ইসলামে বাড়াবাড়ি করার প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা


প্রকাশিত: ০৭:০১ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

হিজরি সালের ৬ষ্ঠ বৎসরের জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় রওয়ানা হন। ওই সময় মক্কা ছিল কাফেরদের দখলে। ফলে তারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদেরকে মক্কায় প্রবেশে বাধা প্রদান করেন। যা ছিল অত্যন্ত বাড়াবাড়ি।

পরে অনেক আলাচনার পর সন্ধি হলো- পরবর্তী বছর সপ্তম হিজরিতে এসে তারা ওমরা পালন করবেন। সে অনুযায়ী সপ্তম হিজরিতে বিশ্বনবি ও তাঁর সাথীগণ ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে রওয়ানা হন। কিন্তু সাহাবাদের আশংকা হলো যে, মক্কার মুশরিকরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আক্রমণ চালায়; সে সময় নীরবতা পালন করা মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর হবে না।

যেহেতু জিলকদ মাস যুদ্ধবিগ্রহ থেকে মুক্ত থাকার চার মাসের মধ্যে একটি। সেহেতু মুসলমানগণ অত্যন্ত বিচলিত ছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন-

Quran

আয়াতের অনুবাদ

Quran

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ১৯০নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন যে, কেবল ওই সব কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে; যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়। আর কোনোভাবেই বাড়াবাড়ি করা চলবে না। অর্থাৎ এ যুদ্ধে নারী, শিশু এবং এমন বৃদ্ধকে হত্যা করো না; যে যুদ্ধে কোনো প্রকার অংশ গ্রহণ করেনি।

অনুরূপভাবে গাছপালা বা ফসলাদি জালিয়ে দেয়া এবং কোনো লক্ষ্য ছাড়াই পশু হত্যা করাও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে। যা থেকে বিরত থাকতেই আল্লাহ তাআলা বিধি আরোপ করেছেন। (ইবনে কাসির)
তাছাড়া ইসলামে যুদ্ধের হুকুম হলো- ইসলাম শুধু ওই সব মানুষের সঙ্গে যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে, যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। আর যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে না বা সাধারণ জনগণ, তাদের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।

নিরাপরাধ মানুষের ওপর বোমাঘাত, নিরাপদ শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এবং তাদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস ও অগ্নিবোমা নিক্ষেপ করার বিধান মানবতা ও ইসলামী যুদ্ধ নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে জনপদ ধ্বংসের মতো বাড়াবাড়ি করতে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। যারা এ ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ যাদেরকে পছন্দ করেন না, তাদের পরিণাম ভয়াবহ। (মাজহারি)

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীগণের ওমরা পালনের সময় যারা তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে; তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা ছিল এ আয়াতে। নিজেদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানো ও বাড়াবাড়ি করার নিষেধাজ্ঞাও ছিল এ আয়াতে।

পড়ুন- সুরা বাকারার ১৮৯ নং আয়াত-

পরিষেশে...
সর্বোপরি কথা হলো- আল্লাহর কাজে যারা পথরোধ করে দাঁড়ায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন-ব্যবস্থার সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাদের প্রতিরোধ করা ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশ। আর দুনিয়ার বস্তুগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ আয়াত থেকে অযথা কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ির শিক্ষা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর জমিনে তাঁর বিধান কায়েমের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সাধনা করার এবং সমাজে তা বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।