ভারতে রোজাদারের ঘুম ভাঙে গান-গজল ও তেলাওয়াতে

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৩

মহিমান্বিত মাস রমজান। বরকতময় এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। রোজা রাখা, ইফতার করা, ইফতারের পর তারাবিহ নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে সেহরি খাওয়াসহ ইত্যাদি আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন অনেক বেশি জনপ্রিয়। ভারতীয় মুসলিমরাও এর ব্যতিক্রম নয়।  ভারতের জনসংখ্যার মোট ১৭.৪ শতাংশ মুসলমান। সমগ্র বিশ্বের জনসংখ্যার নিরিখে তাদের স্থান তৃতীয় বৃহত্তম। সেখানেও রমজান নিয়ে আছে মজার মজার রীতির প্রচলন। কী সেগুলো?

সেহরিওয়ালাদের গান, গজল, তেলাওয়াত

ভারতের অন্যতম পুরোনো শহর দিল্লিতে রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে গান, গজল, তেলাওয়াত পরিবেশন করেন সেহরিওয়ালারা। এটি ভারতের অত্যন্ত পুরোনো একটি ঐতিহ্য। অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও দিল্লি তার এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি শহরের একটি পুরোনো মোঘল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। পবিত্র রমজান মাসে সেহরিওয়ালারা শেষ রাতে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। আল্লাহ ও নবীর নাম উচ্চারণ করে রোজাদারদের সেহরি গ্রহণ করতে আহ্বান জানায়। তারা বাড়ির দরোজা, দেয়ালে টোকা দেওয়ার জন্য লাঠি বা বেত বহন করে। সেহরিওয়ালারা এ দায়িত্ব বংশ-পরম্পরায় পালন করে থাকে। নতুন নতুন পেশায় অংশগ্রহণ বাড়ছে, ফলে তাদের সংখ্যা কমছে; তবুও পুরোনো দিল্লিতে এ প্রথা এখনও চালু আছে।

হিন্দুরাও রোজা রাখে

দেশটির কোটি কোটি মুসলমানের কাছে রমজান মাস কেবল পানাহার থেকে বিরত এবং ভোজ্য-উৎসব নয়, বরং নামাজ পড়া আর আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার মাধ্যম। ‍বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে রোজা এক অন্য মাত্রা এনেছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, সেখানে অনেক হিন্দুও রোজা রাখে। তারা ইফতারের আয়োজন করে। মুসলমনাদের ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। খবরে প্রকাশিত হয়েছে, কয়েক বছর আগে তিহার জেলে কয়েকজন মুসলিম বন্দীর সঙ্গে সহমর্মিতা জানাতে পুরো রমজান মাস না খেয়ে থেকেছে অনেক হিন্দু কয়েদি।

রমজানজুড়ে কানায় কানায় ভরপুর থাকে মসজিদ

ভারতে পুরো রমজান মাসে মসজিদগুলো মুসল্লিদের চাপে থাকে একেবারে ঠাসা। বিশেষ করে, তারাবিহের নামাজে মসজিদে ঠাঁই নেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় পর্যন্ত কাতার ছড়িয়ে পড়ে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নামাজের জামাতে শরিক হয়। শান্তি-সৌহার্দ্যের জন্য মোনাজাত হয়। ভারতের মসজিদগুলোতে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের মধ্যেই তারাবিহতে পুরো কোরআন খতম হয়। তবে কোনো কোনো মসজিদে প্রতি ৫ রোজায় একবার পবিত্র কোরআন পাঠ সম্পন্ন করা হয়। সময়-সুযোগের আলোকে মুসল্লিরা সংশ্লিষ্ট মসজিদে তারাবিহ আদায় করেন। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ কমিটি বিশেষ নামাজের পর স্থানীয় ভাষায় পবিত্র কোরআনের তাফসির মাহফিলের আয়োজন করেন।

ইফতারের বাহারি আয়োজন

ভারতীয় মুসলমানরা মসজিদে মসজিদে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন। খেজুর এবং পানি দিয়ে ইফতারের সূচনা হয়। নিরামিষ এবং আমিষ উভয় ধরনের খাবারই থাকে আয়োজনে। হায়দ্রাবাদে হালিমের সঙ্গে তাদের উপবাস ভঙ্গ করে স্থানীয় মুসলিমরা। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে ইফতার শুরু হয় খেজুর, তাজা কাটা ফল এবং ফলের রস দিয়ে। তারপর ভাজা খাবারের আইটেম যেমন পাকোড়া এবং সমুচাও খাওয়া হয়।

রমজানে সমস্যা

হিন্দুপ্রধান দেশ ভারত। রমজানের মুসলিম বিশাল আয়োজন থাকলেও কিছু সমস্যাও মোকাবেলা করতে হয় মুসলিমদের। সে সমস্যা কী? মুসলিম দেশগুলোতে লোকজন এ মাসে কিছুটা ছাড় পান। কিন্তু ভারতে মুসলমানদের কর্মস্থলে নির্ধারিত কাজ শেষ করে নামাজে শরিক হতে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে হয়। কেননা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের কর্মঘণ্টা কমানো হয় না। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মঘণ্টায় ছাড় দেয়।

আবার ভারতের প্রায় অঞ্চলেই মাইকে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ। তাই সেহরির সময় ঘুম থেকে উঠতে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। সেটা অবশ্য মুসলমানরা অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছেন। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, ভারতে রোজা পালন নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। রোজাদারের সামনে পারতপক্ষে কেউ খায় না। এভাবেই রমজান মাসে ছড়িয়ে পড়ে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব আর সম্প্রীতির বন্ধন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।