প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, অথচ জমি অধিগ্রহণই সম্পন্ন হয়নি

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪২ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নড়াইলে প্রকৌশলী খান হাতেম আলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ করা হবে। ছবি: সংগৃহীত

স্নাতক পর্যায়ে প্রকৌশল শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে দেশের চার জেলায় চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ডিপ্লোমা ও এইচএসসি পাস করে শিক্ষার্থীদের বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাওয়ার সুযোগ তৈরিতে সরকারি ১২ হাজার ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব কলেজ স্থাপন করা হবে।

তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনো জমি অধিগ্রহণই শেষ হয়নি। এ কারণে নতুন করে আবারও এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায় আরও তিন বছর বাড়ালেও সব কাজ শেষ হবে না। এজন্য তৃতীয় দফায় সময় বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

‘চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। নির্মাণকাজ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চারটি কলেজের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নওগাঁয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, খাগড়াছড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং নড়াইলে প্রকৌশলী খান হাতেম আলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে মোট ১২ হাজার ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে দেশের চারটি বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলাতেও এসব কলেজ করা হবে।

তিনি বলেন, চারটি জেলায় জমি ক্রয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এসব কলেজ নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পাবে। ভবিষ্যতে এসব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছরে এখনো জমি কেনার কাজ শেষ হয়নি। তবে নড়াইল, নওগাঁ ও খাগড়াছড়িতে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের জমি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, দ্রুত এই কলেজের জমি অধিগ্রহণ কাজও শেষ হতে পারে।

সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প উন্নয়ন (ডিপিপি) অনুযায়ী চার জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে যাতায়াত ও নদীর সন্নিকটে হওয়ায় সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি জেলায় জমি কেনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের জমিও চূড়ান্ত হবে।

তিনি বলেন, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সিভিল, বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, অ্যারোনটিক্যাল, জেনেটিক, এনভায়রনমেন্টাল, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি ও গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ জনবল নিয়োগ করা হবে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রতি বছর ৭২০ জন শিক্ষার্থী (প্রতিটি বিভাগে ৬০ জন) ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। প্রতিটি কলেজে ১২৫ জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। নড়াইল ও নওগাঁর দুটিতে এইচএসসি পাস, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের পর বিএসসি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন (ল্যাবসহ), অধ্যক্ষের বাসভবন, শিক্ষক ডরমেটরি, শিক্ষক-কর্মকর্তার কোয়ার্টার, মাল্টিপারপাস বিল্ডিং, সেন্ট্রাল কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টার, অডিটোরিয়াম, সেমিনার এবং এক্সিবিশন হল, নারী-পুরুষ হোস্টেল, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সাব-স্টেশন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ, পানির পাইপলাইন, আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটার রিজারভার, ওভারহেড পানির ট্যাংক, অভ্যন্তরীণ সারফেস ড্রেন, মুুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ, পুকুর ও বৃক্ষ রোপণ, গ্যাস লাইন সংযোগ স্থাপন করার কথা রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আক্কাস আলী শেখ জাগো নিউজকে বলেন, জমি ক্রয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে, এখন ভবন তৈরির কাজ শেষ করা হবে। পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর দেয়া হলেও এ সময়ের মধ্যে তা শেষ করা সম্ভব হয় না। জমি অধিগ্রহণে অনেক সময় প্রয়োজন। এর ওপরে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলেও তার মধ্যে আমরা জমি ক্রয়ের জন্য পরিদর্শন করেছি। তবে অর্থছাড়, জনবল নিয়োগ, আসবাবপত্র ক্রয়সহ নানা কাজের জন্য অনেক সময় পার হয়ে গেছে। এ কারণে গত মাসের মাঝামাঝি নতুন করে আরও তিন বছরের মেয়াদ বাড়ানো জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এমএইচএম/এমএসএইচ/এইচএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।