কৃষকের চোখের জলে ভেজে তিস্তার বালু


প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৭

কোনো এককালে তিস্তা খোরস্রোতা ছিল, তা আর বিশ্বাস করার উপায় নেই। উত্তাল ঢেউ, তীব্র স্রোত, দু’কূল ভাঙার গর্জন, আজ যেন সবই ইতিহাস। পানি নয়, তিস্তায় ঢেউ খেলে বালুচরের মরীচিকা। গোটা নদী এখন ধু ধু বালুচর। দু’চোখ যেদিকে যায়, বালুর নিশানা ছাড়া আর কিছুই মেলে না তিস্তায়।

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, ‘এখন আর বর্ষাকালেই পানি মেলে না। এবারে স্মরণকালের পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে নদীতে। বালুর চর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।’

তিস্তা নিয়ে রাজনীতি হয়, রাজনৈতিক দলগুলো তিস্তাকে ইস্যু বানিয়ে মাঠ গরম করে, তিস্তা পাড়ে লংমার্চ হয়, তিস্তা ইস্যুকে আমলে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ দর কষাকষিও হয়, কিন্তু পানি হয় না। এ নদীর তলানীতেও আর পানির দেখা মেলে না। তবে নদীর তলদেশ বালুতে ভরাট থাকায় সামান্য পানিতেই বন্যার দেখা মেলে।

সূত্রে জানা যায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় এক লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আরও ছয় লাখ হেক্টর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের আশায় অপেক্ষা করেছিলেন আরও লাখ লাখ কৃষক। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা দূরে থাকুক, প্রথম পর্যায়ে যে এলাকায় সেচ দেয়া হতো, তা-ও আর সম্ভব হচ্ছে না। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীকেই আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীতে ৭ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ পরিমাপ করে সেচ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় সরকার। সেই পানি কমতে কমতে গত বছর ২০০ কিউসেকেরও নিচে নেমে এসেছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালেও ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। অভিন্ন নদী হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ভারত একতরফা তিস্তার পানি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণে, হঠাৎ করে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। যাদের একটুখানি সামর্থ্য ছিল, তারা গভীর নলকূপ বসিয়ে কোনোরকমে ধান ঘরে তুলতে পেরেছে। আর যাদের সামর্থ্য ছিল না তারা ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। জমি ফেটে চৌচির হয়েছিল।

২০১৫ সালে ২০ হাজার হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, রেশনিং সিস্টেমে পানি দিতে হলে যে ন্যূনতম পানির প্রবাহ প্রয়োজন, তা-ও কখনও কখনও ছিল না। ২০১৬ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় জমি নেয়া হয়েছে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর। তবে এই ৮ হাজার হেক্টর জমিতেও পরিমাণ মতো পানি মিলছে না বলে জানা গেছে।

নীলফামারীর জেলার জলঢাকা উপজেলার কৃষক মনোয়ার। তিনি বলেন, ‘এবারে পানির সংকট শুরু থেকেই। ফলন যে ভালো হবে না, তা বুঝতে পারছি। চোখে সরষে ফুল দেখছি আবাদ নিয়ে।’

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।