হাদিকে হত্যাচেষ্টা
‘আমি শুধু গাড়ি ভাড়া দিয়েছি, এর বাইরে কোনো অপরাধে জড়িত নই’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আদালতে রিমান্ড শুনানিতে নুরুজ্জামান নোমানী বলেন, ‘আমি শুধু গাড়ি ভাড়া দিয়েছি, এর বাইরে কোনো অপরাধে জড়িত নই’।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে নুরুজ্জামান নোমানীকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেফতারের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ নুরুজ্জামানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হাদিকে গুলি করার ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্টরা আত্মগোপনে চলে যান। তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, নুরুজ্জামান নোমানী ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদকে পালাতে সহায়তা করার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেন এবং এভাবে তার নিরাপদে সরে যাওয়ার পথ সহজ করে দেন।
আরও পড়ুন
ফয়সলকে পালাতে ‘সহায়তাকারী’ নুরুজ্জামান তিন দিনের রিমান্ডে
এদিন নুরুজ্জামান নোমানীর পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আদালত তাকে কিছু বলার সুযোগ দিলে তিনি জানান, অনলাইন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফয়সালের সঙ্গে তার পরিচয়। প্রায় নয় মাস আগে পরিচয় হলেও গত তিন মাস তাদের মধ্যে সরাসরি দেখা হয়নি।
নুরুজ্জামান নোমানী জানান, তিনি একজন গাড়িভাড়ার ব্যবসায়ী এবং ফয়সাল এর আগেও তার কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। গাড়ি নিয়ে তিনি সাটুরিয়া যেতেন এবং পরে আলাউদ্দিন পার্ক এলাকায় আসতেন। ঘটনার আগের বুধবারও ফয়সাল তার কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে সাটুরিয়ায় যান এবং সেখান থেকে আবার আলাউদ্দিন পার্কে ফিরে আসেন।
নুরুজ্জামান জানান, পরদিন শুক্রবার ফয়সাল আবার গাড়ি চাইলে তার সব গাড়ি তখন ট্রিপে থাকায় তিনি পরিচিত সুমন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। ফোনে ফয়সাল জানান, সদ্য বিয়ে করার কারণে পারিবারিক ঝামেলা চলছে এবং প্রথমে গাড়িটি মৎস্যভবনে পাঠাতে বলেন। পরে আবার ফোন করে গাড়ি আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার এলাকায় পাঠাতে অনুরোধ করেন।
বিচারক জানতে চান, ওই গাড়ির চালককে তিনি চেনেন কি না। জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, তিনি চালককে চেনেন এবং চালক বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।
শুনানি শেষে বিচারক নুরুজ্জামানের উদ্দেশে বলেন, রিমান্ড মানেই শাস্তি নয়। তদন্তে সহযোগিতা করলে তার বিষয়ে সত্যতা যাচাই করা সহজ হবে। এরপর আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, একটি মাইক্রোবাস সরবরাহের মাধ্যমে ফয়সালের পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এ মামলায় আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে পলাতক ফয়সাল করিম মাসুদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তিনি আদালতের কাছে রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন জানান।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে রোববার রাতে পল্টন থানায় মামলা করেন সংগঠনের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত ফয়সাল করিম মাসুদের মা-বাবা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে ফয়সালের সহযোগী কবিরের সাতদিনের, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে মোটরসাইকেল মালিক মো. আব্দুল হান্নানের তিনদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শরিফ ওসমান হাদি অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গঠন করে এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানার বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে হাদির মাথা ও ডান কানের নিচের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন।
এমডিএএ/ইএ/এমএস