কদর বাড়ছে ঝালকাঠির বিলাতি গাবের

মো. আতিকুর রহমান মো. আতিকুর রহমান ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৫
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাব পাঠানোর জন্য প্যাকেটজাত করা হচ্ছে, ছবি: জাগো নিউজ

ঝালকাঠির বিলাতি গাব ঐতিহ্যবাহী ফল, যা সাধারণত ‘গাব’ নামেই পরিচিত। স্থানীয়ভাবে বেশ কদর আছে। দেখতে অনেকটা আপেলের মতো। ত্বক হালকা বাদামি ও লোমশ। মাংসল অংশ হালকা ক্রিম রঙের। খেতে বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। গ্রামাঞ্চলে অযত্নে বেড়ে ওঠে। ফলটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে, যা গর্ভবতীর জন্য উপকারী। আষাঢ় মাসের শেষদিকে পাকে।

জানা যায়, গাব গাছের বয়স ৫ বছর হলেই ৩০০ গ্রাম ওজনের লাল রঙের ফল দেখা যায়। সুস্বাদু ফলটি পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রামাঞ্চল থেকে মাইকিং করে সংগ্রহ করছেন পাইকাররা। ২০টি বিলাতি গাব আকারভেদে ৮০-১০০ টাকায় কেনেন তারা। প্রতিদিন যাত্রীবাহী পরিবহনে করে পৌঁছে দেন বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট শহরে পাঠানো হয়।

রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া ক্লাব এলাকায় মোকাম তৈরি করেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি গ্রাম থেকে গাব সংগ্রহ করে পাইকার খলিল হাওলাদারের কাছে বিক্রি করেন। তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন সহযোগিতা করেন। তারা সবাই এ মৌসুমে বিলাতি গাব সংগ্রহ করে প্যাকেট করতে সহযোগিতা করেন।

ব্যবসায়ী খলিল হাওলাদার জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাইকিং করে গাব সংগ্রহ করা হয়। গাবের আকারভেদে প্রতি পিস ৪-৫ টাকা করে দেওয়া হয়। এরপর মোকামে এনে পাশের পুকুরে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এতে গাবের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এরপর প্লাস্টিকের ক্যারেটের মধ্যে কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে গাব রাখা হয়।

কদর বাড়ছে ঝালকাঠির বিলাতি গাবের

তিনি জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটসহ দেশের বড় শহরে যাত্রীবাহী পরিবহনে করে আড়তদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা কেজি হিসেবে বিক্রি করে পাওনা টাকা পাঠিয়ে দেন। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে এ ব্যবসা চলে। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে অন্য ব্যবসা একই নিয়মে করা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, পাকা গাবের মৌসুম আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস। এ সময় জেলার বিভিন্ন বাজারে পাকা গাবের ঘ্রাণে মন মাতোয়ারা হয়ে যায়। ঝালকাঠির বড় বাজার, চাঁদকাঠি বাজার, কলেজ মোড়, কাঠপট্টি, রাজাপুরের বাগড়ি বাজার, সদরের বাজার, পুটিয়াখালী, লেবুবুনিয়া বাজার, পাকাপুল বাজার, গালুয়া বাজার, নলবুনিয়া বাজার, ফকিরের হাট, চাড়াখালির হাট, বাদুরতলা হাট, কাচারি বাড়ির হাট, বলারজোর হাট, গাজির হাট, পাড়ের হাট, বাইপাস মোড় বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং বাড়ি বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা গাব পাইকারি হিসেবে কিনে দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করছেন।

কিস্তাকাঠি গ্রামের মজিদ, আলতাফ ও সুলতান জানান, বিলাতি গাব গাছের জন্য বীজ বপন, চারা রোপণ বা কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। গাব গাছ থেকে ফল নিচে পড়ে, পাখির খাবারের জোগানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়। বিলাতি গাব সুস্বাদু এবং কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও অনেক। বর্তমানে অতিথি আপ্যায়নেও শোভা পাচ্ছে এ ফল। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত এ গাব সবাই পছন্দ করেন।

রাজাপুরের গালুয়া বাজারের পাইকারি গাব ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, পাকাপুল বাজারের হারুন সরদার জানান, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে ১ কুড়ি (২০টি) পাকা গাব আকার অনুযায়ী ৮০-১০০ টাকায় কেনা যায়। পরে ১০০টি গাব আড়তে পাইকারি বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকা। শহরের আড়তদাররা প্রতিটি গাব ভোক্তাদের কাছে ১০-১২ টাকা হারে বিক্রি করেন।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। তাই সব ফলের পাশাপাশি গাবেরও ফলন বেশি। তাছাড়া প্রতি বছরই এ অঞ্চলে গাবের বাম্পার ফলন হচ্ছে। এ গাব স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ হচ্ছে।’

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘গাব ফরমালিন ও ভেজালমুক্ত একটি দেশীয় ফল। এটি যেমন মজাদার ঠিক তেমনই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।’

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।