সোশ্যাল মিডিয়া: আত্মবিশ্বাস না হতাশা?

সোশ্যাল মিডিয়া যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকাল থেকে শুরু করে রাতের ঘুম পর্যন্ত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব কিংবা এক্সের স্ক্রলে ডুবে থাকি। যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে শুরু হলেও এটি এখন বিনোদন, ক্যারিয়ার, আত্মপ্রকাশ এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে এই দৃষ্টিনন্দন ও উজ্জ্বল দুনিয়ার পেছনে লুকিয়ে আছে কিছু অন্ধকার দিকও। প্রশ্ন ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়া আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, নাকি মন খারাপ আর হতাশার গভীরে ডুবিয়ে দিচ্ছে?
অনেকের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া আত্মপ্রকাশের মুক্তমঞ্চ। যাদের বাস্তব জীবনে মঞ্চে ওঠার সুযোগ নেই; তারাও এখানে নিজের গান, কবিতা, আঁকা, রান্না, মতামত বা স্টাইল শেয়ার করতে পারেন। প্রতিক্রিয়ায় লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার পেলে আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে; তেমনই নিজের একটি স্বীকৃতি অনুভব করেন।
অনেক তরুণ-তরুণী সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিতি তৈরি করছেন। গ্রামীণ এলাকার একজন কিশোরী তার রান্নার ভিডিও দিয়ে লাখো দর্শকের মন জয় করছেন। আবার কেউ তার জীবন-সংগ্রামের গল্প শেয়ার করে মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন। এই প্ল্যাটফর্ম অনেকের জন্যই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ।
আবার এর ভিন্ন চিত্রও আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রলে চোখ বোলাতে গিয়ে বারবার চোখে পড়ে ঝলমলে ছবি, সাজসজ্জা, ঘোরাঘুরি, দামি পোশাক, সম্পর্কের নিখুঁত মুহূর্ত। যেগুলো অনেকাংশেই সাজানো ও পরিকল্পিত। ব্যবহারকারীরা সেগুলোকেই বাস্তব ধরে নেন। তখন নিজের সাধারণ জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়। অন্যের সাফল্য দেখে মন ভারী হয়ে যায়।
আরও পড়ুন
বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ প্রজন্ম এ তুলনার ফাঁদে সহজেই আটকে পড়ে। অন্যের সৌন্দর্য দেখে নিজের শরীর নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। কেউ যদি চটজলদি ক্যারিয়ারে সফল হয়; তখন নিজের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা আসে। এতে আত্মমূল্যবোধ কমে যায় এবং তৈরি হয় চাপ, উদ্বেগ ও কখনো কখনো বিষণ্ণতা।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব যে একপাক্ষিক নয়, তা পরিষ্কার। এটি যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে; তেমনই ভুল ব্যবহার হতাশায় ফেলতে পারে। তাই দরকার সচেতন ব্যবহার। আমাদের বুঝতে হবে, অন্যদের জীবনের যে অংশটা আমরা দেখি, তা সম্পূর্ণ নয়। বাস্তবতার তুলনা করতে হবে বাস্তবতার সঙ্গেই। সাজানো ছবির সাথে নয়।
সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজের ও আত্মউন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সৃজনশীল কনটেন্ট বানানো, শেখার ভিডিও দেখা, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা, এসব ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দিলে; এটি হয়ে উঠতে পারে এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
সোশ্যাল মিডিয়া এক দারুণ সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম। তবে এর দায়িত্বশীল ব্যবহার না করলে সেটি আত্মবিশ্বাসের বদলে হতাশা ডেকে আনতে পারে। তাই দরকার নিজের পরিচয়, সক্ষমতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে আত্মজ্ঞান। যাতে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের আত্মবিশ্বাসের সিঁড়ি হয়ে উঠতে পারে; হতাশার নয়।
এসইউ/এমএস