কাম না করলে সংসার চলবো কেমনে?


প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ০১ মে ২০১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের মাঠের সামনে মে দিবস উপলক্ষে ছুটির দিনে মাঠ ভর্তি নানা বয়সী শিশুদের ভিড়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গা দখল করে কেউ ক্রিকেট কেউ ফুটবল কেউবা আবার দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত। এফ রহমান হল সংলগ্ন মাঠের কোণায় ক্ষুদে বয়সের কয়েকজন শিশু উত্তর দক্ষিণমুখী হয়ে ক্রিকেট খেলছিল। আনুমানিক বার-তের বয়সের একটি ছেলে রাস্তায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে খেলা দেখছিল।

গামছা গলায় ছেলেটি পেশায় একজন পান সিগারেট বিক্রেতা। নীলক্ষেত, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে ঘুরে সে পান সিগারেট বিক্রি করে। নাম তার নাজমুল হাসান।

sisu

সে জানায়, এক সময় গ্রামের বাড়িতে থাকতে সেও ক্রিকেট খেলতো। কিন্তু এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকায় খেলতে পারে না। তাই কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে।

কি কারণে তাকে পান সিগারেট বিক্রি করতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল জানায়, তিন বছর আগে বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে তার ছোট আরও দুই ভাইবোনকে রেখে বাবা ও মা দুজনেই কোথায় যেন চলে যায়। বাড়িতে তখন বৃদ্ধ দাদা-দাদি ও ছোট দুই ভাইবোনসহ পাঁচজনের সংসার। নিরুপায় হয়ে এত অল্প বয়সেই তাকে সংসার চালানোর দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

sisu

সে জানায়, প্রতিদিন পান সিগারেট বিক্রি করে ৩/৪শ’ টাকা লাভ থাকে। সেখান থেকে বাড়িতে টাকা পাঠায়। সে রাতে কামরাঙ্গিরচরে মেস বাড়িতে ভাড়া থাকে। শিশু শ্রম তো নিষিদ্ধ এমন প্রশ্ন করলে সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ‘কাম না করলে সংসার চলবো কেমনে?।’

sisu

অভাবের তাড়নায় সংসারের হাল ধরতে নাজমুলের মতো অসংখ্য শিশুকে কম বয়সেই অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। তাদেরই একজন ইমরান। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডের অদূরে একটি মোটরসাইকেল মেরামতের দোকানের একজন শিশু শ্রমিক। কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল সে। বয়স ১১ বছর বললেও জীর্ণ-শীর্ণ দেহ দেখে খুব বড় জোর ৮/৯ বছর বয়স বলে মনে হয়।

সে জানায়, তিনমাস আগে পর্যন্ত পুরান ঢাকার বাট মসজিদ এলাকার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। কিন্তু তরকারি বিক্রেতা বাবার একার আয়ে সংসার চলছিল না। তাই মোটরসাইকেল মেরামতের দোকনে প্রতিদিন ১শ’ টাকা বেতন চাকরি করছে। শিশুশ্রম ও মহান মে দিবস কি তা জানেনা সে। শুধু বলে, ‘দিবস জাইন্যা পেড (পেট) ভরবো না’। এই বলে সে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

এমইউ/এসএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।