প্রিয় মানুষের সঙ্গে দিল্লির দিনের গল্প
ফয়সাল ভাই; এক অনন্য আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব আর সৌন্দর্যবোধের মানুষ। যার সঙ্গে দিল্লির দিনের এই গল্প। দিল্লি শহরে বহুবার এসেছি, বহু স্মৃতি জমা হয়েছে এই বিস্তীর্ণ শহরের পথে-ঘাটে। কিন্তু প্রতিবারই আমার সফরের সবচেয়ে উষ্ণ আর আপন মুহূর্তগুলো তৈরি হয়ে যায় এক মানুষকে কেন্দ্র করে, ফয়সাল ভাই। তিনি শুধু বাংলাদেশের দিল্লি অ্যাম্বাসির প্রেস মিনিস্টার নন; তার চেয়েও বড় কিছু। তার ভেতরে আছে এক অদ্ভুত নম্রতা, গভীর আতিথেয়তার রীতি আর বন্ধুত্বের এক অসাধারণ শক্তি, যা মানুষকে প্রথম সাক্ষাতেই তার প্রতি টেনে আনে।
আমি যখনই দিল্লিতে আসি, আমার থাকার জায়গা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। কারণ আমি জানি, ফয়সাল ভাই থাকলে আমার জন্য তার বাড়ির দরজা সব সময় খোলা। তিনি এমন মানুষ; যিনি একরাত হলেও আমাকে না রেখে শান্তি পান না। সেই একই উচ্ছ্বাস, একই আন্তরিকতা এবারও পেলাম তার কাছ থেকে। যেন দূরে অন্য দেশে থাকা সত্ত্বেও নিজের আপন ঘরে ফিরে এসেছি।

ফয়সাল ভাইয়ের সঙ্গে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা প্রতিবারই নতুন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। তিনি প্রচুর ভ্রমণ করেন, করেন ট্রেকিং, তাই তার দৃষ্টিভঙ্গিতেও থাকে একধরনের গভীরতা। তাকে নিয়ে কোথাও গেলে শুধু জায়গা দেখা হয় না, জায়গাকে অনুভব করা হয়। দিল্লির ব্যস্ত রাস্তাগুলো পেরিয়ে, লাল কেল্লার প্রাচীন ইটগুলো দেখে, পুরোনো দিল্লির গন্ধে রঙে ভেসে যেতে যেতে বুঝতে পারি, একজন ভ্রমণকারীর চোখ দিয়ে শহর দেখা এক ভিন্ন সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যের নির্মাতা এই সফরে ছিলেন ফয়সাল ভাই। আমরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছি, গল্প করেছি, পথ চলেছি আর প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হয়েছে সময় যেন আরেকটু ধীর হয়ে যায়, যাতে এই সঙ্গের আনন্দ কিছুটা বেশি উপভোগ করতে পারি।
কিন্তু ফয়সাল ভাইকে শুধু তার আতিথেয়তা বা ভ্রমণপ্রেম দিয়েই বিচার করলে ভুল হবে। তার বাড়িতে পা রাখলেই যেন বোঝা যায় একজন মানুষের সৌন্দর্যবোধ কতটা গভীরে প্রোথিত হতে পারে। বাইরে থেকে দেখলে বাড়িটা ঠিকই সাধারণ, একদম সাদামাটা। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই মনে হয় যেন কোনো শান্ত, সৃজনশীল মানুষের অন্তরজগতের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলাম। দেওয়ালের ওপরে ঝুলছে অসাধারণ সব পেইন্টিং, রঙের মিতালি যেন ভ্রমণ, প্রকৃতি আর মানবিকতার গল্প বলে যায়।

আরও পড়ুন
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের বিস্ময়কর ভ্রমণ
আফ্রিকার মাসাই জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন
বুকশেলফে সাজানো বইগুলোর শৃঙ্খলা শুধু পাঠকপ্রেম নয়, এটা এক ধরনের চরিত্র, যার প্রতিটি স্তরে থাকে জ্ঞান, ভাবনা, আত্মার রুচির ছোঁয়া। কোথাও ছড়ানো নেই, কোথাও জোর করে সাজানো নেই; সবকিছুই নিজের জায়গায়, নিজের অর্থে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে একটি সাধারণ বাড়িকে অসামান্য করে তোলার ক্ষমতা খুব কম মানুষের থাকে। আর ফয়সাল ভাই সেই বিরল মানুষদের একজন।
তার বাড়ির পরিবেশে যে শান্তি, যে আপনত্ব অনুভব করি, তা শুধু সাজসজ্জার জন্য নয়; তার নিজের উপস্থিতির জন্যও। তিনি কথা বলেন ধীরে, হাসেন আন্তরিকভাবে, অতিথিকে নিজের কাজ মনে করেন না; বরং দায়িত্ব মনে করেন। এসব ছোট ছোট মানবিক আচরণই একজন মানুষকে বড় করে তোলে। আর আমি যতবার তার সঙ্গে দেখা করি; ততবারই মনে হয় মানুষ যদি সত্যিই ভালো হতে চায়, তবে তাকে কোনো বিশেষ পরিচয়ের দরকার নেই, দরকার শুধু একটি বিশুদ্ধ হৃদয়।

এই সফরও আমার কাছে তেমনই আরেকটি স্মৃতি হয়ে থাকলো। উষ্ণতা, ভালোবাসায় ভরা আর এক অসাধারণ মানুষের আন্তরিকতায় সাজানো। দিল্লির পথে তার সাথে হাঁটার মুহূর্তগুলো, গল্পের ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে থাকা জীবনের নানা রং, আর তার বাড়ির ভেতরের সেই নীরব সৌন্দর্য সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন, যাদের সঙ্গে দেখা হওয়া মানে নিজের ভালো থাকার একটি নতুন কারণ খুঁজে পাওয়া। ফয়সাল ভাই আমার জন্য ঠিক এমন একজন মানুষ; অসাধারণ, অনবদ্য, নিঃস্বার্থ আর বারবার দেখা হওয়ার মতোই মূল্যবান।
এসইউ