বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস কমে যাচ্ছে

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। অধ্যাপনা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, আগামী বাজেটসহ অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমছে। জবাবদিহিতা আর সুশাসন না থাকায় রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবুদুই পর্বের শেষটি থাকছে আজ।

আরও পড়ুন >> কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ভূমিকা রাখতে পারছে না

জাগো নিউজ : নির্বাচনী বাজেট আসছে। বাজেট নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মির্জা আজিজুল ইসলাম : গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, অতিরঞ্জিত বাজেট দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছরই বাজেটের বাস্তবায়ন হার কমে যাচ্ছে। ২০১২ সালে ৯৩ শতাংশ আর্থিক বাস্তবায়ন ছিল। কাজের গুণগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকার বিষয়টি আলাদা। প্রতি বছর বাস্তবায়নের হার কমে যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। এটি সার্বিক বাজেটের হিসাব।

জাগো নিউজ : রাজস্ব ঘাটতিও বাড়ছে…

মির্জা আজিজুল ইসলাম : হ্যাঁ। রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে প্রতি বছরই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৭.৫ শতাংশ। গত বছর থেকে কোনো উন্নতি হয়নি। এ কারণেই প্রকল্পের সমসয়সীমা অনেক বেড়ে যায় এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস কমে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ : তার মানে বাজেটের আকার বাড়ছে মাত্র। সমতা আনায়নে ভূমিকা রাখছে না…

মির্জা আজিজুল ইসলাম : রাজস্ব আয়ের দিক থেকে তো স্পষ্ট যে, সমতা আনায়নে বাজেটের কার্যকর ভূমিকা নেই। যাদের কর দেয়ার কথা, তারা ফাঁকি দিচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কর দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আরও বৈষম্য বাড়ছে।

এ কারণেই মনে করি, সাধারণের ওপর বাজেটের প্রভাব ইতিবাচক রাখতে হলে সেবা খাতের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো খাতে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

জাগো নিউজ : উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশ। নানা মত এ নিয়ে। আপনার মন্তব্য…

মির্জা আজিজুল ইসলাম : স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য যে তিনটি শর্ত আছে, তা বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে। তবে এটি একদিনে হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি চেষ্টার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা খাতের প্রসার বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত ছিল।

জাগো নিউজ : উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থাকায় চ্যালেঞ্জও বাড়লো বাংলাদেশের। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কী বলবেন?

মির্জা আজিজুল ইসলাম : কিছু লোকসান হবে আমাদের। তবে আমি এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আতঙ্কিত নই। রফতানি শুল্কের বিষয়টি সামনে আসছে। শুল্ক বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে তো আমরা ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েই পণ্য রফতানি করছি। এরপরও তো আমরা সেখানকার বাজারে প্রতিযোগিতা করছি। সুতরাং ছয় কিংবা সাত শতাংশ শুল্ক নিয়ে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব।

আর শুল্কের বিষয়টি আসবে ২০২৭ সালের পরে। রফতানি বাড়াতে পারলে এ শুল্ক বড় হয়ে দেখা দেবে না।

জাগো নিউজ : আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঋণের সুদও তো বেড়ে যাবে?

মির্জা আজিজুল ইসলাম : হ্যাঁ, কিছুটা সুদ বাড়বে। তবে এটি নিয়েও ঘাবড়ানোর কারণ নেই। ২০১৫ সালে আমাদের রেমিট্যান্স যা এসেছে তার তুলনায় মাত্র ২.২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ এসেছিল। সুতরাং বড় কোনো চাপ মনে করার কারণ নেই।

জাগো নিউজ : চাপ যতটুকু আসুক, তা সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

মির্জা আজিজুল ইসলাম : সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের অনেক কিছুরই ধার ধারে না। তারা শত সমস্যার মধ্যেও এগিয়ে যেতে চায়। লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। গার্মেন্টে লাখ লাখ নারী শ্রমিক শ্রম দিচ্ছে। সাধারণ কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। তারাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অভ্যস্ত।

জাগো নিউজ : আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কী বলবেন?

মির্জা আজিজুল ইসলাম : অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের আত্মমর্যাদা বাড়বে। আরেকটি আশীর্বাদ হচ্ছে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

তবে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরও বিষয় সামনে আসে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জমি, অবকাঠামো, জ্বালানিসহ সার্বিক বিষয়ে আমাদের এখনও দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে, শুধু উন্নয়নশীল ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে যে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

সতর্ক থাকার ব্যাপারও আছে। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রার সঙ্গে দেশীয় মুদ্রার ভারসাম্যনীতি না রাখতে পারলে লোকসান হবে। ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়ায় যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এ মুদ্রানীতির কারণেই। এ কারণে সতর্কতার ওপর গুরুত্ব দিতে বলছি আমরা। সতর্ক হতে না পারলে, উচ্ছ্বাসিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আবার দারিদ্র্য বিমোচন করতে না পারলে আত্মমর্যদা বাড়বে, তা মনে করি না। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে এখনও সফল হতে পারিনি। ২০০০-০৫ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১.৮ শতাংশ, ২০০৫-১০ পর্যন্ত ১.৭ শতাংশ এবং ২০১০-১৬ পর্যন্ত ১.২ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কমেছে। অর্থাৎ দারিদ্র্য বিমোচনের মাত্রাটা কমে গেছে।

আত্মমর্যাদা বাড়াতে হলে এ হার আরও কমাতে হবে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।