা ঘুরে গেলেও নামাজ হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি ঘুরলে নামায শুদ্ধ হবে না। তেমনি এর থেকে দক্ষিণে ২৭৭-৪৫=২৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে গেলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি দক্ষিণে ঘুরলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
ওএফএফ/জেআইএম