সঙ্কটে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের দিকে তাকিয়ে বার কাউন্সিল
সারাদেশে ৬৮টি বার বা আইনজীবী সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ৬০ হাজারেরও বেশি। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের (লকডাউন) কারণে অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো অনেক আইনজীবীও সঙ্কটে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা সামনে এগোচ্ছেন।
যদিও বার কাউন্সিলের নিজস্ব কোনো তহবিল বা অর্থ নেই। তবে সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে আপৎকালীন সহায়তা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে মিলেছে আশ্বাসও। এখন সরকারি অর্থ পেলেই তারা আইনজীবীদের সহায়তা কর্মসূচি শুরু করতে পারবেন বলে জানা গেছে।
গত ২১ এপ্রিল আইনজীবীদের জন্য সহায়তা চেয়ে বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন একটি আবেদন করেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তরফ থেকে আইনজীবীদের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি দাবি তোলার আগেই বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের সঙ্কটকালীন সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল সরকারঘোষিত লকডাউন শুরুর পর থেকেই তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা সামলে ওঠায় সরকার আন্তঃজেলা পরিবহন থেকে শুরু করে ট্রেন, লঞ্চ চলাচলও স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে চালুর অনুমতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই সারাদেশর আইনজীবী সমিতিগুলোতে (বার) সদস্য সংখ্যার অনুপাতে পাঁচ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলাম।’
তবে এ বছর এখন পর্যন্ত এ খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। সেজন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে দেশের সব আইনজীবীকে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
গত ২১ এপ্রিল গণমাধ্যমে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না আইনজীবীরা। চলমান লকডাউনে অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটের মধ্যে আছেন তারা।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবীদের অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। আমি মনে করি, করোনা সংক্রমণের এই দুর্যোগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে সব আইনজীবীকে এক লাখ টাকা করে থোক বরাদ্দ দেয়া উচিত।’
‘বার কাউন্সিল নিজস্ব ফান্ড থেকে এই অর্থ দিতে পারে। আর ফান্ডের সমস্যা হলে প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে পারে। মোট কথা, এই চরম দুরবস্থায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে বার কাউন্সিল অর্থহীন হয়ে পড়ে’—বলেন কাউন্সিলের সাবেক এ ভাইস চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এএম আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গত বছর একবার করোনাকালে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলাম। আবার চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশা করি আমরা পারব।’
খন্দকার মাহবুব হোসেনের করা আবেদনের বিষয়ে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইনজীবীদের সুযোগ সুবিধা দিতে তো আর আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। গত বছরে আমরা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা সহায়তা করেছি আইনজীবীদের বিভিন্ন বারে। অসচ্ছল আইনজীবীদের দিতে আমাদের ফান্ড থেকে দিতে হয়, টাকা তো আর সরকার দেয় না। এটা আইনজীবীরা যে রেজিস্ট্রিশন ফি দেন, সেই অর্থ। এখন যে অবস্থা সরকারের কাছে ফান্ড চাইতে হবে। চাওয়া হয়েছে একাধিকবার। মুখে দিচ্ছি, দেব বললেও আল্টিমেটলি হয় না।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লা হিরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বার কাউন্সিল থেকে আইনজীবীদের সহায়তা বা অনুদান দেয়ার কোনো বিধান নেই। সবাই মিলে আলোচনা করে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে গত বছর করোনাকালে আইনজীবীদের অনুদান দেয়া হয়েছিল। এবার লকডাউনে সঙ্কটে থাকা আইনজীবীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আরেকটি সভা আহ্বান করা হয়েছে, দেখি আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত আসে কি-না।’
ঈদের আগে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ দিল আইনজীবী সমিতি
এদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়া আইনজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার অ্যাসোসিয়েশন)। তাদের পক্ষ থেকে আপৎকালীন বিশেষ ঋণ দেয়া হয়েছে সঙ্কটগ্রস্ত আইনজীবীদের। এবারের ঈদুল ফিতরের আগে দেড় হাজারেরও বেশি আইনজীবীকে ৩০ হাজার করে চার কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি ঋণ দেয়া হয়েছে।
গত বছরও এ ধরনের বিশেষ ঋণ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।
এফএইচ/এসএস/এইচএ/জেআইএম