অন্তরের পরিশুদ্ধি জরুরি যে কারণে

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ০৬ জুলাই ২০২৪
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত শেখ জায়েদ মসজিদ

মানুষের শরীর, জীবনযাপন ও সব কাজকর্মের কেন্দ্র হলো অন্তর। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে সব কিছু পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। অন্তর অশুদ্ধ হলে সব কিছুই অশুদ্ধ হয়ে যায়। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ‏.‏ أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ
শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই খারাপ হয়ে যায়। সে মাংসের টুকরোটি হলো অন্তর। (সহিহ বুখারি, সহিহ ‍মুসলিম)

হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, মানুষের অন্তর যখন ঠিক হয়ে যায়, তখন তার কাজও ঠিক হয়ে যায়। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তখন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নড়াচড়া করে। তিনি আরও বলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ হলে কাজকর্ম পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়া অপরিহার্য।

অল্প জ্ঞানের কিছু মানুষ ধারণা করে এ হাদিসে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও কাজের পরিশুদ্ধির মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। এটা অজ্ঞতাপ্রসূত বা কুপ্রবৃত্তির অনুগামী ভুল ধারণা। ইমান অন্তরের বিশ্বাস, মুখের স্বীকারোক্তি ও আমলের সমষ্টি। অন্তরের পরিশুদ্ধির প্রভাব মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও কাজের ওপর পড়ে। কারো ভেতর যতো বেশি পরিশুদ্ধ হয়, তার কাজ ততো বেশি উত্তম ও উন্নত হতে থাকে।

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকেও এটা বোঝা যায়। ওই হাদিসে রাসুল (সা.) অন্তর ও আমলকে একসাথে উল্লেখ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন,

إنَّ الله لا ينظر إلى صوركم، ولا إلى أموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم

আল্লাহ তোমাদের রূপ বা সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল। (সহিহ মুসলিম)

মানুষ যত ভালো কাজই করুক, যত বেশি ইবাদত করুক, তার অন্তরে যদি ঈমান না থাকে, সে যদি ইখলাসের সাথে শুধু আল্লাহর জন্যই ইবাদত না করে, তাহলে তার ভালো কাজের কোনো মূল্য নেই।

লোক দেখানো ইবাদত হারাম। হাদিসে এসেছে লোক দেখানো ইবাদতকারী যদি রিয়া বা তার লোক দেখানোর গুনাহ থেকে তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সব মানুষের সামনে তাকে তার আমলের সওয়াব দেখাবেন এবং তার রিয়ার কথা প্রকাশ করে তাকে ওই সওয়াব থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করবেন। সে সবার সামনে লজ্জিত হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন,

مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ

যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে শোনাবেন। যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদত করে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে দেখাবেন। (সহিহ বুখারি)

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

আমি শরিককদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করে, তাহলে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম)

তাই আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য অন্তর পরিশুদ্ধ করা। অন্তরে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান দৃঢ় করা, পরিপূর্ণ ইখলাস দৃঢ় করা। শিরক, রিয়া অন্তরে থাকলে তা থেকে অন্তরকে মুক্ত করা। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে আমাদের জীবন পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।