ভোলায় বর্ষাকালে তরমুজ চাষে লাভের স্বপ্ন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ০৮:১০ এএম, ০৬ জুলাই ২০২৫
ভোলায় সর্জন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে, ছবি: জাগো নিউজ

বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ভোলায় ফসলের মাঠের চারদিকে এখন পানি থই থই করছে। এ অবস্থায় কৃষকেরা ঝুঁকেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে। তবে দুর্যোগের কথা মাথায় রেখেই ফসল রক্ষায় সর্জন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। যদিও এ পদ্ধতি আগে অল্প কয়েকজন কৃষক অনুসরণ করতেন। তাদের সফলতা দেখে এ বছর সব কৃষকই বর্ষাকালে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন।

ভোলা সদর, চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে তারা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ করেছেন। কেউ গাছ লাগিয়েছেন প্রায় এক মাস আগে। কারো গাছের বয়স প্রায় দেড় মাস। কিছুদিনের মধ্যেই তরমুজ ধরতে শুরু করবে। এ জন্যই ক্ষেত পরিচর্যা করছেন।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় এখন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন ২৫ জন। ওইসব উপজেলার কৃষকেরা বারি-১, বারি-২, ব্ল্যাক বেবি, ব্ল্যাক কিং, সুইট ড্রাগন ও ড্রাগন কিংসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন।

ভোলায় বর্ষাকালে তরমুজ চাষে লাভের স্বপ্ন

চরফ্যাশন পৌরসভার উত্তর মাদ্রাজ এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ জানান, তিনি কৃষকদের দেখাদেখি এ বছরই প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। ১ মাস আগে প্রায় ৩ শতাংশ জমিতে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় রাবি-১ ও রাবি-২ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন।

তিনি আরও জানান, যেহেতু বর্ষা মৌসুম, তাই তরমুজ চাষের জন্য সর্জন পদ্ধতিতে উঁচু বেড ও নালায় ভাগ করেছেন। ফলে ক্ষেতে পানি জমবে না। বৃষ্টির পানি সব নালায় চলে যাবে। এরপর উঁচু বেডে তরমুজের চারা লাগিয়েছেন। মাচা তৈরি করেছেন। ৭৫ দিনের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে গাছের বয়স প্রায় ১ মাস। কয়েকদিনের মধ্যেই তরমুজ ধরবে।

একই উপজেলার চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের মিয়া জাহানপুর এলাকার কৃষক মো. মনির হোসেন ও হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের চর ফকিরা গ্রামের মো. জসিম জানান, তিনি এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে সর্জন পদ্ধিতে মাচা তৈরি করে ইয়েলো গোল্ড ও ব্ল্যাক বেবি জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। গাছে ফুল ধরেছে। কিছুদিনের মধ্যেই ফল ধরবে।

আরও পড়ুন

মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর প্রায় দেড়শ শতাংশ জমিতে ব্ল্যাক বেবি, ব্ল্যাক কিং, ইয়েলো গোল্ডসহ কয়েকটি জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদ করেছেন। গত ৩ বছর ধরে তিনি গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করছেন। আগে জমিতে মাচা তৈরি করলেও এ বছর সর্জন পদ্ধতিতে আবাদ করেছেন। গত বছর প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করেছেন। এ বছর দেড় লাখ টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন।

লালমোহন উপজেলার ধলীগৌনগর ইউনিয়নের মঙ্গল শিকদার গ্রামের কৃষক জসিম মিয়া জানান, তিনি গত বছর থেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করছেন। গত বছর ক্ষেত অতিবর্ষায় কিছুটা নষ্ট হওয়ায় তেমন সফলতা পাননি। এ বছর অতিবৃষ্টিতে যাতে ক্ষেত নষ্ট না হয়, এ জন্য সর্জন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এ তরমুজ যখন বাজারে বিক্রি হয়; তখন বাজারে ফল তেমন থাকে না। তাই এর চাহিদা বেশি এবং দামও বেশি।

ভোলায় বর্ষাকালে তরমুজ চাষে লাভের স্বপ্ন

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ভোলার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হাসান অনিক জানান, গ্রীষ্মকালীন বা অমৌসুমের তরমুজ লাভজনক ফসল। এটি বর্ষা মৌসুমের যে সময়টায় বিক্রি করা হয়; সে সময়টায় ফলের তেমন সমারোহ থাকে না। তাই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ মানুষ গ্রহণ করে। অমৌসুমের তরমুজের চারা রোপণের ৭৫ দিনের মধ্যেই ফল বিক্রি করতে পারেন।

তিনি জানান, প্রতি বছরই কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন বা অমৌসুমের তরমুজ চাষের জন্য প্রদর্শনী দেওয়া হয়। প্রদর্শনী পেয়ে কৃষকেরা সফল হলে পরের বছর বেশি জমিতে আবাদ করেন। এ তরমুজ চাষে কৃষকদের সব সময়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য সর্জন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। কৃষকদের এ পদ্ধতিতে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘আগে ভোলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ খুবই কম হতো। কৃষকেরা এতে আগ্রহী হতেন না। এখন অন্যদের সফলতা দেখে দিন দিন কৃষক সংখ্যা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় প্রায় ১৫ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কৃষকদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা, পরামর্শ ও প্রদর্শনী দিয়ে আসছি। এ ছাড়া কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন বা অমৌসুমের তরমুজ চাষ করে সফল হচ্ছেন। তারা বেশ লাভবানও হচ্ছেন। আমি আশা করছি আগামীতে ভোলায় এ তরমুজের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।’

জুয়েল সাহা বিকাশ/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।