সব আলো কেড়ে নিচ্ছেন তামিম

মুস্তাফিজুর রহমানই ছিলেন সবচেয়ে বড় তারকা। তার মাঠে নামা মানেই গ্যালারিতে দর্শকরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাবেই। আর তিনি যখন বল হাতে দৌড় শুরু করেন, তখন তো একধরনের সূর ওঠে যেন গ্যালারিতে। যে সূর আর মুস্তাফিজের কাটার সমানভাবেই বিদ্ধ করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে।

শ্রীলংকার বিপক্ষে পেশির চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছেন মুস্তাফিজ। পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুপস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা। শুধু তাই নয়, এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন তিনি। মুস্তাফিজ না থাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচে সমস্ত আলো এখন ব্যাংকক থেকে উড়িয়ে আনা তামিম ইকবালের ওপর!

মুস্তাফিজুরের পরিবর্তে তামিমকে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন গত সোমবার দুপুরে করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সোমবার রাতে তা অনুমোদন করে এসিসিরি টেকনিক্যাল কমিটি। সেই নতুন অস্ত্র নিয়েই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের ছক কষছে টিম বাংলাদেশ।

পর পর দু’টি টি২০ সিরিজে ভাল পারফর্ম করেছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার। এছা[ড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে ৯ ম্যাচে ২৯৮ রান (গড় ৩৭.২৫), করার পর পাকিস্তান সুপার লিগেও ৬ ম্যাচে ২৬৭ (৬৬.৭৫) করেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহককে বাইরে রেখেই এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করতে হয়েছিল বিসিবিকে।

আগাম পিতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন মঞ্জুর করায় এশিয়া কাপে খেলা থেকে তামিমকে বিরত রাখা ছাড়া উপায়ও ছিল না বিসিবি’র।  সেই তামিমই কি না সন্তান জন্মানোর ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই নবজাতককে রেখে উড়ে এসেছেন ঢাকায়। গত সোমবার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে এসে কোচ হাতুরুসিংহের সঙ্গে দেখা করে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন এই বাঁ হাতি ওপেনার।

মঙ্গলবার অনুশীলনে সবার মধ্যমণি তামিম। বাবা হওয়ায় সতীর্থদের অভিনন্দন পর্ব অনেক বেশি চাঙ্গা রেখেছে তামিমকে। তবে ২ দিনের ছেলেকে ব্যাংককে রেখে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার একমাত্র কারণ কিন্তু মুস্তাফিজুরের ইনজুরি নয়, মঞ্জুর হওয়া ছুটি কাটিয়ে ১ মার্চে ঢাকায় ফেরার শর্তটা আগেই দিয়েছিল বিসিবি। চোট পেয়ে এশিয়া কাপের দল থেকে মুস্তাফিজুরের ছিটকে পড়ায় ছুটি শেষ হওয়ার এক দিন আগেই ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। এ তথ্যই দিয়েছেন টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন।

সুজনের মতে, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তো ধর্মশালায় অনুশীলন ম্যাচ খেলা হচ্ছে না আমাদের। তাই তামিমকে এশিয়া কাপে অন্তত একটি ম্যাচে খেলানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছি না। ওকে এমনিতেই আসতে হত। দলের সঙ্গে অনুশীলন করতেও হত। ছুটি নিয়ে ব্যাংককে যাওয়ার আগে বলা হয়েছিল সম্ভব হলে সন্তান জন্মানোর পরপরই যেন চলে আসে।’

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তামিম। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচের সব ক’টিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬টি ওয়ানডেতে তামিমের রেকর্ডও ঈর্ষনীয়। ৪ হাফ সেঞ্চুরি এবং একটি সেঞ্চুরি। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫ ইনিংসের একটিতেও ৫০-এর কম রান করেননি তিনি।

সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা তো ছিল তামিমেরই সিরিজ। ১৩২, ১১৬* এরপর ৬৪! টেস্টে ক্যারিয়ারের তামিম একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটাও (২০৬) পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৯ মাস আগে তামিমের এমন পারফরম্যান্সেই পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।

ওপেনিংয়ে সৌম্য’র সঙ্গে বোঝাপড়াটাও দারুন তাঁর। বিপিএল ‘থ্রি’তে চট্টগ্রাম ভাইকিংসে তামিমের অধিনায়কত্বে খেলেছেন আমের। নেটে আমেরের শত শত বল মোকাবিলা করেছেন তিনি। ওই আসরেই পাকিস্তানি পেসারের সব গোপন অস্ত্র জেনে গেছেন তিনি। পিএসএলে করাচি কিংসের হয়ে আমেরের বল মোকাবিলা করেছেন তিনি। ফর্মে থাকা ওপেনার তামিমকে পেয়ে তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ জয়ের ছঁক কষছেন কোচ হাতুরুসিংহে। বললেন, ‘ওপেনিং নিয়ে এখন আর কোনও দুর্ভাবনা নেই। তামিম সরাসরি ওপেনিংয়ে নামবে। গত বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজার রান করেছে, উপরের দিকে ও-ই আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। এ ধরনের ক্রিকেটার সব সময়ই উপকারে আসবে।’

তামিমকে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন মাশরাফিও। অধিনায়কের মতে, ‘তামিমের না থাকা সব সময় আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। সব ফরম্যাটে সে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম অনেক দিন ধরে খেলছে, সে অনেক অভিজ্ঞ।’

আইএইচএস/এবিএস