ক্ষুদ্র ব্যবসায় বাড়ছে সফটওয়্যারের ব্যবহার


প্রকাশিত: ০৮:৩২ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৪

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম। এক বছর ধরে নিজের মুদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রুমন এন্টারপ্রাইজের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় সফটওয়্যার ব্যবহার করে আসছেন। এর মাধ্যমে প্রতিদিনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে যেমন হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেন তিনি, তেমনি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

শুধু রেজাউল করিমই নন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন অনেক উদ্যোক্তা এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে সুষ্ঠু ও সহজভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। আর এক্ষেত্রে তাদের সফলতা অন্য উদ্যোক্তাদেরও সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলছে।

রেজাউল করিম বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আগের চেয়ে অনেকখানি স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। এছাড়া সফটওয়্যার ব্যবহার করায় ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। অনেক ক্রেতাই তাদের সারা বছর কিংবা মাসের পণ্য ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য জানতে চান। সফটওয়্যারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এসব তথ্য সংরক্ষিত থাকছে। ফলে কোনো ক্রেতা চাইলেই তার ব্যবহারকৃত নির্দিষ্ট পণ্যের হিসাব জানতে পারছেন।

জানা গেছে, রুমন এন্টারপ্রাইজে বর্তমানে ১২ জন কাজ করছেন। কম্পিউটারের অপ্রতুলতার কারণে তাত্ক্ষণিকভাবে লেনদেনের হিসাব রাখা সম্ভব হয় না। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী খাতায় লিপিবদ্ধ প্রতিদিনের হিসাব নিয়মিত সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করছেন।

সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, বড় অনেক প্রতিষ্ঠানই সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এতে নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি বলেন, গত এক বছরে সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বচ্ছ ও সহজ হয়েছে। তবে বাংলায় এ ধরনের সফটওয়্যার সহজলভ্য হলে তা আরো উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তুলবে।

একসময় শুধু বড় প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও মজুদের তথ্য সংরক্ষণে সফটওয়্যার ব্যবহার হতো। পরবর্তীতে মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে এটি। আর গত কয়েক বছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে এ ধরনের কাজে সফটওয়্যারের ব্যবহার বেড়েছে। মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উপযোগী সফটওয়্যারের সহজলভ্যতা ও এর ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সাফল্য এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাড়ার ছোট মুদি দোকান থেকে শুরু করে তুলনামূলক বড় আকারের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার হচ্ছে সফটওয়্যার। এর মধ্যে রয়েছে পাইকারি ও খুচরা দোকান, ওষুধের দোকান, ফোন-ফ্যাক্স, ফটোকপি, স্টেশনারি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি। জানা গেছে, সারা দেশে সাড়ে চার লাখের বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা মূলত অ্যাকাউন্টিং ও ইনভেন্টরি সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। তুলনামূলক কিছুটা বড় আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারও ব্যবহার করছে।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যের মজুদ কিংবা প্রতিদিনের বিক্রির তথ্য সংরক্ষণে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে সফটওয়্যার। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, অ্যাডভান্স বাংলা সফটওয়্যার টেকনোলজি, অ্যাডভান্সড ইআরপি (বিডি), অ্যাপ্লিকেশন সলিউশন্স, বাংলাদেশ মাইক্রো টেকিনোলজি, বেস্ট বিজনেস বন্ড, সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্সেস, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, হাবিব ইন্টেলিজেন্ট সফটওয়্যার, আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স সফটওয়্যার (বিডি), মিডিয়াসফট ডাটা সিস্টেমস, স্যাটকম আইটি, সাউথটেক ও দ্য ডাটাবেজ সফটওয়্যার।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার স্বাধীন টেডার্সের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, দিন শেষে বিক্রীত পণ্য থেকে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব সরবরাহকৃত মজুদের সঙ্গে সমন্বয় করে করা প্রায় অসম্ভব। আর এজন্য কর্মচারীদের বিশ্বস্ততার ওপরই নির্ভর করতে হয়। তিনি জানান, সফটওয়্যারের ব্যবহার এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে সহজেই। প্রতিদিনের বিক্রির পরিমাণ সংরক্ষণ করে সফটওয়্যার। ফলে মজুদের পরিমাণ সম্পর্কেও হালনাগাদ থাকেন ব্যবসায়ী।

সম্প্রতি দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেস্ট বিজনেস বন্ড লিমিটেড (থ্রিবিএল) ওষুধ কেনা-বেচার বা ফার্মেসির ব্যবসা পরিচালনার উপযোগী করে ত্রয়ী-ফার্মা নামে একটি নতুন সংস্করণ চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, ২১০টি ওষুধ কোম্পানির ১৪ হাজার ওষুধের নাম, ইউনিট (মাল্টিপল ইউনিট-বক্স, কার্টুন ও পিস), ফরমুলেশন, ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি সন্নিবেশিত রয়েছে এ সফটওয়্যারে। ব্যবহারের স্বাচ্ছন্দ্যতার জন্য বিক্রয় কর্মীদের আইডি বা পাসওয়ার্ড তৈরি করা, তৈরি করা বিল মুছে ফেলতে না পারা, প্রয়োজনে বিক্রীত ওষুধ ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করা, দিন শেষে সরবরাহকৃত মজুদ অনুযায়ী প্রাপ্ত টাকার হিসাব করা, কোম্পানিগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি বিদ্যমান মজুদের অবস্থা দেখে নতুন করে অর্ডার দেয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

থ্রিবিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল জানান, অন্য অনেক ব্যবসা থেকে আলাদা ওষুধের ব্যবসা। প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন রোগ চিকিত্সা ও প্রতিরোধের জন্য দেশী-বিদেশী ওষুধ কোম্পানিগুলোর রয়েছে অনেক ধরনের ওষুধ। একই ওষুধ বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নামে উত্পাদন করে। হাজার হাজার ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদের সঠিক হিসাব রাখা কষ্টসাধ্য। মজুদ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বা স্বল্পমেয়াদের ওষুধ খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলা আরো কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমেই এসব হিসাব রাখা অনেক সহজ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সূত্রে জানা গেছে, দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবা (আইটিইএস) খাতের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেড় হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান ৭৪৮। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার ধরতে ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে বিভিন্ন নতুন নতুন সফটওয়্যার নিয়ে আসছে। দেশে সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের বাজার রয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। এর বাইরে আরো প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি হচ্ছে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।