ইয়ুথ টেক সামিট

ভয় কাটিয়ে এআই জয়ের রসদ নিয়ে ফিরলেন তরুণরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ২২ মে ২০২৪

রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে হয়ে গেল দেশের প্রথম ‘ইয়ুথ টেক সামিট’। বুধবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চার ঘণ্টাব্যাপী চলে এ অনুষ্ঠান। ‘আর ইউ রেডি ফর এআই’ শীর্ষক সামিটে সারাদেশের প্রায় এক হাজার তরুণ-তরুণী অংশ নেন। ঘুরে-ফিরে সবার কণ্ঠেই ছিল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) যুগে টিকে থাকা নিয়ে ভয়-শঙ্কার সুর।

তরুণ-তরুণীদের এআই-ভীতি রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন অ্যাডটেক ওস্তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ বড়ুয়া। জানালেন কীভাবে নিউ টেকনোলজিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে এবং ভয়কে জয় করতে হবে। গল্পে গল্পে তিনি বলেন, ‘ই-লার্নিংয়ে ডোপামিনটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া আমি তো মনে করি এআই এমন কিছু জব (কাজের ক্ষেত্রে) সৃষ্টি করবে, যার ভ্যালু হবে আরও বেশি।’

ভয় কাটিয়ে এআই জয়ের রসদ নিয়ে ফিরলেন তরুণরা

প্রথম ইয়ুথ টেক সামিটের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে এআই বিপ্লব শুরু হলো বলে উল্লেখ করেন ভিসিপিএবি প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান। তিনি বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে কীভাবে সেরা সমাধান দেওয়া যায়, সেদিকেই সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। কো-ফাউন্ডিং টিম গড়তে পারলে এক্ষেত্রে সহসাই সফলতা ধরা দেবে।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন বলেন, আমরা মিনিংফুল অটোমেশন নাকি হেডলেস অটোমেশন চাই, সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে ওয়ান সাইট কিডস অল থেকে বেরিয়ে ফেস এভরিথিংক অ্যান্ড রাইজ দর্শনে নোঙর করতে হবে।

এ তো গেলো এআই জয় করার প্রত্যয়ের গল্প-পরামর্শ। সামিটে তরুণ উদ্যোক্তা ও সফল উদ্যোক্তা উভয়ের কণ্ঠে উঠে এসেছে আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানোর দাবি। জেসিআই সভাপতি ইমরান কাদির বলেন, বৈশ্বিক হিসাবে বাংলাদেশ অত্যন্ত ছোট জায়গা। এত ছোট জায়গায় ১৮ কোটি মানুষের বাজার বড়ই সম্ভাবনার। ইতিবাচক চিন্তা করলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এ কারণে চ্যাট-জিপিটির মতো লার্নিং টুলসগুলোর ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরও কয়েক বছর উঠিয়ে নেওয়া খুবই প্রয়োজন।

স্পষ্ট করে আরও তিন বছর কর অব্যাহতির দাবি জানান ভিসিপিএবি প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গ্র্যান্ট বা ফ্রি মানি চাই না। আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য অনুকূল পরিবেশ চাই। এজন্য আগামী বছরতিনেক কর অব্যাহতি রেখে পরে ধীরে ধীরে সহনীয় হারে করারোপ করা যেতে পারে।’

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ও বেসিসের সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর এবং মোটিভেশনাল স্পিকার গোলাম সামদানি ডনের সঞ্চালনায় সম্মেলনের শেষেও আয়োজকদের হাতে দেখা যায় বিনিয়োগের এ সুসময়ে কর চাপিয়ে না দেওয়ার আহ্বান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

ভয় কাটিয়ে এআই জয়ের রসদ নিয়ে ফিরলেন তরুণরা

নিউ টেকনোলজি ও কর অব্যাহতির আলোচনার মধ্যে উঠে আসে বিনিয়োগের নানা উৎসের আলোচনাও। সেখানে তরুণ উদ্যোক্তাদের অভয় দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকে আমি কোনো প্রতিবন্ধকতা মনে করি না। তরুণরা যদি উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা নিয়ে আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাহলে প্রাণ-আরএফএল বিনিয়োগ নিয়ে তাদের পাশে থাকবে। তরুণদের মেধা, আমাদের বিনিয়োগ—সম্মিলিত এ প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

উইন্ড অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ আহমেদ নিজের গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘এ প্রজন্মটা আচরণে অস্থির। সফল হতে হলে চার-ছয় হাঁকানোর বদলে এক-দুই রান নিয়ে ক্রিজে টিকে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’

দেশে যখন রাইড শেয়ার নিয়ে ধুন্ধুমার, তখন কীভাবে ফিনটেক গড়ে তুলেছিলেন, সেই গল্প শোনান ফিনটেক লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কিশোর হাসেমী।

আরেকটু সহায়তা পেলে আইএমএফের ঋণের চেয়ে দেশের স্টার্টআপরাই সামনে আরও বড় বিনিয়োগ আনতে পারবেন বলে মনে করেন এয়ারওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সায়েম ফারুক।

আরও পড়ুন

বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার বললেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রির ভালো গল্পগুলো বলতে ও শুনতে পছন্দ করি। আজকের প্রতিটি গল্প মানে আগামীর রসদ। আমাদের সফলতার পেছনে বিনিয়োগ। একই মঞ্চে দেশের ১২ জন সফল উদ্যোক্তার গল্পগুলো অনন্য এক মাইলফলক।

সামিটের সবচেয়ে কম বয়সী উদ্যোক্তা ডেভস কোর সিইও আশরাফুল ইসলাম। ২৪ বছল বয়সী এ উদ্যোক্তা জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রে এআই নিয়ে স্নাতক করার সময় তাকে শুনতে হয়েছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট আছে কি না। বাংলাদেশ নিয়ে এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উত্তরণে তরুণদের নেটওয়ার্কিং, কমিউনিকেশনে দক্ষ-যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।

ভয় কাটিয়ে এআই জয়ের রসদ নিয়ে ফিরলেন তরুণরা

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু বলেন, সুযোগ পেলে আজকের তরুণরাই বিশ্বে দেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করবে।

ক্যারিয়ারবিষয়ক লেখক মুহাম্মাদ আলতামিশ নাবিল উপস্থিত তরুণদের কুয়োর ব্যাঙ না হয়ে কীভাবে আরেকটু ভালো থাকা যায়, সেজন্য নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ তরুণ উদ্যোক্তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। সকাল ৯টায় একে একে সবাই প্রবেশ করেন মিলনায়তনে। সফল উদ্যোক্তাদের গল্প শুনতে জায়গা না পেয়ে অনেকে বসে পড়েন মেঝেতেও। সবার দৃষ্টি মঞ্চের দিকে। শুনছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। লক্ষ্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপটে টিকে থাকার লড়াইয়ের রসদ জোগাড়।

এএএইচ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।