দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দেখার নতুন প্রযুক্তি
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দেখার অনুভূতি জাগাতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন ইসরায়েলের গবেষকরা। মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে গবেষণা করছেন তারা। এক ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিকে অন্য ইন্দ্রিয়ে স্থানান্তরের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দেখার অনুভূতি জাগানো সম্ভব বলে সম্প্রতি ন্যাচার ল্যাঙ্গুয়েজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানান হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে সেন্সরি সাবস্টিটিউশন ডিভাইস (এসএসডি) নামের বিশেষ এক যন্ত্র। এটি মানুষের এক ইন্দ্রিয়ের তথ্য অন্য ইন্দ্রিয়ে পরিচালন করে। এতে কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট ইন্দ্রিয় অকার্যকর হলেও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাতে তথ্য লেনদেন সম্ভব।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিজ্ঞানীরা দৃষ্টিহীনদের মানসিক অবস্থার ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। এ গবেষণার মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তাদের মস্তিষ্কে কীভাবে বিভিন্ন তথ্য সঞ্চালন করেন, তার ধারণা পাওয়া গেছে। এ ধারণা ব্যবহার করেই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এগোনো সম্ভব হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কোনো ব্যক্তি স্পর্শ বা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোনো বিষয়বস্তু দেখার অনুভূতি পাবেন। হাতের স্পর্শ বা সে বিষয় সম্পর্কে শুনে বিষয়টি কী রকম বা এর রঙ কী হবে, তার অনুভূতি পাবেন। এসএসডির সঙ্গে স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যাম যুক্ত করতে হবে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা বা ওয়েবক্যাম, স্পর্শ বা শ্রবণশক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে বস্তুটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনুভূতি দেবে।
এ বিষয়ে হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির আমেদি বলেন, ‘এ ডিভাইস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রাত্যহিক জীবনে সহায়তা করবে।’ সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো অক্ষরও পড়তে পারবেন। এ ডিভাইস ইন্দ্রিয়-সংক্রান্ত গবেষণার পরিধি বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আশাবাদী আমির আমেদি। তিনি বলেন, ‘এ ডিভাইস-সংশ্লিষ্ট খাতে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এক ইন্দ্রিয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অন্য ইন্দ্রিয়ে লেনদেনের পর মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণায় ডিভাইসটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
এ গবেষণায় ফাংশনাল এমআরআই ইমেজিং (এফএমআরআই) ও এসএসডি ব্যবহার করা হয়েছে। এফএমআরআই ব্যবহার করা হয়েছে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া জানতে এবং এসএসডি ব্যবহার করা হয়েছে শব্দের মাধ্যমে কোনো বস্তুর অবস্থান জানান দিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, দৃষ্টি বা শ্রবণের চেয়ে স্পর্শ ইন্দ্রিয়ই মস্তিষ্কের তথ্য পাঠাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আর এর মাধ্যমে খুব সহজেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে দেখার অনুভূতি দেয়া সম্ভব হবে।
এ প্রযুক্তি এখনো গবেষণার পর্যায়েই রয়েছে। এ প্রযুক্তির বাস্তবায়ন করা গেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও সাধারণের মতো করে দেখার অনুভূতি পাবেন। আর এতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য লেখাপড়া থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক অনেক কাজই সহজ হয়ে যাবে। প্রযুক্তিটিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার গবেষকদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
