সূচকের উত্থান-পতনে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ


প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ০২ মার্চ ২০১৬

শেয়ারবাজারের সূচকের গতি দেখে অর্থাৎ উত্থান-পতনে আতংকিত হয়ে শেয়ার কেনা-বেচা না করার পরামর্শ দিয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইফতেখার উজ জামান।

মো. ইফতেখার উজ জামান। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি এ প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে আইসিবির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে আইসিবিতে যোগ দেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ইফতেখার উজ জামান। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম। সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো :

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
ইফতেখার উজ জামান : ভালো।

জাগো নিউজ : আইসিবির নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?
ইফতেখার-উজ-জামান : আইসিবিতে আমার দায়িত্ব নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটি অনেক পুরনো। এখানে যারা দায়িত্বরত রয়েছেন তারা সবাই আমার পরিচিত। কাজের ক্ষেত্রে সবাই আমাকে সহযোগিতা করছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মজিব উদ্দীন আহমেদের মতো একজন দক্ষ লোক পেয়েছি। তিনি যেমন কাজে দক্ষ, তেমনি তার জ্ঞানের ভাণ্ডারও অনেক সমৃদ্ধ। সব সময় তার সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করছি ভবিষৎতেও তা অব্যাহত থাকবে।

জাগো নিউজ : এমডি হিসেবে আইসিবির জন্য আপনার করণীয় কি? পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবি কোন ধরনের সহযোগিতা করবে।
ইফতেখার-উজ-জামান : আইসিবি মূল কাজ পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতায় কাজ করা। তাই এমডি হিসেবে আমি আইসিবির ভবিষৎ পরিকল্পনায় পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল রাখাকে বেশি গুরুত্ব দেবো।

এজন্য পুঁজিবাজার ভিক্তিক রিসার্স অথাৎ রিসার্স অরিয়েন্টেন্ড কাজ করবো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুঁজিবাজার ভিক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া। নতুন নতুন পণ্য সর্ম্পকে কর্মীদের ধারণা দেয়া হবে। আইসিবিতে একটি রিসার্স টিম রয়েছে। এই টিমকে আরো দক্ষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাজারবান্ধব আরো কিছু কাজ করতে চাই।

আইসিবির ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা সম্পর্কে ইফতেখার-উজ-জামান বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ৭৫ থেকে ১০০ ভাগ সুদ মওকুফ করা হবে। তা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে এর ৪২ হাজার বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ করা হবে। এর পাশাপাশি একই সময়ে মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের সুদও মওকুফের বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

জাগো নিউজ : আইসিবি বিভিন্ন সময় শেয়ার বিক্রি করে বাজারকে প্রভাবিত কর এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায়। আপনি এ বিষয়কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
ইফতেখার-উজ-জামান : এটা ঠিক নয় যে আইসিবি শেয়ার বিক্রি করে বাজারকে প্রভাবিত করে। বাজার সইতে পারবে না। আইসিবি এমন কোনো কাজ করে না। যেসময় বাজার শেয়ার গ্রহণ করতে পারে আইসিবি তখনই শেয়ার বিক্রি করে। অর্থাৎ বাজারে যখন শেয়ারের সংকট পরে তখন তারা শেয়ার বিক্রি করে বাজারকে সাপোর্ট দেয়। আবার যথন প্রয়োজন পরে তখন আইসিবি কর্তৃপক্ষ ক্রেতার ভূমিকা পালন করে।

জাগো নিউজ : মার্জিন ঋণ নিয়ে অনেককে সর্বস্বান্ত হয়। এ জন্য কি বিনিয়োগকারী একাই দায়ী, নাকি যারা ঋণ দিচ্ছেন তাদেরও কিছু দায়ভার রয়েছে?
ইফতেখার-উজ-জামান : যারা ঋণ নিচ্ছেন ও দিচ্ছেন উভয়ই এর জন্য দায়ী। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যখন ঋণ দেবে তখন যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়া উচিত। কারণ সবাইতো ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়।

জাগো নিউজ : বর্তমান বাজার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ইফতেখার-উজ-জামান : পুঁজিবাজার নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কোম্পানির সার্বিক অবস্থা দেখে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কারো কথায় বা গুজবে শেয়ার বেচা-কেনা করা যাবে না। বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদি। এখন মানি মার্কেটের যে অবস্থা তাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার থেকে বেশি লাভ করা সম্ভব।

বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ হিসেবে আমি বলবো, শেয়ারবাজারের সূচকের গতি দেখে অর্থাৎ উত্থান-পতনে আতংকিত হয়ে শেয়ার কেনা-বেচা করবেন না। কারণ শেয়ারবাজারের সূচক ওঠানামা স্বাভাবিক নিয়ম। সূচক কমে গেলেই সব ব্যবসা শেষ হয়ে গেল তা নয়, সূচক কমে গেলেই ব্যবসা কমে যাবে না। যদি ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন।

জাগো নিউজ : সরকারের দেয়া ইক্যুইটি অ্যান্ড অন্ট্র্যাপ্র্যানারশিপ ফান্ড (ইইএফ) ব্যবস্থাপনা করছে আইসিবি। বর্তমানে এর অবস্থা কি।
ইফতেখার-উজ-জামান : ঝূঁকিপূর্ণ কিন্তু সম্ভাবনাময় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে ইইফন্ড বিনিয়োগ করে থাকে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। পুঁজিবাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নতুন করে এ ফান্ডের জন্য একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। শিগিরই এর কার্যক্রম শেষ হবে। বর্তমানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে। এ নীতিমালার পরে আরো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলবে। এরই মধ্যে এই ফান্ডের মাধ্যমে অনেকে পপুলার হয়েছে।

জাগো নিউজ : ব্যস্ততার মাঝে মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
ইফতেখার-উজ-জামান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসআই/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।