রমজানে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ১৯ এপ্রিল ২০২২

মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি

সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায় করা সুন্নত। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর এই সালাত ফরজ ছিল। তিনি আবশ্যিকভাবে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হলে এর ফরজিয়্যাত বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল পর্যন্ত এই সালাত আদায় করেছিলেন নিয়মিতভাবে। তারই ধারাবাহিকতায় এখনও সুন্নত হিসেবে এর বিধান বহাল আছে।

সালাতুত তাহাজ্জুদ অত্যন্ত বরকত ও ফজিলতপূর্ণ সালাত। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং নৈকট্য লাভ করতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়ুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৭৯)। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার বিধান নাজিল করেন।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার আগে সুরা মুজ্জাম্মিলের প্রথম আয়াতাংশ দ্বারা তাহাজ্জুদের সালাত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়, তখন তাহাজ্জুদের সালাতের ফরজিয়্যাত বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত হিসেবে আদায় করার বিধান ছিল, যা এখনও আছে এবং উম্মতের জন্য নফল সালাত হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুত তাহাজ্জুদে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন।
সেহরির সময়ে ঘুম থেকে উঠে সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। মুগিরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুত তাহাজ্জুদে এত দীর্ঘক্ষণ যাবৎ দাঁড়ালেন যে, তার পাদ্বয় ফুলে গেল। যখন তাকে বলা হলো, ‘আপনি এরূপ কেন করেন? আল্লাহতায়ালা তো আপনার পূর্বাপর সব গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন।’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (মুসলিম : ১১৪৯)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুত তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতেন। কোনো কারণে তিনি এই সালাত আদায় করতে না পারলে ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে এর পরিবর্তে বারো রাকাত সালাত পড়ে নিতেন। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে যদি সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করে নিতেন। (মুসলিম : ১৬৪০)।

এ ছাড়া তাহাজ্জুদের ফজিলত বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রাতের (তাহাজ্জুদের) সালাতকে আবশ্যক করে নেবে। কেননা, এটা হচ্ছে তোমাদের পূর্বেকার সৎলোকের নিয়ম। তোমাদের জন্য প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের পন্থা, গোনাহ মাফের উপায় এবং অপরাধ থেকে বাধাদানকারী।’ (তিরমিজি : ৩৫৪৯)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ খুশি হন, যখন সে রাতে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করার জন্য ওঠে, মুসল্লিরা যখন সালাতের জন্য কাতার বাঁধে এবং সৈন্যদল যখন শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধ হয়।’ (শরহুস সুন্নাহ : ১১৫৭)।

উপর্যুক্ত হাদিস থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়, সালাতুত তাহাজ্জুদ পূর্বেকার সৎলোকের তথা মুত্তাকিদের নিদর্শন এবং এর মাধ্যমে গোনাহ মাফের কারণ হয়। ভবিষ্যতে তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ‌গোনাহমুক্ত থাকার বিশেষ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নৈকট্য লাভ করা যায়।

ফরজ সালাত যেমন পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পাওয়া যায়, অনুরূপ তাহাজ্জুদ নফল বা সুন্নত হলেও এতে ফরজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। নফল সালাতের ক্ষেত্রে দিনের চেয়ে রাতে সওয়াব বেশি। আর সালাতুত তাহাজ্জুদ যেহেতু শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়, সেহেতু এর সওয়াব অন্যান্য নফল সালাতের চেয়ে বহুগুণ বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ফরজ সালাতের পর সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ সালাত রাতের সালাত। আর এখানে রাতের সালাত বলতে সালাতুত তাহাজ্জুদই উদ্দেশ্য। (মুখতাসারুল আহকাম : ২/৩৯৩)।

মাহে রমজান বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ একটি মাস। এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি। অন্য মাসের সালাতুত তাহাজ্জুদ আর মাহে রমজানের সালাতুত তাহাজ্জুদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। রমজানে নফল সালাত আদায় করলে অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য সওয়াব। আর রমজান মাসে রোজাদারগণ যেহেতু সেহরি গ্রহণ করার জন্য ওঠেন, একটু আগেভাগেই উঠে এই ফজিলতপূর্ণ সালাত আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ক্ষমাপ্রার্থনার সুবর্ণ সুযোগটাকে কাজ লাগিয়ে অশেষ কল্যাণ লাভ করতে পারেন।

মাহে রমজানে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার উদ্দেশে রাতের বেলায় জাগ্রত থেকে সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায় করে, সালাতুল তাহাজ্জুদ কেয়ামতের ময়দানে তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। নামাজ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি এই ব্যক্তিকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেইনি। এই ব্যক্তি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে। সুতরাং তার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ অতএব, সালাতুত তাহাজ্জুদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (তিরমিজি : ২/১০৮)।

লেখক : সহকারী মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম ও এমফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মুনশি/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।