সন্মিত্রা আজ শুধু তোমাকেই প্রয়োজন


প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘একটি জীবন করে অন্যটির আশা/এরই নাম দিয়েছে মানুষ প্রেম ভালোবাসা।’ অল্প কয়েকটা সহজ কথায় ভালোবাসার সহজ সঙ্গায়ন পাওয়া যায় বাউল আব্দুস সালামের গানে। শুধু বাউল আব্দুস সালাম নয় এরকম নানাজনে নানা সময়ে ভালোবাসার ব্যাখ্যা করেছেন।

গৌরী প্রসন্ন মজুমদার ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘কে তুমি আমারে ডাকো অলখে লুকায়ে থাকো ফিরে ফিরে চাই দেখিতে না পাই।’ রূদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘বিস্মৃতির বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছি একা, কেউ আসছে না। না স্বপ্ন, না ঘুম, কেউ নয়। আঁধারপুরের বাস কতোদূর থেকে তুমি আসো?’। কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন, ‘আকালের এই কালে সাধ হলে পথে ভালোবেসো, ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে আসো যদি লাল শাড়িটা তোমার পরে এসো।’

জন্ম থেকেই মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। চাই মনের মতো সন্মিত্রা। চাই একজন মনের মতো সঙ্গী বা সঙ্গিনী। ভালো থাকার চেষ্টায় ভালোলাগার মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতা প্রতিবছর এই ১৪ ফেব্রুয়ারিতে আরো বেশি করে ধরা দেয়। কেউবা মনে করেন ভালোবাসা কোনো বিশেষ দিবস নয়, এটা সব সময়ের একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া।

ঋতুরাজ বসন্তের আজ দ্বিতীয় দিন। গায়ের বসন্ত বরণের হলুদ পোশাক ও ফুলের গন্ধ এখনো যায়নি। এর পরের দিনই ভালোবাসার লাল রঙে রাঙিয়ে নিয়েছেন ভালোবাসার কাঙালরা। রোদের চোখা রশ্মিতে হিমেল হাওয়ার মায়াবী ছোঁয়ায় এক অপূর্ব অনুভূতির বাতাস বইছে প্রকৃতিতে। সেই হাওয়ায় প্রকৃতিতে বয়ে চলেছে পুরো বসন্তের ভালোবাসা ও ভালোলাগার ছোঁয়া।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ভ্যালেনটাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরো পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিতো। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

তারুণ্যের অনাবিল আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে সারা বিশ্বের মতো ভারত উপমহাদেশসহ বাংলাদেশেও বেশ উৎসবমুখরভাবে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবসটিতে তারুণ্যের ভালোবাসা ছড়িয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার মতো দেশের নানা প্রান্তে। এই ছোঁয়ায় উচ্ছ্বসিত উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ্য বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। ভালোবাসার আনন্দে মেতে উঠে প্রজাপতির ডানায় ভাসছে তরুণ জুটিরা। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে ছোটো ছোটো প্রেমবার্তা ধ্বনিত হচ্ছে আকাশে-বাতাসে।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অধরা মাধুরী পরমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর লক্ষ্য করি ভালোবাসা দিবস আরো সাড়ম্বর হয়ে উঠছে। তবে আমার মতে ভালোবাসা শুধু একটি সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমি চাই, এ সকল ভালোবাসা মানবপ্রেমে পরিণত হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভালোবাসা শুধু বিশেষ কোনো দিবসের জন্য নয়। এটা সব সময়ের। আমার প্রিয় মানুষটি এখন আমার কাছে নেই। কিন্তু এতে আমার ভালোবাসা কোনো অংশে কমেনি। বরং তা আরো বেড়েছে।’

আজকের এ ভালোবাসা শুধুই তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।’

বাঙালি সংস্কৃতিতে ষড়ঋতু বসন্তকে নিয়ে ভালোবাসার যেন কমতি নেই। ভালোবেসে ভালো থাকার ভালো লাগা থাকুক পুরোটা সময়জুড়ে এ প্রত্যাশা সবারই। বসন্তের ঝরাপাতার মতো ভালোবাসার স্পর্শ শুধু ফাগুনের জানালায় নয়, দাঁড়িয়ে থাকুক সব ঋতুর, সব মাসের প্রত্যেক দিনের জানালায়।

রাশেদ রিন্টু/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।