মসজিদে হারামের জুমার খুতবা

আল্লাহর জিকির মুমিনকে শক্তিশালী করে

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৫

গত শুক্রবার (সৌদি আরবে ১৮ জুলাই ২০২৫ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ২৫ মহররম ১৪৪৭ হিজরি) মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ পড়ান শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি।

তার জন্ম ১৯৬৯ সালের সাত জানুয়ারি সৌদি আরবের মদিনা মুনাওওরায়। ১৪২৫ হিজরিতে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ অনুষদ থেকে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এখানে তার বিষয় ছিল, ‘ফিকহুল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল’ তথা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের ইলমে ফিকহ’। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪৩২ হিজরিতে ইমাম সিরাজি (রহ.) রচিত শাফেয়ী মাজহাবের কিতাব ‘তুহফাতুন নাবিহ শারহুত তানবিহ’র ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

গত শুক্রবার মসজিদুল হারামে জুমার খুতবায় তিনি বলেন:

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুর্বল স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন—দেহে, মনোবলে ও ইচ্ছাশক্তিতে। সামান্য বিপদে সে ভেঙে পড়ে, সামান্য সম্পদ পেলে কৃপণতা করে। জীবনের দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও বিপর্যয় প্রায়ই তাকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। তাই মানুষের দরকার হয় আল্লাহর সাহায্য ও দয়া, যা তার দুর্বলতা দূর করে এবং মনকে প্রশান্ত করতে পারে।

এই সাহায্য লাভ করার অন্যতম উপায় হলো আল্লাহ তাআলার জিকির। এটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। জিকির মুমিনকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়, মুমিনের অন্তর প্রশান্ত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা ইমান এনেছে এবং যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে প্রশান্ত হয়—জেনে রাখো! আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রা‘দ: ২৮)

জিকিরগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি জিকির হলো:

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।

নবিজি (সা.) এই জিকিরকে জান্নাতের ধনভাণ্ডার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনভাণ্ডারসমূহের একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব? আমি বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

বান্দা জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। এই বাক্যটি আল্লাহর ওপর নির্ভরতা প্রকাশ করে। এর অর্থ হলো, পাপ থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই আর নেক কাজ করারও কোনো শক্তি নেই—আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।

তাই নিজের ওপর ভরসা কোরো না, নিজের সামর্থ্যের বড়াই কোরো না। বরং জেনে রাখো, তোমার যেটুকু শক্তি বা ধৈর্য আছে, সবই তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। তুমি তাঁর সাহায্য ছাড়া হেদায়াত লাভ করতে পারবে না, তাঁর সহায়তা ছাড়া দ্বীনের ওপর দৃঢ় থাকতে পারবে না, তাঁর হেফাজত ছাড়া গোনাহ থেকে বাঁচতে পারবে না। জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না তাঁর রহমত ছাড়া।

নবিজি (সা.) তার উম্মতকে এই জিকির করতে উৎসাহ দিয়ে আরও বলেছেন, ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ গুনাহ মাফ করে, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে।

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তারপর বলে, ‘আল্লাহু আকবার’, তারপর বলে, ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’—ফেরেশতারা জবাবে বলেন, সে সত্য বলেছে। তারপর তারা বলেন, কে তার জন্য সওয়াব লিখবে? তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য সওয়াব লিখে যেতে থাকো যতক্ষণ না তোমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো। (অর্থাৎ তার মৃত্যু হয়)

তাই আমাদের কর্তব্য এই শ্রেষ্ঠ জিকিরটি বারবার পড়া, এর অর্থ হৃদয়ে ধারণ করা এবং সব কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করা।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।