মীর কাসেমের বিরুদ্ধে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধার ভাই সাক্ষী নয় কেন?
মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে জসিম উদ্দিন নামে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগের বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী হতে পারতেন তার আপন ভাই প্রফেসর ড. রাজিব হুমায়ুন। আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার পরে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে একই ধরনের কথা বলেছেন।
তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তার সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। কিন্তু তাকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়নি। আসলে মীর কাসেম আলী যদি তার ভাই হত্যায় জড়িত থাকতেন তাহলে তিনি এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসতেন। তাকে সাক্ষী না করায় এটা প্রমাণিত যে, মীর কাসেম আলী জসিম উদ্দিন হত্যার সঙ্গে জড়িত নন।
মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানিতে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সর্বশেষ যুক্তিতর্ক পেশ করার মধ্য দিয়ে মামলার সমাপ্ত করা হয়। পরে মামলাটি রায়ের জন্য আগামী ৮ মার্চ দিন ঠিক করেন।
এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাক্ষী ডালিম হোটেলে অপহরণ ও নির্যাতন বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা অ্যাডভোকেট শফিউল আলমের কাছে এ ঘটনা জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। অ্যাডভোকেট শফিউল আলম ‘সে সময় আনন্দ বেদনায়’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন তাকেও ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
কিন্তু তিনি তার বইয়ে কোথাও মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি। বলা হয়েছে, ভয়ে তিনি তার নাম এড়িয়ে গেছেন। অথচ অ্যাডভোকেট শফিউল আলমের বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৬ সালে। তখন বিএনপি ক্ষমতায়। তিনি তার বইয়ে বেগম খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান এবং এরশাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন।
মীর কাসেম আলী এমন কোনো শক্তিশালী ব্যক্তি তখন ছিলেন না যে, তার নাম তিনি ভয়ের কারণে এড়িয়ে গেছেন। মূলত তার বই থেকেও এটা প্রমাণিত যে, ডালিম হোটেলকেন্দ্রিক কোনো ঘটনার সঙ্গে মীর কাসেম আলীর কোনো সম্পর্ক নেই।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জসিম উদ্দিনের মামাতো বোন হাসিনা খাতুন ট্রাইবুনালে এসে তার হত্যা বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় জসিমসহ তার অনেক সহযোদ্ধা তার বাসায় আসতেন। জসিম মৃত্যৃর আগে তার কাছে পোলাও কোর্মা খাওয়ার বায়না করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি জসিমের সন্ধানে নামেন। জসিমের মৃত্যুর সংবাদে তিনি কান্নাকাটি করেছেন।
স্বাধীনতার পর হাসিনা খাতুন স্থানীয় ‘সাপ্তাহিক স্বীকৃতি’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেরায় স্বীকার করেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি অনেক লেখালেখি করেছেন। এমনকি কিলিং স্পট নামে তিনি লিখেছেন। অথচ তিনি স্বীকার করেছেন তিনি ডালিম হোটেল বা তার ফুফাতো ভাই জমিস উদ্দিন বিষয়ে কোনো লেখা লেখেননি। হাসিনা খাতুন তার এতো আদরের ভাই সম্পর্কে কিছুই লিখলেন না এটা আশ্চর্যের বিষয়।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মীর কাসেম আলী নভেম্বরের আগ পর্যন্ত পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে থাকলেন। অথচ তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও আনা হলো না তার চট্টগ্রামে অবস্থানের সময়কালে। এর রহস্য কী? ডালিম হোটেলও ৭ নভেম্বরের আগে ছিল। তখনো মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ডালিম হোটেলকেন্দ্রিক কোনো অভিযোগ নেই।
অপরদিকে চার্জে মীর কাসেম আলীকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘ইউ মীর কাসেম আলী প্রেসিডেন্ট অব ইসলামী ছাত্রসংঘ চিটাগং টাউন ইউনিট’ হিসেবে। অথচ যে সময়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে তখন তিনি ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। আর চট্টগ্রাম শহর শাখা সভাপতি তাহের নামে অন্য আরেকজনের নাম দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষেরই ডকুমেন্টে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দালাল আইনে ৩২ হাজার মামলা হলো। কিন্তু মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোথাও একটি মামলাও হলো না। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দা রিপোর্টে কোথাও মীর কাসেম আলীকে আলবদরও বলা হয়নি।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট কোনো এভিডেন্স নেই। সব শোনা সাক্ষীর ভিত্তিতে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। জসিম কবে কোথায় মারা গেছে তার সঠিক কোনো তথ্য প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে এ মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ খুবই দুর্বল। দুর্বল সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেয়া ঠিক নয়। হয় তার বিরুদ্ধে মামলা রিমান্ডে পাঠান না হয় তাকে খালাস দিন।
এফএইচ/বিএ