জান্নাত আল্লাহ তাআলার দয়ার দান

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৫

আল্লাহ রাহমানুর রাহিম; পরম করুণাময়, দয়ার আধার। বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও ইহসানের কোনো সীমা নেই। দুনিয়াতে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়, চরম সীমালঙঘন করে, এরপরও আল্লাহ ছাড় দেন, তওবার জন্য সময় দেন। আল্লাহর দয়া না হলে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষই অবাধ্যতার অপরাধে ধ্বংস হয়ে যেতো।

বান্দা গুনাহ করলে আল্লাহ অনেক সময় ক্ষমা করে দেন, অনেক সময় দুনিয়া বা আখেরাতের শাস্তির ফয়সালা করেন। গুনাহের শাস্তি হয় গুনাহের সমপরিমাণ। আল্লাহ জুলুম করেন না। আর যদি বান্দা আল্লাহর আনুগত্য করে, নেক কাজ করে, তাহলে আল্লাহ বহুগুণ বেশি সওয়াব দান করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে বিপুল প্রতিদান প্রদান করেন। (সুরা নিসা: ৪০)

এ আয়াতে বিপুল পরিমাণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে, সওয়াবর বৃদ্ধির কোনো পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। অন্য দুটি আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায় মুমিনের নেক কাজের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ বাড়ে, আর আল্লাহর ইচ্ছায় তা সাত শত গুণেরও বেশি বাড়তে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। আর যে অসৎকাজ নিয়ে এসেছে, তাকে অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে এবং তাদের ওপর জুলুম করা হবে না। (সুরা আনআম: ১৬০)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা: ২৬১)

আখেরাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে জান্নাত দান করবেন তার দয়া ও অনুগ্রহে। আল্লাহ তাআলা যদি দয়া না করেন, অনুগ্রহ না করেন, শুধু নেক আমলের সমপরিমাণ প্রতিদান দিতে চান, তাহলে কেউ শুধু নিজের নেক আমল দিয়ে জান্নাতের মত বড় পুরস্কার লাভ করার উপযুক্ত হতে পারবে না। নেক আমল আল্লাহ তাআলার অপরিসীম ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভ করার উসিলা মাত্র।

jagonews24

আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আপনাদের কারো আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। সহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও নন? তিনি বললেন, আমিও নই, যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে তার অনুগ্রহ ও করুণা দিয়ে আমাকে ঢেকে না নেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৮৫৫)

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ বান্দা ও রাসুল হয়েও এবং আল্লাহর ইবাদতে দিনরাত নিমগ্ন থাকার পরও আল্লাহ রাসুল (সা.) আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করতে আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহের ওপর ভরসা করতেন, শুধু নিজের নেক আমলের জোরে জান্নাত পাবেন এই ধারণা করতেন না।

তাই আমাদের মতো গুনাহগার ও অধম বান্দাদের তো কোনোভাবেই এই ধারণা থাকা উচিত নয় যে শুধু নেক আমল করে আমরা জান্নাতের উপযুক্ত হতে পারবো। বরং সব সময় আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ চাইতে থাকা উচিত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তার ক্ষমা ও দয়া চেয়ে এভাবে দোয়া করতে শিখিয়েছেন,

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ وَ اعۡفُ عَنَّا وَ اغۡفِرۡ لَنَا وَ ارۡحَمۡنَا اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন নাসীনা আও আখত্বা’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরাং কামা হামালতাহু আলাল্লাজীনা মিং কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মালা ত্বাকাতালানা বিহ ওয়া’ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।

অর্থ: হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব! আমাদের এমন ভার দেবেন না যা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই। আপনি আমাদের মার্জনা করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের ওপর দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক, কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। (সুরা বাকারা: ২৮৬)

ওএফএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।