তালাক নয়, দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি যত্নবান হোন:  শায়খ আহমাদুল্লাহ

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
শায়খ আহমাদুল্লাহ ছবি: সংগৃহীত

দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য হলেই তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের কথা চিন্তা না করে দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি সবাইকে আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুপরিচিত ইসলামি আলোচক আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, পরিবার হলো মানবসভ্যতার সূতিকাগার। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে মানবসভ্যতা যে বন্ধনের ওপর ভর দিয়ে টিকে আছে, তার নাম পরিবার। অথচ খুব ঠুনকো কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন ভাঙছে প্রায় ৩৭ টি দাম্পত্য সম্পর্ক। মিনিটের হিসাবে প্রতি ৪০ মিনিটে ১ টি করে তালাকের ঘটনা ঘটছে। ইসলামে অপছন্দনীয় বৈধ কাজ বলা হয়েছে তালাককে। শুধু তাই নয়, কোথাও পরিবার ভাঙার সংবাদে শয়তান যতটা খুশি হয়, ততটা খুশি সে অন্য কোনো কারণে হয় না। তালাকের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যায়, তারা হয়তো নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে, কিন্তু এর নির্মম বলির শিকার হয় সন্তান। বাবা-মার সংসার ভাঙার প্রেক্ষিতে সন্তানেরা যে মানসিক পীড়নের ভেতর দিয়ে বড় হয়, এই ট্রমা সারা জীবনেও তারা কাটিয়ে উঠতে পারে না।

তালাক শুধু নিরুপায় অবস্থায় বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার দরজা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্পর্ক যতক্ষণ ধরে রাখার পর্যায়ে থাকে, ইসলাম ততক্ষণ এই দরজা খুলতে নিষেধ করে। তবে যখন বিশ্বাস ভেঙে যায়, মধুর সম্পর্ক বিষময় হয়ে ওঠে, আশার সকল প্রদীপ নিভে যায়, একজন অন্যজন থেকে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর মিলনের কোনো সম্ভাবনাই বাকি থাকে না, ইসলাম তখনই তালাকের কথা ভাবতে বলেছে। তাও এমন পদ্ধতিতে তালাক দিতে বলেছে, যেন ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে চাইলেই আবার পূর্বের সম্পর্কে ফিরে আসা যায়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঠুনকো কারণে পূর্বাপর চিন্তা না করেই চূড়ান্ত তালাক দিয়ে বসে, যা তাদের পুনর্মিলনের মাঝে স্থায়ী পাঁচিল তুলে দেয়। এরপর যখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, তারা আফসোস করতে থাকে। যে আফসোস তাদের ভাঙা সংসার জোড়া লাগাতে কোনোই ভূমিকা রাখে না।

তালাকের আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করা, তালাক সম্পর্কে জানা এবং অভিজ্ঞ কারো সাথে পরামর্শ করার আহ্বান জানিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, অভিমান ও মনোমালিন্য জীবনের অংশ। মনোমালিন্য কিংবা ভুল বোঝাবুঝি হলেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেবেন না। আজ আপনার বয়স কম, তারুণ্যের রক্ত টগবগিয়ে ছুটছে আপনার শিরায় শিরায়। ভাবছেন, এত যন্ত্রণা নিয়ে সংসার করার চেয়ে একা থাকাই আরামের; কিন্তু এই তারুণ্য চিরস্থায়ী নয়। একদিন বার্ধক্য আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে। সেদিন যখন একলা বিছানায় জ্বরে কাতরাবেন, কপালে রাখার মতো একটি ভালোবাসার হাত আপনি পাবেন না। দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যখন আপনি ঘরে ফিরবেন, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি বাড়িয়ে ধরার মতো মানুষ আপনি পাবেন না। একলা ঘরে অসহায় অবস্থায় আপনাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। সেই দুর্দিন আসার আগেই দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি যত্নবান হোন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, নবীজির (সা.) সংসারেও মনোমালিন্য হয়েছে। কিন্তু সেই অভিমান কিংবা মনোমালিন্য তাদের সংসারে স্থায়ী ছাপ রাখতে পারেনি। বরং অভিমান ভেঙে আবার তিনি স্ত্রীদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়েছেন।

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।