ক্লাব মূল্যায়ন না করলে নিজের রাস্তা দেখবেন আলফাজ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, ০৪ জুন ২০২৩

মঙ্গলবার কুমিল্লায় আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনায় মোহামেডান। যদিও এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা মোহামেডানের জন্য বড় কিছু নয়। তবে দীর্ঘদিন পর সাদা-কালোরা দৃশ্যপটে আসায় ঘরোয়া ফুটবলে অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই আলোচনাটা বেশি ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি নিয়ে।

একঝাঁক তরুণ ফুটবলার নিয়ে টুর্নামেন্ট বাজিমাত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ। শফিকুল ইসলাম মানিকের সহকারী হিসেবে কাজ করা আলফাজ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকে পেয়েছেন প্রধান কোচের দায়িত্ব।

মানিককে অব্যাহতি দিয়ে আলফাজকে দায়িত্ব দিতেই মাঠে সাফল্য পেতে শুরু করে মোহামেডান। ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দল কিংসকে বিদায় করে ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। লিগের প্রথম পর্বে বাজে ফলাফল করা ক্লাবটি দ্বিতীয় পর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ভালোভাবেই।

ফুটবল অঙ্গনে এখন আলোচনায় আলফাজ। যার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন বেশ কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরা কিংসের দায়িত্ব পালন করা স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং আবাহনীর কোচ মারিও লেমোস। প্রো-লাইসেন্সধারী দুই কোচের কাছ থেকে ফেডারেশন কাপটা ছিনিয়েই নিয়েছেন ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ আলফাজ আহমেদ।

২০১৫ সালে নারী দলের দায়িত্ব নিয়ে মোহামেডানের কোচ হিসেবে অভিষেক হয়েছিল আলফাজের। তার নেতৃত্বে মোহামেডান নারী লিগে রানার্সআপ হয়েছিল। তারপর ৩ বছর কোচের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলে।

সেখান থেকে ২০১৯ সালে তার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় উত্তর বারিধারার ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। টানা তিন মৌসুম ধরে তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর মধ্যে দুই মৌসুম ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান শন লেনের অধীনে, এ মৌসুমের অর্ধেক সময় ছিল সফিকুল ইসলাম মানিকের অধীনে।

২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঘরোয়া ফুটবলের কোনো শিরোপা জেতেনি মোহামেডান। দীর্ঘ ৯ বছর পর ট্রফি জিতিয়ে দিয়ে আলফাজ এখন মোহামেডানের মহানায়ক। আক্রমণাত্মক দর্শণে কোচিং করানো আলফাজ ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ভোজবাজির মতো ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে।

কী কারিশমা ছিল আপনার? দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঝুলিতে কী রহস্য লুকিয়ে রেখেছিলেন? আলফাজের জবাব, ‘দেখুন, আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি দেশি ও বিদেশিদের সংমিশ্রণে দল গড়তে, যাতে ৯০ মিনিট পুরো স্ট্যামিনা নিয়ে খেলতে পারে।’

তাহলে শুরুতে দলের অবস্থা এমন ছিল কেন? আলফাজ বলেন, ‘ওটা আমার কৌশল ছিল। আবাহনীকে ক্লান্ত করাই ছিল লক্ষ্য।’

সেটা করতে গিয়ে দুই গোল হজম করে তো বিপদে পড়েছিলেন। বিরতির সময় ভেবেছিলেন ফাইনালের মতো ম্যাচে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে আবার ফিরতে পারবেন? ‘আসলে একটু বিচলিত ছিলাম। কিন্তু ফুটবলারদের আমি বলেছিলাম, এ মৌসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচে আমরা পিছিয়ে পড়ে জিতেছি। আমাদের অলআউট খেলতে হবে। ৪৫ মিনিটের ম্যাচ মনে করে নতুন করে শুরু করতে হবে এবং জিততে হবে। ছেলেরা আমার পরিকল্পনা মতো খেলেছে’-বলছিলেন মোহামেডানকে ৯ বছর পর কোনো ট্রফি উপহার দেওয়া আলফাজ।

একে তো ফাইনাল, তার ওপর প্রতিপক্ষ আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধে আপনার কোন কৌশলটা প্রতিপক্ষকে কাবু করতে সাহায্য করেছে? আলফাহজ বলেন, ‘তিনটি পরিবর্তন। জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে মাঠে নামিয়েই সবকিছু বদলে দিয়েছি।’

মোহামেডানের সঙ্গে আপনার চুক্তি কত বছরের? আগামী মৌসুমে কি আপনাকে সাদা-কালো ডাগউটে দেখা যাবে? জবাবে আলফাজ বলেন, ‘চলতি মৌসুম পর্যন্ত সহকারী কোচ হিসেবে মোহামেডানের সঙ্গে আমার চুক্তি আছে। লিগের মাঝপথে আমি প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। ক্লাবের সঙ্গে এ নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। এখনো লিগের খেলা বাকি আছে। আমি ক্লাবের দিকে তাকিয়ে আছি।’

ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ২০২৪ সালে এএফসি কাপ খেলার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মোহামেডানের। দেড়যুগ পর আন্তর্জাতিক আসরে খেলতে হলে মোহামেডানকে এএফসির ক্লাব লাইসেন্সিং করতে হবে। তখন ক্লাবকে একজন প্রো-লাইসেন্সধারী কোচ নিয়োগ দিতেই হবে।

তখন তো থাকলে আপনাকে আবার সহকারী পদে ফিরে যেতে হবে? ‘ক্লাব বিদেশি কোচ আনার পর আমাকে থাকতে হলে তো সহকারী হিসেবেই থাকতে হবে। কথাবার্তায় বনিবনা হলে থাকতে তো সমস্যা নেই। ক্লাব যদি আমার চাহিদা পূরণ না করে বা মূল্যায়ন না করে তাহলে আমাকে নিজের পথ ধরতে হবে। তবে এখনো লিগ শেষ হয়নি। তাই আপাতত ওসব নিয়ে ভাবছি না। দেখি ক্লাব কী বলে’-বলছিলেন আলফাজ।

আপনি ‘এ’ লাইসেন্স করেছেন। প্রো-লাইসেন্স করার পরিকল্পনা নেই? আলফাজ বলেন, ‘অবশ্যই আছে। এর পরই আমি প্রো-লাইসেন্স করার উদ্যোগ নেবো।’

আগামী মৌসুমে আলফাজ আহমেদকে মোহামেডানেই দেখা যাবে কিনা? জানতে চাইলে ক্লাবটির পরিচালক ও ফুটবল দলনেতা আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স বলেন, ‘আগামী মৌসুমেও আলফাজ আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমরা এবার বিদেশি কোচ আনবো। বিদেশি কোচের সঙ্গে যথার্থ মূল্যায়ন করেই আলফাজকে রাখা হবে।’

আরআই/এমএমআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।