পাখির কলতানে ঘুম ভাঙে যেখানে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
এখানে ভোর বেলার আলো জাগে পাখিদের কলতানে

তাহমিদ হাসান

জনপদের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা শহরের অদূরে গড়ে ওঠা সাভার গণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেন প্রকৃতির আনিন্দ্য সুন্দর এক লীলাভূমি। প্রকৃতিতে শীতের ছোঁয়া লাগতে না লাগতেই গণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তার আশেপাশের জলভূমি মেতে উঠেছে অতিথি আপ্যায়নে। স্থানীয় ও অভিজ্ঞদের মতে আগামী কয়েক মাস এসব পাখির দেখা মিলবে এ অঞ্চলে।

এখানে ভোর বেলার আলো জাগে পাখিদের কলতানে, আর শীতের হালকা হিমেল হাওয়া বয়ে আনে প্রকৃতির এক নতুন রূপ। জলাশয়ের নীরব জলে ভেসে বেড়ায় রঙিন পাখিদের প্রতিচ্ছবি, আর বাতাসে মিশে থাকে তাদের ডানার ফাঁকে ভেসে আসা দূরন্ত সুর।

পাখির কলতানে ঘুম ভাঙে যেখানে

শীতের আগমনী বার্তায় যেন এই প্রাকৃতিক লীলাভূমি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সাইবেরিয়ার বরফ ঢাকা প্রান্তর কিংবা লাদাকের শীতল ভূমি পেরিয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসে এদেশে। তাদের সঙ্গে যেন প্রকৃতিও আনে নতুন এক সুর, নতুন এক আবেশ। জনপদের কোলাহল পেরিয়ে এই অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মেতে ওঠে পুরো অঞ্চল।

মূলত বর্ষার শেষে থেকে এই অঞ্চলে এসব পাখির আগমন শুরু হলেও শীতের প্রথম ভাগেই জমজমাটভাবে তাদের অবস্থান পাওয়া যায়। তবে মার্চ মাসের প্রায় শেষের দিকে ফিরে যায় এসব পরিযায়ীরা।

এই সময়টাতে বাংলাদেশের জলাশয়গুলোর পানি কমতে থাকে। ফলে খুব সহজেই পাখির পছন্দের খাবার শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ, পানির নিচে ভাসমান কচিপাতাসহ বেশ কিছু উপাদান তাদের খাবারের চাহিদা মেটায়। প্রায়শই গণস্বাস্থ্যের পিএইচের রাস্তার দু’ধারে জলাশয়ে দলবেধে থাকতে দেখা যায় পাখিদের।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বড় লেক থেকে ছোট জলাশয়ের ছুটে যায় এই পাখিগুলো। সন্ধ্যার পরপরই দল বেঁধে উঠে যায় পাশের গাছ কিংবা বাঁশ ঝাড়গুলোর মাথায়। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসাইবা ইসলাম বলেন, ‘শীতকালের অপররূপ সৌন্দর্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে এই পরিযায়ী পাখিরা। তবে শীত শেষে যখন তারা চলে যায় তখন এই লেক গুলা কেমন শূন্যতায় ভরে ওঠে।’

গণস্বাস্থ্যের অভ্যন্তরের আবাসগুলোতে থাকা কর্মচারীদের থেকে জানা যায়, পাখপাখালির কলতানেই ঘুম ভাঙে তাদের। সকালে ঝাকবেধে বিভিন্ন প্রজাতির নাম না জানা পাখি আসলেও হাঁস প্রজাতির পাখিগুলোই সারাদিন চোখে পড়ে। পানিতে ছোট বড় বিভিন্ন জাতের হাঁসের বাচ্চাও চোখে পড়ে।

পাখির কলতানে ঘুম ভাঙে যেখানে

তবে এই লেক জলাশয়গুলো সংরক্ষণ করার অভাবে পাখিদের আবাস বিপর্যয়ের মুখেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। শীতপ্রধান অঞ্চলে যখন প্রকৃতির বিরূপতায় পাখিদের খাবার বরফে ছেয়ে যায়। ঠিক তখনই খাদ্য সংকট থেকে বাঁচতে উপযোগী স্থান খুঁজতেই এঅঞ্চলে এসে স্বল্পকালীন আবাস গড়ে পাখিরা।

এ সম্পর্কে পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক মেসবাহ্-উস-সালেহীন জানান, ‘এক সময় আবহাওয়াগত কারণে লাখ লাখ পাখি এই ভূ-খণ্ডে আসতো ও তাদের বিচরণও তেমন লক্ষণীয় ছিল। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও এসব ব্যাপারে সুচিন্তা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে পাখিদের আবাসস্থল।’

‘বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে তাদের টিকে থাকা। এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা দেশীয় পাখিরাও। সামগ্রিক সচেতনতা ও পরিকল্পিত প্রকল্পই এসব জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে পারে।’

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।