ওমরাহর অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ওমরাহর অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা যাবে কি? ছবি: ক্যানভা

প্রশ্ন: বর্তমানে পণ্য বিক্রির হার বাড়াতে অনেক কোম্পানি বিভিন্ন প্রণোদনা মূলক কৌশল গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো লটারি কুপন চালু করা যার মাধ্যমে পণ্য কিনে গ্রাহকরা বিশেষ পুরস্কার জয়ের সুযোগ পান। অনেক সময় হজ বা ওমরাহ করার সুযোগও পুরস্কার হিসেবে থাকে। এভাবে পণ্য বিক্রির সঙ্গে চালু করা লটারিতে অংশগ্রহণ করা কি জায়েজ? আর হজ বা ওমরাহর সুযোগ লাভের অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা যাবে কি না? এ রকম লটারিতে বিজয়ী হলে হজ বা ওমরাহ করা যাবে কি না?

উত্তর: ইসলামি শরিয়তে হজ বা ওমরাহর সুযোগসহ যে কোনো পুরস্কার ঘোষণা করে এ ধরনের লটারি কুপন চালু করা, তাতে অংশগ্রহণ করা, বিজয়ী হলে হজ-ওমরাহ করা বা অন্যান্য পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েজ হবে কি না তা নির্ভর করে তিনটি শর্তের ওপর:

এক. কোম্পানি পণ্যের দাম বাজারে প্রচলিত স্বাভাবিক মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হবে। অর্থাৎ শুধু লটারির সুবিধা যুক্ত করার কারণে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। যদি এমনটা করা হয়, তাহলে এতে লটারির খরচ আসলে ক্রেতার কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে লেনদেনটি মায়সির বা জুয়ায় পরিণত হয়, যা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।

কোরআনে মদ ও জুয়াকে নাপাক বস্তু এবং শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। এগুলো থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, শয়তান মদ-জুয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং মানুষকে নামাজ ও আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকেও বিমুখ রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ নাপাক, শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর চায় আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না? (সুরা মায়েদা: ৯০, ৯১)

দুই. পণ্যের গুণগত মান যেন হ্রাস না পায়। অনেক সময় দেখা যায়, পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করা হয়, যা গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার শামিল। এ ধরনের কাজ ব্যবসায়িক সততার পরিপন্থী এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা ব্যবসায় ইনসাফ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মাপে কম দিতে নিষেধ করেছেন। এই নির্দেশনা পন্যের গুণগত মান হ্রাস করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, মাপ ও ওজন পূর্ণ কর ইনসাফের সাথে এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দিও না; আর জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না। (সুরা হুদ: ৮৫)

তিন. ত্রুটিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য বিক্রির জন্যও লটারি ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি লটারি কুপনের মাধ্যমে গ্রাহককে এমন পণ্য কিনতে উৎসাহিত করা হয় যা সাধারণত কেউ কিনতো না, তাহলে সেটিও প্রতারণা ও ধোঁকার পর্যায়ে পড়ে।

ইসলামে ব্যবসাসহ যে কোনো ক্ষেত্রে ধোঁকা ও প্রতারণা নিষিদ্ধ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাজারে গিয়ে একজন বিক্রেতার স্তুপীকৃত খাদ্যপণ্যের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন ভেতরের পণ্য ভেজা বা নিম্নমানের। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা কী করলে তুমি? লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসুল! বৃষ্টি পড়ে ভিজে গিয়েছিল। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ভেজা পণ্য তুমি ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে ক্রেতারা দেখতে পেত। যে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহিহ মুসলিম: ১০২)

এ তিনটি শর্ত যদি যথাযথভাবে পূরণ করা হয় অর্থাৎ পণ্যের দাম সঠিক রাখা, গুণগত মান বজায় রাখা এবং লটারি ব্যবস্থাকে প্রতারণার হাতিয়ার না বানানো—তাহলে কোনো কোম্পানির পক্ষ থেকে লটারি কুপনের মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান হাদিয়া হিসেবে গণ্য হবে। গ্রাহকের জন্যও তা গ্রহণ করা জায়েজ হবে। হজ-ওমরাহ করার সুযোগ পেলে হজ-ওমরাহ করাও জায়েজ হবে।

এসব শর্তের কোনো একটি লঙ্ঘন করা হলে পুরো কার্যক্রমটি শরিয়ত পরিপন্থী হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে কোম্পানির জন্য এমন লটারির আয়োজন করা যেমন নাজায়েজ, তেমনই গ্রাহকের জন্য তাতে অংশগ্রহণ করা নাজায়েজ এবং এ রকম লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করাও নাজায়েজ।

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।