ঈশ্বরদীতে শরিফা ফল চাষ করে সফল বাদশা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাদশা ৩৩ বিঘা জমিতে এ ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন, ছবি: জাগো নিউজ

পাবনার ঈশ্বরদীতে শরিফা বা মেওয়া ফলের বাণিজ্যিক চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক শাহজাহান আলী বাদশা। তিনি ৩৩ বিঘা জমিতে এ ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানের শরিফা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই সফলতায় এলাকার তরুণ চাষিরা শরিফা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শরিফা। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি হয়।

জানা যায়, ২২ বছর আগে উপজেলার বক্তারপুর গ্রামে মা-মনি কৃষি খামারের মালিক ও জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক শাহজাহান আলী বাদশা বাণিজ্যিকভাবে শরিফা বাগান গড়ে তোলেন। ২০১২ সাল হতে তিনি এ বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে শরিফা সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু করেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অনেকেই শরিফা ফল নামে চিনলেও পর্তুগিজ ভাষায় একে ‘আতা’ বলা হয়। পর্তুগিজরাই ফলটিকে এ দেশে নিয়ে আসেন। গাছের উচ্চতা প্রায় ৮-১০ মিটার। প্রতিটি ফলের ওজন ১০০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। শাঁসের রং সাদা ও ক্রিম ধরনের। মিষ্টি ও সুস্বাদু। চিনির মতো মিহি দানা থাকে।

ঈশ্বরদীতে শরিফা ফল চাষ করে সফল বাদশা

পানি জমে না এমন উঁচু স্থানে, বাড়ির খোলা জায়গায়, বাসার ছাদে এবং অল্প ছায়াযুক্ত স্থানেও শরিফা গাছ লাগানো যায়। তবে বেলে-দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। বৈশাখ মাসে ফুল আসে। ভাদ্র মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছের চারা লাগানো, যত্ন-পরিচর্যা, সার-কীটনাশক সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়।

শাহজাহান আলী বাদশার শরিফা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় শরিফা ধরে আছে। বিশাল এ বাগান থেকে শরিফা সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে বাছাই ও প্যাকেটজাত করার পাশাপাশি কিছু শ্রমিক বাগান পরিচর্যার কাজ করছেন। শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এখন বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করেন। এরপর প্যাকেট করে ঢাকায় পাঠাবেন।

আরও পড়ুন

পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত শামীম হোসেন জানান, শরিফা বাগানে রোগবালাইয়ের মধ্যে মিলিব্যাগ নামক ছোট ছোট পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তবে প্রতিষেধক স্প্রে করে তা দমন করা যায়। পাকা শরিফা ফল খেতে আসে পাখিরা। এ জন্য পাকা ফল দ্রুত তোলা হয়।

ঈশ্বরদীতে শরিফা ফল চাষ করে সফল বাদশা

শাহজাহান আলী বাদশা বলেন, ‘আমার পেশা ও নেশা কৃষি। আমার বিভিন্ন বাগান ও খামারে ৫৩ ধরনের ফল-ফসলের আবাদ করি। এখন ফল চাষের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এ ছাড়া করোনার সময়ে দুই বছর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। সেজন্য কৃষকদের চিন্তা-ভাবনা করে ফসল উৎপাদন করা উচিত।’

শরিফা ফলের চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লাভজনক ফল-ফসল আবাদ করতে হবে। অপ্রচলিত এবং বাজারে নিলে ভালো দাম পাওয়া যায় এমন ফল বেশি চাষ করতে হবে। সেজন্য বেছে নিয়েছি শরিফা। প্রতি বছর বাগানে ফলন হয়। বাজারমূল্য সব সময় ভালো থাকে। এখন বাগানে যা আছে; সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি ৩০০ টাকার বেশি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।’

ঈশ্বরদীতে শরিফা ফল চাষ করে সফল বাদশা

তিনি আরও বলেন, ‘একটু নিম্নমানেরগুলো ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতিটি গাছে দুই মণ, দেড় মণ, একমণ আবার কোনো গাছে ১০ কেজি হয়। গড়ে আমরা প্রতি গাছে ১ মণ ফলন হিসেব করি। আমাদের দেশে সচরাচর যেসব ফল দেখি; এসব ফলের চেয়ে শরিফা চাষ তিন থেকে চারগুণ বেশি লাভজনক।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষক শাহজাহান আলী বাদশা ৩৩ বিঘা জমিতে শরিফা ফল চাষ করেছেন। এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ ফল বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। কৃষক বাদশার বাগানে শরিফা ফলের হারভেস্ট শুরু হয়েছে। ফলের দামও ভালো পাচ্ছেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও শরিফা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’

শেখ মহসীন/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।