নয়াদিল্লিতে বাংলা সিনে উৎসবে

ফাত্তাহ তানভীর রানা
বেঙ্গল এসোসিয়েশন দেখে ফেসবুকে চোখ আটকে গেল। সেখান থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে অনুষ্ঠানে আমার সিট কনফার্ম করলাম। যথাসময়ে হাজির হলাম সিনেমা দেখতে।
মুক্তধারা অডিটোরিয়ামে ঢুকতেই জানলাম কবি জীবনানন্দ দাশের বায়োপিক ‘ঝরা পালক’ এর শো চলছে। জীবনানন্দ দাশকে চলচ্চিত্রে তুলে আনা কষ্টসাধ্য। তবে পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ের চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না। অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের সাবলীল অভিনয় নজর কেড়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের যে ৫ স্থানে নারীরা নিরাপদে ঘুরতে যেতে পারেন
কবি হাসমত জালাল ও পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় এর ‘ঝরা পালক’ মুভি ও জীবনানন্দ দাশের জীবন নিয়ে আলোচনা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
মুভিতে কবি জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। কবির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রাত্য বসু। সকালে শমীক ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘আস্তরণ’ মুভি দিয়ে উৎসব শুরু হয়।
তবে সন্ধ্যায় ১৬ তম সিনে উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন উৎসবের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও অভিনেত্রী মমতা শংকর। উৎসবে ইভেন্ট ছিল আরও একটি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জন্মশত বছর উদযাপন। ২০২৩ সাল মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ।
আরও পড়ুন: বিশ্বের রহস্যময় এক স্থান ‘লাভ টানেল’
অভিনেত্রী মমতা শংকর তার প্রথম অভিনীত মৃণাল সেন পরিচালিত ‘মৃগয়া’ ছবির স্মৃতিচারণ করেন। উৎসবে আগত অতিথি ও দর্শক মমতা শংকরকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান।
অতিথি হিসেবে ছিলেন মৃণাল সেনের ভাতিজি শুক্লা সেনসহ আরও অনেকেই। মৃণাল সেনের ছেলে কুনাল সেন ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছাসহ উৎসবের সফলতা কামনা করেছেন। সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হয় ধ্রুব বন্দোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কর্ণ সুবর্ণের গুপ্তধন’।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকালে প্রদর্শিত হয় আশিস ব্যানার্জি’র স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হোম কামিং’। এরপর পরমব্রত চট্টপাধ্যায় পরিচালিত ‘বৌদি ক্যান্টিন’। মৃণাল সেন পরিচালিত ‘একদিন প্রতিদিন’ প্রদর্শনের পরে শুরু হয় মৃণাল সেনের সিনেমা নিয়ে আলোচনা ‘মধ্যবিত্ত জীবনের ময়না তদন্ত’।
আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন শিমুল বাগানে
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মমতা শংকর, শ্রীলা মজুমদার, শুক্লা বন্দোপাধ্যায় ও শ্যামল দত্ত। মৃণাল সেনকে নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মৃণালের সন্ধানে’ যা পরিচালনা করেন রাহুল মুখার্জি ও মানস নন্দ।
পরিচালকদ্বয়সহ আয়োজন করা হয় মৃণাল সেনকে নিয়ে সিনে কুইজ। দ্বিতীয় দিনে সর্বশেষ প্রদর্শিত হয় অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘মায়াকুমারী’।
উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রদর্শিত হয় পুলকেশ বন্দোপাধ্যায় পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ডানা’। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অভিধান’। রাজেশ্বর রুদ্র পরিচালিত ‘বাল বাল বাঁচে’। জিত চক্রবর্তী পরিচালিত ‘কথামৃত’।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেশন, একসঙ্গে দাঁড়ায় ৪৪ ট্রেন
মাঝেমধ্যে মৃণাল সেনকে নিয়ে নিয়ে হয় মুক্ত আলোচনা। এতে বর্তমান প্রজন্মের নির্মাতা ও কবি অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটে সিনে উৎসবের।
১৬ তম সিনে উৎসব শেষ হয় সর্বশেষ ‘বল্লভপুরের উপকথা’ প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে। সিনেমাটি পরিচালনা করেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সিনে উৎসবে চলচ্চিত্র পরিচালকদের সম্মানিত করা হয়।
দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন যাত্রা শুরু করে ১৯৫৮ সালে। দিল্লিতে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাষীদের সংস্কৃতি বিকাশ ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরির জন্য বেঙ্গল এসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু হয়।
দিল্লির বেঙ্গল এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন জাস্টিস এম আর সেন, প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. রমেশ চন্দ্র মজুমদার।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিম বাংলার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়। বিভিন্ন সময় জ্ঞানী-গুণীরা বেঙ্গল এসোসিয়েশনের বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি, রাজনীতিবিদ ও লেখক হুমায়ুন কবির তাদের অন্যতম।
সংগঠনটি বিভিন্ন সময় দিল্লিতে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলা বইমেলা, বাংলা সিনে উৎসব আয়োজন করেছে। মুক্তধারা বাংলা সাংস্কৃতিক ভবন, মুক্তধারা অডিটোরিয়াম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বেঙ্গল এসোসিয়েশন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল ‘অংকু’ পরিচালনা করে আসছে।
বর্তমানে দিল্লি বেঙ্গল এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তপন সেনগুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন প্রদীপ গাঙ্গুলী।
বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া এসে রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলা ভাষার সিনে উৎসব উপভোগ করে ভালো লেগেছে। সিনে উৎসব কার্যত বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়।
আমাকে মুগ্ধ করেছে নয়াদিল্লিতে বাঙালিদের এসোসিয়েশনের কার্যক্রম। মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মুক্তধারা বাংলা সাংস্কৃতিক ভবন ও বাঙালি খাবার। বাংলাদেশের বাইরে বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক বড় আয়োজন সত্যিই গর্ব করার মতো।
লেখক: ব্যাংকার ও গল্পকার।
জেএমএস/এএসএম