উপদেশ প্রদানের মানদণ্ড


প্রকাশিত: ০৫:৩৮ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

নসিহত বা উপদেশ প্রদান ইসলামে ভালো কাজ হিসেবে পরিগণিত। এ কাজে পৃথিবীর অগণিত অসংখ্য বনি আদম নিয়োজত। কুরআনে এসেছে, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দিচ্ছ, আর ভুলে যাও নিজেদেরকে অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাক, তোমরা কি একথাটিও বুঝতে পার না? (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৪৪)। যদিও এ আয়াতটি বনি ইসরাইলদেরকে লক্ষ করে বলা হয়েছে যে, তোমরা তাওরাত কিতাব মেনে চল। অথচ সত্য প্রকাশ এবং পালনে গোপনীয়তা অবলম্বন করে থাকো। কারণ, তাওরাতে শেষ নবি ও কুরআনের উপর ঈমান আনার নির্দেশ রয়েছে অথচ তোমরা তা লংঘন করে স্ববিরোধীতার পরিচয় দিচ্ছ।

এ পর্যায়ে দাওয়াতে দ্বীনের কাজে নিয়োজিত আলেমগণের করণীয় নির্ধারণে তাফসিরকারকদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

তাফসিরে ইবনে কাসীরে এসেছে, ‘ভালো কাজের নির্দেশ দেয়া যেমন কর্তব্য, তেমনি ভাল কাজ করাও একটি স্বতন্ত্র কর্তব্য। অতএব নিজেও ভাল কাজ করবে এবং অন্যকেও ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

তাফসিরে রুহুল মাআনীতে এসেছে- বে-আমল উপদেশ দানকারীর প্রতি তিরস্কার রয়েছে ঠিক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সে অপরকে নসিহত করতে পারবে না। বরং অপরকে নসিহতের পাশাপাশি নিজেও আমল করতে স্বচেষ্ট হবে।

হাকিমুল উম্মাত থানবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বে-আমল আলেমের পক্ষে ওয়াজ-নসিহত করা বৈধ। বরং যারা নসিহত করবে তাদের জন্যসহ সকলের জন্য বে-আমল হওয়া জায়েজ নয়। তাই নসিহতের পাশাপাশি নিজের সংশোধনের চেষ্টা করা কর্তব্য।

আল্লামা আলুসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি বিশেষ কর্তব্য। যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে আর অপরকে ভালো কাজের উপদেশ দেয়। তার একটি কাজ ভালো আর অপর কাজটি মন্দ। আর যদি অপরকে নসিহত করা বর্জন করে, তবে দু’টি কাজই হবে মন্দ। তাই বে-আমল লোকও সত্যের নির্দেশ দিতে পারবে।

মুফতি শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া একটি স্বতন্ত্র নেক কাজ। নিজে আমল না করার জন্য নসিহত প্রদান করা থেকে বিরত থাকার কোনো যুক্তি নাই। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন-

যদি প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে পাপী বলে অন্যকে পাপ কার্য থেকে নিষেধ করা ছেড়ে দেয়, আর সে এ কথা মনে করে যে, যেদিন নিজে সম্পূর্ণ নিঃস্পাপ হবে সেদিনই অপরকে নসিহত করবো। তাহলে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। সত্যের নির্দেশ দেয়ার কেউ থাকবে না। এ পৃথিবীতে কে আছে যে সম্পূর্ণ নিঃষ্পাপ? এ প্রসঙ্গে তিনি হজরত হাসান বসরির একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন-

শয়তানের আকাঙ্ক্ষা তো এই যে, মানুষ এ ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দ্বীনের প্রচারের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকুক।’

সর্বোপরি নেককার হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং পথহারা জাতিকে সত্যের পথে পরিচালিত করার প্রদর্শকের দায়িত্বও পালন করতে হবে। আত্ম-সংশোধনের চেষ্টা করার পাশাপাশি অন্যকে সংশোধনে নিজেকে আত্ম-নিয়োগ করতে হবে। অপরকে সত্যের নসিহত প্রদান করে নিজে নসিহত বর্জন করা হবে নিতান্ত গর্হিত কাজ।

সুতরাং আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে সত্য ও সঠিক পথ গ্রহণ করে নসিহত প্রদান এবং অসৎ ও অন্যায় পথ বর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।